গেল গেল রব নয়, অনেক প্রত্যাশা তারুণ্যের কাছে

অতীতে যা ছিল সব ভাল ছিল, আর দিনদিন সব খারাপ হয়ে যাচ্ছে, কথাটা ইদানীং খুব শোনা যায়। ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠা আর আশংকা! এই ব্যাপারটা চিরন্তনী। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই রকম ভাবতেই মানুষ অভ্যস্ত।

Advertisement

সন্তোষরঞ্জন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৪
Share:

অতীতে যা ছিল সব ভাল ছিল, আর দিনদিন সব খারাপ হয়ে যাচ্ছে, কথাটা ইদানীং খুব শোনা যায়। ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠা আর আশংকা! এই ব্যাপারটা চিরন্তনী। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই রকম ভাবতেই মানুষ অভ্যস্ত। বাবারা যখন তরুণ ছিলেন ঠাকুর্দারা তখন একই রকম শঙ্কিত হতেন। বর্তমানে যাঁরা তরুণ তারাও প্রৌঢ় হয়ে একই রকম ভাববেন। এটাই স্বাভাবিক। এ বারে যদি ভাবা যায়, অতীতে যা ছিল তাই ফিরিয়ে আনা হোক, তাহলে হাঁটতে হবে পিছন দিকে। এ মস্ত সমস্যা। সভ্যতা, সংস্কৃতি পিছনে হাঁটলে মহাপ্রমাদ।

Advertisement

বিষয়টা বড়ই গোলমেলে এবং জটিল। এই রকমই একটা হাল্কা ভাবনা মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরলাম সেদিন। গিয়েছিলাম শিলচরের রাজীব ওপেন ইনস্টিটিউট-এর একটি অনুষ্ঠানে। কন্যাসমা সোমাভা বিশ্বাস-এর লেখা ‘খেয়ালী খাতা’র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ।

এমন অনুষ্ঠান আমাদের এই শহরে আজকাল প্রায়ই হয়। এরকম অনুষ্ঠানের কার্যসূচিও অলিখিত ভাবে একটা স্বীকৃত প্রথা হয়ে গিয়েছে। কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মঞ্চে শোভা পাবেন, কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলবেন। সুরেলা কোনও তরুণী সঞ্চালনা করবেন। একটা-দুটো গান-নাচ হবে। লেখক বা লেখিকা তাঁর কথাগুলো যথেষ্ট বিনয়ে গুছিয়ে বলবেন। এই অনুষ্ঠানেও সুন্দর নাচ-গান-কথা সবই ছিল। নতুন বিষয় ছিল, তরুণ প্রজন্মের চারজনকে নিয়ে সঞ্জীব দেবলস্করের আলাপচারিতা। চার তরুণের মধ্যে শাশ্বত দেবলস্কর আইনের স্নাতক হয়ে সদ্য আইনজীবী। মনস্বী চক্রবর্তী গুরুচরণ কলেজে স্নাতকস্তরে বিজ্ঞানের ছাত্র। অভিরাজ পাল শিলচর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র। আর রাজেশ্বরী দে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পাঠরতা।

Advertisement

সঞ্জীবের পরিচালনায় চার জন বসে স্বল্প সময়ের একটা আলোচনা করলেন। অবাক আগ্রহে শুনলাম, সদ্য বড় হওয়া তরুণরা কী ভাবে নিজেদের কথা বলে গেলেন। মাঝে মাঝে সঞ্জীব দর্শকাসন থেকে দু-একজনকে ডেকে আরও বৈচিত্র্য আনলেন। তরুণদের প্রায় প্রত্যেকে তাদের ছোটবেলাতেই পড়ার অভ্যাসের কথা বলতে গিয়ে মা, বাবা, ঠাকুমা, দিদিমাদের কথা উল্লেখ করল। শিশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকার গুরুত্ব সবাই লক্ষ্য করলেন। বাড়িতে পড়াশোনা-গানবাজনা সংস্কৃতিচর্চার কথা শাশ্বতের মতো সবাই বলল। আর অনুষ্ঠানের মুখ্য চরিত্র সোমাভা যখন নিজের অনুভূতি আর মনোজগতের কথা বলছিল তখন আমি বিস্ময়ে দেখছিলাম, মেয়েটি বড় হয়ে গিয়েছে। আমার একটা সুখানুভূতি হল। লক্ষ্য করলাম, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্যও তাঁর স্বভাবসুলভ উচ্চতা থেকে দিব্যি ছোটদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন।

আরও একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় ছিল, এই তরুণরা জীবিকা বা কেরিয়ারের ব্যাপারেও উদাসীন নন। কেউ ডাক্তার হবেন, কেউ ম্যানেজমেন্টকে কেরিয়ার করবেন। কিন্তু তার বাইরেও যে সাহিত্য-সংস্কৃতির ভুবনটা রয়েছে, সেটার আকর্ষণ তাঁদের উপর কাজ করছে। মনে পড়ল জর্জ বার্নার্ড শ’য়ের দুর্ধর্ষ সেই উক্তি, ‘যে কোনও ব্যক্তি অজস্র ডিগ্রি মেডেলের অধিকারী হয়েও যদি সাহিত্য-সঙ্গীত-কলা বিহীন হন, তাহলে তিনি ইগনোরেমাস।’

এই জায়গা থেকেই নতুন প্রজন্ম ট্রাডিশন সচেতন হয় এবং টিএস এলিয়টের যুক্তি অনুসারে এতে সংযোজিত হয় ব্যক্তিগত মেধা। অতীতের কাছ থেকে আলোকবর্তিকা নিয়ে বর্তমানের মানসলোক নিজস্ব পরিমণ্ডলে জ্ঞানচর্চার ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনটা না হলেই বিপর্যয়।

অতএব গেল-গেল রব তোলার কিছু নেই। এই ইন্টারনেট, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ প্রজন্মের কাছ থেকেও অনেক প্রত্যাশা আমাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন