টিকিট না পেয়ে দলছুট নেতারা, সঙ্কটে জেএমএম

টিকিট বন্টন নিয়ে গোলমালের আশঙ্কা ছিলই। আর তার জেরে দলের মধ্যে ঝড় যে উঠবে, সেটাও আঁচ করা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ভাবেই লোকসভা নির্বাচনের মুখে টিকিট পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙন ধরেছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অন্দরে। ইতিমধ্যেই জেএমএম ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন পলামুর সাংসদ তথা প্রাক্তন মাওবাদী কামেশ্বর বৈঠা ও বরহেটের প্রবীণ বিধায়ক হেমলাল মুর্মু।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

টিকিট বন্টন নিয়ে গোলমালের আশঙ্কা ছিলই। আর তার জেরে দলের মধ্যে ঝড় যে উঠবে, সেটাও আঁচ করা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ভাবেই লোকসভা নির্বাচনের মুখে টিকিট পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙন ধরেছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার অন্দরে। ইতিমধ্যেই জেএমএম ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন পলামুর সাংসদ তথা প্রাক্তন মাওবাদী কামেশ্বর বৈঠা ও বরহেটের প্রবীণ বিধায়ক হেমলাল মুর্মু। দল ছাড়া প্রায় নিশ্চিত লিট্টিপাড়ার মোর্চা বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাইমন মারাণ্ডিরও। পরিস্থিতি এমনই যে লোকসভা নির্বাচনের পরে আর সরকারটাই টিকবে কিনা তা নিয়েও চিন্তায় দলীয় নেতৃত্ব।

Advertisement

কেন এই অবস্থা? দলের বিক্ষুব্ধ নেতারা এর পিছনে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেই দায়ী করছেন। তাঁদের অভিযোগ, শীর্ষ নেতা শিবু সোরেনের নিষেধ উপেক্ষা করে স্রেফ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য বিজেপির সঙ্গে জোট সরকার ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হেমন্ত। নিজে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লোভে কংগ্রেসের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে মাত্র চারটি আসনে লড়ার শর্তও হেমন্ত মেনে নিয়েছিলেন। তার জেরেই আজ দলের মধ্যে গোলমাল তৈরি হয়েছে।

আজই জেএমএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রবীন বিধায়ক হেমলাল মুর্মু। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্তের বিরুদ্ধে কাযর্ত তোপ দেগেছেন। হেমলাল বলেন, “গুরুজি এখন নামেই দলের সভাপতি। দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর হাতে এখন কোনও ক্ষমতাই নেই। সবটাই হেমন্ত কুক্ষিগত করেছে। পুরো দলটাই তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় পরিণত করেছেন। যে যা পারছে করছে। বিজেপির সঙ্গে জোট না ভাঙতে হেমন্তকে পরামর্শ দিয়েছিলেন গুরুজি। কিন্তু হেমন্ত শোনেননি। এমনকী তাঁর সিদ্ধান্তেই কংগ্রেসের শর্ত মেনে মাত্র চারটি আসনে মোর্চা লড়তে রাজি হয়েছিল।” দলীয় সূত্রে খবর, একই কারণে শিবুর ভাই লালু সোরেনও মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। তিনি বোকারোতে দলের সভাপতি ছিলেন। এ বার সম্ভবত দুমকাতে শিবুর বিরুদ্ধে তিনিই তৃণমূলের প্রার্থী হবেন। এক জেএমএম নেতার কথায়, “আসনের সংখ্যা এতই কম যে কাকে টিকিট দেওয়া হবে, আর কাকে দেওয়া হবে না তা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। এখন যা অবস্থা তাতে যিনিই টিকিট না পাবেন তিনিই দল ছেড়ে যেতে চাইবেন।”

Advertisement

এ দিকে, পলামুর সাংসদ কামেশ্বর বৈঠা জেএমএম ছেড়ে আজ দিল্লির রামলীলা ময়দানে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে শর্ত অনুযায়ী মোর্চা ওই আসনটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া নিয়েই বৈঠার সঙ্গে গোলমাল বাধে তাঁর দলের। প্রাক্তন মাওবাদী বলে পরিচিত ডাকাবুকো এই সাংসদ প্রথমে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পলামুতে বিজেপি-র হয়ে রাজ্যের প্রাক্তন ডিজিপি বিষ্ণুদয়াল রামের নাম প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে শেষ পর্যন্ত কামেশ্বর আজ তৃণমূলে চলে গেলেন। রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাইমন মারান্ডিও আজ জানিয়েছেন তিনিও দল ছাড়বেন। তবে তিনি কোন দলে যোগ দেবেন তা জানাননি। তাঁর ছেলে দীনেশ উইলিয়াম মারান্ডির জন্য রাজমহলের টিকিট চেয়েছিলেন সাইমন। কিন্তু মোর্চা সেখানে প্রার্থী করেছে বিজয় হাঁসদাকে। ফলে ক্ষুব্ধ সাইমন।

ভোটের মুখে এই ঘটনায় দলীয় কর্মীদের মনোবল যাতে ধাক্কা না খায় তার জন্য দলের তরফে থেকে দলছুট নেতাদের বিরুদ্ধেও তোপ দাগা হচ্ছে। মোচার্র কোর কমিটির সদস্য বিনোদ পাণ্ডে বলেন, “নিজে মন্ত্রী হবেন, ছেলেকে তিনি সাংসদ তৈরি করবেন, সব আবদার মেনে নেওয়া যায় না।” দলের মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচাযের্র কথায়, “এত উচ্চাশা ঠিক নয়। যাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন তাঁরা দলের প্রতীকে নেতা। প্রতীক ছাড়া তাঁদের কোনও গুরুত্ব নেই সাধারণ মানুষের কাছে। নেতারা যাচ্ছেন। কর্মীরা কিন্তু দলের সঙ্গেই রয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন