ঘূর্ণি পিচে মাটি কামড়ে লড়াই শর্মিষ্ঠার

একে তো টিম দুর্বল। তা-ও ঘূর্ণি পিচ। এমন মাঠে কেউ রাজনীতির ইনিংস শুরু করে! কিন্তু শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় সেটাই করেছেন। মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন কঠিন বাইশ গজে। হয়তো এই সাহস ও প্রত্যয়টাই তাঁর পুঁজি। কঠিন পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি নিতে জানেন। যদিও মুখে সে সব নিয়ে কোনও কথাই নেই। প্রচারে গিয়ে এ-ও বলছেন না, ‘আমি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে।’ শুধু হেসে বলছেন, “সুবিধে-অসুবিধেয় আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

ভোট প্রচারে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

একে তো টিম দুর্বল। তা-ও ঘূর্ণি পিচ। এমন মাঠে কেউ রাজনীতির ইনিংস শুরু করে! কিন্তু শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় সেটাই করেছেন। মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন কঠিন বাইশ গজে।

Advertisement

হয়তো এই সাহস ও প্রত্যয়টাই তাঁর পুঁজি। কঠিন পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি নিতে জানেন। যদিও মুখে সে সব নিয়ে কোনও কথাই নেই। প্রচারে গিয়ে এ-ও বলছেন না, ‘আমি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে।’ শুধু হেসে বলছেন, “সুবিধে-অসুবিধেয় আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এক বার দেখুন না ভোটটা দিয়ে!” যেমন খিড়কি গ্রামে গিয়ে আজ বললেন, “আশীর্বাদ দিন। বিধায়ক হলে সবার আগে খিড়কি গাঁওয়ের নালা সাফ করাব। কথা দিলাম!”

দিল্লির ভোটে গ্রেটার কৈলাস আসনে প্রার্থী হয়েছেন প্রণব-কন্যা। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতারা বাদেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ এক ঝাঁক রাজ্যের নেতা-কর্মী দিন-রাত প্রচার করছেন তাঁর জন্য। গ্রেটার কৈলাসেই বড় হয়েছেন শর্মিষ্ঠা। সেখানকার মানুষের জন্য কাজ করেই রাজনীতিতে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাইছেন। তা সত্ত্বেও ইনিংস শুরুর পক্ষে গ্রেটার কৈলাস আদৌ নিরাপদ পিচ কি না, সেই প্রশ্ন ছিল দলে। কারণটা আর কিছুই নয়, গত বিধানসভা ভোটে এখানেই আম আদমি পার্টি পেয়েছিল ৪৫ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ২০ শতাংশ। তারও আগে, শীলা দীক্ষিতের জমানাতেও কংগ্রেস গ্রেটার কৈলাসে ১২ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল কংগ্রেস। প্রসঙ্গটা উঠতেই শর্মিষ্ঠা সাংবাদিকদের স্পষ্ট বলছেন, “একটা ভোটের সঙ্গে অন্য ভোটের তুলনা চলে না! প্রতিটি ভোট আলাদা ও অনন্য।” মুখোপাধ্যায় পরিবারের দেওয়ালে কান পাতলে শোনা যায়, বাবা বলেছিলেন মেয়েকে, “এখনও ভেবে দেখ!” জবাবে প্রতি বার মেয়ে বলেছেন, “তোমার থেকেই ঝুঁকি নিতে শিখেছি। এর আগে জঙ্গিপুরেই বা কংগ্রেস কবে জিতেছিল!”

Advertisement

জীবনের প্রথম ইনিংসে স্টান্স নেওয়া ইস্তক সেই জেদটাই ধরে রেখেছেন শর্মিষ্ঠা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে প্রণববাবু এখন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। কিন্তু রাইসিনা পাহাড়ে বসেও খবর পাচ্ছেন, তাঁর আদরের ‘মুন্নি’ কী ভাবে উদয়াস্ত প্রচার করছেন। আসলে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার অন্তত ৬ মাস আগে থেকেই জনসংযোগ অভিযানে নেমে পড়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। সেই পরিশ্রমের ছাপ এখন তাঁর চোখেমুখেই প্রকট। এই দুপুরে খিড়কি গ্রামে সভা, তো এই সন্ধেয় খানপুর জাঠ এলাকায় ফের সভা। পায়ে হেঁটে প্রায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার। আগামিকাল ফের সভা স্বামীনগর, কালকাজি, সন্তনগরে। সবই ছোট ছোট সভা। ক্রিকেটের ভাষায়, বড় শটে না গিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখতে কৌশলী সিঙ্গলস। প্রণব-কন্যার প্রচারের এই কৌশলকে বাহবা দিচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। অনেক এআইসিসি সদস্যও মানছেন, দিল্লিতে কোথাও যদি সুপরিকল্পিত প্রচার হয়ে থাকে, তা হল গ্রেটার কৈলাস।

শর্মিষ্ঠার জন্য সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো পশ্চিমবঙ্গের পোড়খাওয়া নেতারা বাঙালি এলাকায় প্রায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বৈঠকী মেজাজে প্রচার করছেন। পশ্চিমবঙ্গের যুব কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দশ জনের একটি টিম-ও প্রচারে নেমেছে। তাঁরা কখনও ভোর পাঁচটায় উঠে প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনো জনতার সঙ্গে কথা বলছেন, কখনও বাড়ি বয়ে প্রচারপত্র দিয়ে আসছেন। জাঠ অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার করছেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং সে রাজ্যের বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কিরণ চৌধুরি। রাজপুত অধ্যুষিত এলাকায় প্রচারে নেমেছেন হিমাচলপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ। রাজস্থানি মহল্লায় প্রচারে যাচ্ছেন সে রাজ্যের নেতারা। এমনকী দিল্লি কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও রাশ টেনে প্রচারে সকলকে সামিল করেছেন শর্মিষ্ঠা। আজও তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। দিল্লির ভোটে কার্যত কংগ্রেসের ‘মুখ’ অজয় মাকেনের বিরোধী শিবিরের নেত্রী হিসেবেই যিনি পরিচিত।

দু’একটা হঠাৎ নিচু হওয়া বল অবশ্য সামলাতে হচ্ছে শমির্ষ্ঠাদের। যেমন, আপ প্রার্থী তথা বর্তমান বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। দু’দিন আগে চিরাগ দিল্লিতে শর্মিষ্ঠার মঞ্চের পাশে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌরভ। হঠাৎ মঞ্চে উঠে মাইক প্রায় হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চকিতে মাইক কেড়ে নেন দিল্লির অভিজ্ঞ কংগ্রেস নেতা নরেশ কুমার। বলেন, “শর্মিষ্ঠা ‘ভরদ্বাজ’ ব্রাহ্মণ। সৌরভ ভরদ্বাজ এসে গিয়েছেন তাঁর বোনকে আশীর্বাদ করতে। তালি বাজান!”

সৌরভকে সে দিন মোক্ষম রুখে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু ভোটেও সেই সাফল্য আসবে কি? নরেশের জবাব, “জানি ঘূর্ণি পিচ। কিন্তু শর্মিষ্ঠা সোজা ব্যাটে খেলছেন। একেই বলে প্রত্যয়ী ব্যাটিং!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন