চাপের মুখে ইস্তফায় নারাজ কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ রাজ্যপালরা

পরোক্ষ চাপ দিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছিল মোদী সরকার। কিন্তু পঞ্জাবের রাজ্যপাল শিবরাজ পাটিল ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল কে শঙ্করনারায়ণ আজ স্পষ্ট বলে দিলেন, যতই চাপ আসুক, তাঁরা ইস্তফা দিচ্ছেন না। কেরলের রাজ্যপাল শীলা দীক্ষিত গত কাল বলেছিলেন, গুজবের ভিত্তিতে মন্তব্য করবেন না। আজও উচ্চবাচ্য করেননি। সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে, মোদী সরকারের কৌশল বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘনিষ্ঠ রাজ্যপালদের একাংশকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্র চাপ দিলেও তাঁরা যাতে ইস্তফা না দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

পরোক্ষ চাপ দিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছিল মোদী সরকার। কিন্তু পঞ্জাবের রাজ্যপাল শিবরাজ পাটিল ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল কে শঙ্করনারায়ণ আজ স্পষ্ট বলে দিলেন, যতই চাপ আসুক, তাঁরা ইস্তফা দিচ্ছেন না।

Advertisement

কেরলের রাজ্যপাল শীলা দীক্ষিত গত কাল বলেছিলেন, গুজবের ভিত্তিতে মন্তব্য করবেন না। আজও উচ্চবাচ্য করেননি।

সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে, মোদী সরকারের কৌশল বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘনিষ্ঠ রাজ্যপালদের একাংশকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্র চাপ দিলেও তাঁরা যাতে ইস্তফা না দেন।

Advertisement

মোদী সরকার অবশ্য সরাসরি পদত্যাগ করতে বলেনি কোনও রাজ্যপালকেই। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামীকে দিয়ে বেশ কয়েক জন রাজ্যপালকে ফোন করানো হয়েছিল। রাজ্যপালেরা ইস্তফার কথা ভাবছেন কি না, সেটাই গোস্বামী জানতে চেয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নিজেও গত কাল বলেছিলেন, “আমি যদি তাঁদের (রাজ্যপাল) অবস্থায় থাকতাম, তা হলে নিজেই পদত্যাগ করতাম।”

গোস্বামীর ফোনে সাড়া যে একেবারে মেলেনি, তা-ও নয়। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল জোশী পদত্যাগ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও সেই পথে হাঁটতে চলেছেন বলেই ইঙ্গিত। কিন্তু সব পাখি যে এক ঢিলে মরবে না, সেটা আজ শিবরাজ-শঙ্করনারায়ণদের কথায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শঙ্করনারায়ণ বলেছেন, “দু’বার স্বরাষ্ট্রসচিবের ফোন এসেছিল। কিন্তু মুখে বললে হবে না, সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপালকে সরাতে হলে লিখিত আকারে জানাক কেন্দ্র।”

এইখানেই যত মুশকিল। ইউপিএ জমানায় বিজেপি সাংসদ বি পি সিঙ্ঘলই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, আগের এনডিএ জমানার রাজ্যপালদের সরিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে। শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল নির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে রাজ্যপালদের সরানো যাবে না। মোদী সরকার যখন কোনও কোনও রাজ্যপালকে সরানোর কথা ভাবছে, তখন কংগ্রেস নেতৃত্ব সেই রায় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাদের।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, মাত্র সাত জন রাজ্যপালের কাছেই ফোন গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল-সহ এই তালিকায় আছেন কেরলের রাজ্যপাল শীলা দীক্ষিত, রাজস্থানের মার্গারেট আলভা, গুজরাতের কমলা বেনিওয়াল, ত্রিপুরার দেবানন্দ কানওয়ার, মহারাষ্ট্রের এম কে শঙ্করনারায়ণ এবং উত্তরপ্রদেশের বি এল জোশী (যিনি ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতে, এই রাজ্যপালদের অনেকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রাষ্ট্রপতিকেও এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কিন্তু হাইকমান্ডের বার্তা পেয়ে কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ রাজ্যপালেরা যে ভাবে বেঁকে বসেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে, তাতে বিজেপি কিছুটা ফাঁপরে পড়েছে। কারণ এর ফলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়ছে। এখন যদি রাজ্যপালরা ইস্তফা দিতে না চান, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যথাযথ কারণ ছাড়া তাঁদের সরানোও যাবে না। বড়জোর অন্য কোনও রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এই অবস্থায় নরেন্দ্র মোদী ও অরুণ জেটলিরা আমলাতন্ত্রে বড়সড় রদবদল না করার যে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেটি অনেক বাস্তবসম্মত ছিল বলেই মনে করছেন দলের অনেক নেতা। এখন প্রশ্ন হল, প্রথমে রদবদলের কথা না বলেও কেন মোদী-জেটলিরা অবস্থান বদলাচ্ছেন? সরকারি সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, সরকারের নেতৃত্ব যদি শক্তিশালী হয়, তা হলে পুরনো আমলাকে দিয়েও ভাল কাজ করানো যায়। যে কারণে প্রায় এক মাস হতে চললেও শীর্ষ স্তরে আমলাদের মধ্যে তেমন বড়সড় পরিবর্তন করা হয়নি। বদলানো হয়নি স্বরাষ্ট্রসচিব, বিদেশসচিবকে। অর্থাৎ শুধু ইউপিএ জমানায় নিযুক্ত বলেই যে কাউকে সরাতে হবে, এই নীতিতে মোদী বিশ্বাসী নন।

কিন্তু তার মানে এটাও নয় যে, প্রয়োজন বুঝলে বদল আনা হবে না। সেই দৃষ্টান্তও ইতিমধ্যেই রেখেছেন মোদী। ইউপিএ জমানায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন শত্রুঘ্ন সিংহ। তাঁর বিরুদ্ধে ইউপিএ আমলেই অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগ উঠেছিল। মোদী তাঁকে সরিয়ে রাজীবনয়ন চৌবেকে এনেছিলেন। আজ আবার চৌবেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রয়োজনমাফিক রদবদলে মোদী একেবারেই পিছপা নন। রাজ্যপালদের ক্ষেত্রেও সেই একই যুক্তি প্রয়োগ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে বিজেপি নেতারা বলছেন, রাজ্যপালদের সরানোর পিছনে আরও একটি বড় কারণ রয়েছে। সেটি হল, দলের নিচুতলা থেকে চাপ। কংগ্রেস আমলে যেমন তাঁদের ঘনিষ্ঠ নেতা ও আমলাদের রাজ্যপাল করা হয়েছে, তেমনই বিজেপির মধ্যেও এমন অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁদের মন্ত্রী করা যায়নি। যশবন্ত সিন্হা, লালজি টন্ডন, বিজয়কুমার মলহোত্র, কল্যাণ সিংহ, কৈলাস জোশী, রাম নাইকের মতো অনেক প্রবীণ নেতা রয়েছেন বিজেপিতে, যাঁরা নির্বাচনে লড়েননি। ভোটের আগে তাঁদের রাজ্যপাল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান রাজ্যপালরা যদি তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করেন, তা হলে আগামী বছরের মধ্যে প্রায় এক ডজন রাজ্যপালের পদ খালি হবে। কিন্তু তার আগেই এই নেতাদের সেই পদে বসানোর চাপ রয়েছে দলের নেতৃত্বের একাংশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন