জিতেন্দ্র চুপ, ৩৭০ থেকে দূরত্ব মোদীর

গত বছর জম্মুতে ‘ললকার সমাবেশ’-এ দাঁড়িয়ে তিনিই বলেছিলেন, সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। তখন তিনি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু কাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজের প্রথম দিনে তাঁরই দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ যখন এই নিয়ে বিতর্কটি উস্কে দিলেন, তখন তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০৩:০৬
Share:

গত বছর জম্মুতে ‘ললকার সমাবেশ’-এ দাঁড়িয়ে তিনিই বলেছিলেন, সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। তখন তিনি দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কিন্তু কাল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজের প্রথম দিনে তাঁরই দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ যখন এই নিয়ে বিতর্কটি উস্কে দিলেন, তখন তাঁর থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন নরেন্দ্র মোদী। বুঝিয়ে দিলেন, সরকারের জন্মলগ্নে কাশ্মীর নীতিতে হাত দিতে চান না তিনি।

Advertisement

যে বিষয়টি নিয়ে তিনি শুধু মুখই খোলেননি, দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও তা সামিল করা হয়েছিল, তাকে আপাতত দূরে সরিয়ে রাখছেন কেন প্রধানমন্ত্রী মোদী? বিজেপি সূত্র বলছে, কেবল ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদই নয়, নির্বাচনী ইস্তাহারে উন্নয়ন ও সুশাসনের কথাও রয়েছে। বস্তুত, এই দু’টিই ছিল মোদীর মূল অস্ত্র, যার ঘায়ে দেশ জুড়ে ঘায়েল হয়েছে কংগ্রেস। মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে নয়া সরকার যে আন্তরিক, আপাতত সেই ছবি তুলে ধরাটাই মোদীর লক্ষ্য। তাই বিতর্কিত কোনও বিষয় তিনি ছুঁতে চাইছেন না।

আর তাই গত কাল জিতেন্দ্র সিংহ যখন অনুচ্ছেদ ৩৭০ নিয়ে মন্তব্য করেন, খোদ মোদী তাঁকে ফোন করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন। রাতে বিবৃতি জারি করে গোটা দায় সংবাদমাধ্যমের উপরে ঠেলে দেন জিতেন্দ্র। আজ সকালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেন মোদী। রাজনাথও জিতেন্দ্র সিংহকে আলটপকা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। যার ফল, এ দিন সাংবাদিকদের এড়িয়ে গিয়েছেন জিতেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়াও বিজ্ঞান প্রযুক্তি দফতরের প্রতিমন্ত্রী তিনি। সেখানে সাংবাদিকরা তাঁকে ধরেন। প্রশ্ন শুনে জিতেন্দ্র বলেন, “এখানে তো বিজ্ঞানের গন্ধ। এখানে বিজ্ঞান ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে কথা বলাই উচিত নয়।”

Advertisement

সঙ্ঘ নেতারা কিন্তু একেবারেই অখুশি নন। কারণ, রামমন্দির, অনুচ্ছেদ ৩৭০, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এ সব বরাবরই আরএসএসের মূল ইস্যুগুলির অন্যতম। সঙ্ঘের চাপেই ইস্তাহারে বিষয়গুলিকে সামিল করতে হয়েছিল মোদীকে। কিন্তু মোদী প্রচারের সময় ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনার কথা বললেও রামমন্দির নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। কারণ, একদা হিন্দুত্বের পোস্টার বয় থেকে ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরাই ছিল ভোটের আগে তাঁর লক্ষ্য। আর ভোটের পর সেটিকে প্রমাণ করে একটি দীর্ঘ ইনিংস খেলারই এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “ভোটের ফল প্রকাশের দিনই মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জনমত পাঁচ বছরের হলেও তিনি কমপক্ষে দশ বছরের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। ফলে পাঁচ বছর পরেও মোদী যদি আবার ভোটে জিতে আসতে চান, তা হলে তিনি কি এখন বিতর্কিত বিষয়গুলি খুঁচিয়ে ঘা করবেন? বরং উন্নয়ন ও দক্ষ প্রশাসনের একটি ছবি জনতার সামনে তুলে ধরেই ফের ভোট চাইবেন।”

কাল জিতেন্দ্রর ওই মন্তব্যের পরে থেকে অবশ্য কাশ্মীরের নেতানেত্রীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা থেকে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, সকলেই এর সমালোচনা করেন। এক দিকে দিল্লির কংগ্রেস নেতারা, অন্য দিকে সঙ্ঘ নেতা রাম মাধব এঁরা মুখ খুললে বিতর্ক অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। বিশেষ করে রাম মাধব এবং ওমরের মধ্যে বাগ্‌যুুদ্ধ অব্যাহত। ওমরের কাল টুইট করেছিলেন: হয় অনুচ্ছেদ ৩৭০ থাকবে, নয়তো জম্মু-কাশ্মীর আর ভারতের অংশ থাকবে না। যার জবাবে রাম মাধবের টুইট, “জম্মু-কাশ্মীর আর ভারতের অংশ থাকবে না? ওমর কি মনে করেন ওটা ওঁর বাবার সম্পত্তি!” ওমর এ দিন বলেন, “আমি কখনওই বলিনি এটা আমার বাবার রাজ্য। আমি জম্মু-কাশ্মীরের এক জন নাগরিক। আর তাই নিজের অধিকার নিয়ে মুখ খোলার অধিকার আছে আমার।” মেহবুবা মুফতি অভিযোগ করেন, “জিতেন্দ্র সিংহের এই মন্তব্য জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দিতে পারে।”

বিজেপি কিন্তু চুপ। মোদী-সহ দলের সব নেতাই কুলুপ এঁটেছিলেন। তবে সঙ্ঘের সূত্র বলছে, সঙ্ঘ যা চাইছিল, জিতেন্দ্র সেটাই করেছেন। কাশ্মীরের নেতানেত্রীরা তো এর বিরোধিতা করবেনই। কিন্তু এর ফলে জাতীয় ক্ষেত্রে বিতর্ক শুরু হল। রাম মাধব বলেছেন, “আলোচনা হোক না। দেশ জুড়ে বিতর্ক হলে ক্ষতি কী!”

মোদী আজ কী করলেন? এ দিন প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমলাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মোদী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেন। রাজ্যগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ‘দল’ তৈরির কথা প্রচারেও বারবার বলেছেন তিনি। আজ সেটাই কার্যকর করার নির্দেশ দেন তিনি। অর্থাত্‌, মোদী বোঝাতে চেয়েছেন, সরকারের কাজেই অনেক বেশি মনোনিবেশ করছেন তিনি। যা থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ আপাতত অনেকটাই দূরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন