লোকসভা নির্বাচনে ভোটদান শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ডাক পড়েছে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর। দেশের যে-কোনও প্রান্তে যথাসময়ে জওয়ানদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ ট্রেন মানে ভোট পর্বে যে-সব ট্রেন শুধু আধাসেনাদের চলাচলের জন্যই নির্দিষ্ট। আগে বিভিন্ন ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের যাতায়াতের ব্যবস্থা হতো। খুব কম ক্ষেত্রেই কেবল আধাসেনাদের জন্য আলাদা ট্রেনের বন্দোবস্ত থাকত। রেল সূত্রের খবর, এ বার বিশেষ ট্রেনগুলি শুধু জওয়ানদের নিয়েই যাতায়াত করবে। ইতিমধ্যে ৪৪টি বিশেষ ট্রেনে প্রায় ৫০ হাজার আধাসেনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দু’মাসে ১০০টি বিশেষ ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। সেই জন্য সব জোন থেকে দু’তিনটি ট্রেন তুলে নিয়েছে রেল বোর্ড।
সাধারণ ট্রেনের বদলে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর জন্য বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত কেন?
লোকসভা বা বিধানসভার মতো যে-কোনও ভোটেই আধাসেনার সাহায্য নেয় নির্বাচন কমিশন। সাধারণ ভাবে ভোটের অন্তত সাত দিন আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া দরকার। কিন্তু ভোটের কাজে যাতায়াতের পথে বাহিনীকে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। তাদের বক্তব্য, দূরপাল্লার যাত্রী-ট্রেনের সঙ্গে দু’তিনটি কামরা জুড়ে দিয়ে আধাসেনাদের পাঠানোর বন্দোবস্ত করায় তাঁদের পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়। জওয়ানদের খাওয়াদাওয়ারও সমস্যা হয়। আবার কয়েক ঘণ্টা ট্রেন দাঁড় করিয়ে আধাসেনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলে অসুবিধা হয় সাধারণ যাত্রীদের। অতীতের এই সব সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রেল বোর্ডের বৈঠকে আলোচনার পরেই এ বার জওয়ানদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত করে দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না রেল। ওই সব বিশেষ ট্রেনের উপরে রেলের শীর্ষ কর্তারা নজর রাখবেন বলে জানিয়েছে রেল বোর্ড। ট্রেন কোথায় পৌঁছল, তার খোঁজ মিলবে রেলের নিজস্ব ‘কোচিং অপারেশন ইনফর্মেশন সিস্টেম’ (সিওআইএস)-এর মাধ্যমে। বিশেষ ট্রেন ছাড়ার আগে প্রতিটি বাহিনীর আধিকারিক রেলকে জানিয়ে দেবেন, তাঁদের কত জওয়ান ও অফিসার তাতে যাচ্ছেন। সেই অনুযায়ী ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম (আইআরসিটিসি) তাঁদের খাবার সরবরাহ করবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এই বিপুল আয়োজনের টাকা দেবে কে? রেলের কর্তারা জানান, এত দিন জওয়ানেরা টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতেন। নিজেরাই রান্না করে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। এ বার পুরো আয়োজনই করবে আইআরসিটিসি। পরে ট্রেনের ভাড়া এবং খাওয়াদাওয়ার খরচ মিটিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।