ছুটির কথা ভুলে যান। দু’মাসের মধ্যে জমা দিন নিজেদের সমস্ত সম্পত্তির খতিয়ান। মন্ত্রীদের নয়া নির্দেশ নরেন্দ্র মোদীর।
প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই মোদী স্পষ্ট করেন, স্বচ্ছ ও দক্ষ সরকারের যে কথা তিনি ভোটের আগে দিয়েছিলেন, তা এ বার তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান। পরিবারের কাউকে ব্যক্তিগত সচিব না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন দায়িত্ব নেওয়ার দু’দিনের মাথায়। এ বার নতুন দাওয়াই। মোদীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা সব মন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তাতেই রয়েছে সম্পত্তির হিসেব জমা দেওয়ার কথা। শুধু নিজেদের নয়, পরিবারের প্রত্যেকের নামে যা যা সম্পত্তি রয়েছে, এমনকী গয়না-শেয়ারও যা আছে, তার খতিয়ান মন্ত্রীদের জমা দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের মতে, মোদী মনে করেন মানুষের কাজ করার জন্য পাঁচ বছর যথেষ্ট নয়। তাই মন্ত্রীদের কথায় কথায় আগের মতো ছুটিতে যাওয়া চলবে না। সূত্রের বক্তব্য, আগে গরম পড়লেই অনেক মন্ত্রী ছুটি নিয়ে বা সরকারি সফরের মোড়কে বিদেশে যেতেন, সেই সংস্কৃতিও বদলাতে চান মোদী।
এক কথায়, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পরিষ্কার মানসিকতা পাল্টান। সামনে কাজ অনেক। যে জনমত নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে, সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্য শুধু কাজেই মনোনিবেশ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রী হওয়ার আগে কারও যদি কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ বা যোগাযোগ থেকে থাকে, তা হলে এ বার সেটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। পরিবারের কোনও সদস্যকে সরকারি কাজের বরাত দেওয়া যাবে না। কোনও সরকারি পদে পরিবারের সদস্যদের নিয়োগও করা যাবে না। যা সম্পত্তি রয়েছে, তার ভিত্তিতে নিষ্ঠার সঙ্গে কর দিতে হবে সকলকে। মোদী ইতিমধ্যেই আমলাদের ক্ষমতা দেওয়ার ব্যপারে দরাজ হয়েছেন, যাতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা পিছপা না হন। নতুন নতুন ভাবনাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু অনেক সময়ই মন্ত্রীরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমলাদের উপর চাপ বাড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে। নতুন সরকারে যাতে তেমন কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটিও সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মোদী।
গত কাল রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার মাধ্যমেই মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইউপিএ আমলের মতো তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক। ভোট প্রচারে মোদী বারবার বলেছেন, তাঁর পরিবারের আগে-পিছে কেউ নেই। ফলে তাঁর দুর্নীতি করারও কোনও প্রয়োজন নেই। তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি গোটা দুনিয়ায় সাড়া ফেললেও নিজের পরিবারের কাউকে দিল্লিতে আনেননি মোদী। রেস কোর্স রোডে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করেছেন, যাঁর সঙ্গে পরিবারের কেউ নেই। স্ত্রী যশোদাবেন দিল্লিতে আসার ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেও মোদী সেই পথে হাঁটেননি। সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। তবে বিজেপির এক নেতার কথায়, অতীতে দুর্নীতির অনেক ঘটনায় মন্ত্রীদের পারিবারিক যোগ উঠে এসেছে। মোদী প্রথম থেকেই সেই ধরনের যাবতীয় সম্ভাবনার পথ বন্ধ করতে চাইছেন।