দলের নেতাদের বেফাঁস মন্তব্যে লাগাম টানতে তৎপর স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের একাংশ যে এত সহজে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাব বদলাতে রাজি নয়, তা রবিবার ফের স্পষ্ট হল। উত্তরপ্রদেশের এক সভায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেত্রী সাধ্বী প্রাচী বললেন, “আমি তো চার সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা বলেছিলাম, ৪০টি কুকুরছানা জন্ম দেওয়ার কথা তো বলিনি।” ভারতের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে প্রত্যেক হিন্দু মহিলার অন্তত চার সন্তানের জন্ম দেওয়া উচিত বলে সম্প্রতি বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশ বিজেপির প্রধান লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ী অবশ্য বলেছেন, “এ ধরনের মন্তব্য মোটেও সঙ্গত নয়। সুশাসন ছাড়া বিজেপি অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে চায় না।” একই সুরে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-ও।
ঘটনাচক্রে গত কালই মহীশূরের এক সভায় সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, বৈচিত্রের বিরোধিতা করা উচিত নয়। বরং তা মেনে নিয়ে সহাবস্থানের পথ খোঁজা উচিত। ঠিক সে দিনই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে এক সভায় প্রাচী বলেন, “লাভ জিহাদের নামে আমাদের মেয়েদের ফাঁসানো হচ্ছে...তার পর এরাই ৩৫-৪০ জনের জন্ম দিচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, পরিবার পরিকল্পনার দায় কেন শুধু হিন্দুদের উপরই বর্তাবে?
বদায়ূঁর যে অনুষ্ঠানে প্রাচী এই মন্তব্য করেছেন, সেখানে বহু-সন্তানের অভিভাবকদের সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল। যার আয়োজক ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকে দলের নেতাদের ঠিক এ ধরনের মন্তব্য করতেই বারণ করেছিলেন মোদী। বোঝাতে চেয়েছিলেন সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি ও মন্তব্যের জেরে বিরোধীরা সমালোচনার সুযোগ পাচ্ছে। তাতে সরকারের উন্নয়নমুখী মুখ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সফরে এসে একই ভাবে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা বলে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। গত কাল ভাগবতের কথা শুনে ধারণা তৈরি হচ্ছিল, হয়তো সুর বদলাতে পারে সঙ্ঘ পরিবার। কিন্তু সাধ্বী প্রাচীর মন্তব্যের পর অনেকেরই প্রশ্ন, আদৌ কি কখনও নিজের অবস্থান বদলাবেন তাঁরা? নাকি কখনও নরম আবার কখনও গরম কৌশলই অনুসরণ করে যাবেন?