নাগাল্যান্ড

ডিমাপুরে জেল ভেঙে ধর্ষণে অভিযুক্তকে বের করে হত্যা করল জনতা

ধর্ষণে অভিযুক্তকে জেল ভেঙে বাইরে নিয়ে এল উন্মত্ত জনতা। লক্ষ্য, জনতাকে সাক্ষী রেখেই এই অপরাধের জন্য গণ-আদালত তাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে। শেষ পর্যন্ত নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের এই ঘটনায়, পুলিশ-প্রশাসনের সামনে গণপ্রহারেই অভিযুক্তের মৃত্যু হল। উন্মত্ত মানুষ সেই মৃতদেহকে প্রথমে ফাঁসিতে ঝোলাল। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খবর, ধর্ষকের মৃতদেহ ঘিরে চলছে আম-আদমির হুল্লোড়। পরে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশি ব্যর্থতায় সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০১:৪১
Share:

ধর্ষণে অভিযুক্তকে জেল ভেঙে বাইরে নিয়ে এল উন্মত্ত জনতা। লক্ষ্য, জনতাকে সাক্ষী রেখেই এই অপরাধের জন্য গণ-আদালত তাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে। শেষ পর্যন্ত নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের এই ঘটনায়, পুলিশ-প্রশাসনের সামনে গণপ্রহারেই অভিযুক্তের মৃত্যু হল। উন্মত্ত মানুষ সেই মৃতদেহকে প্রথমে ফাঁসিতে ঝোলাল। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খবর, ধর্ষকের মৃতদেহ ঘিরে চলছে আম-আদমির হুল্লোড়। পরে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশি ব্যর্থতায় সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে।

Advertisement

সারা দেশ যখন ফের নির্ভয়া-তথ্যচিত্রকে সামনে রেখে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময় প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বে ধর্ষণের বিরুদ্ধে এই তীব্র জনরোষ, নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল। জনতার এই রোষের মুখে স্রেফ পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আজ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা থেকে সাধারণ নিরাপত্তা কর্মীরা আর কিছুই করেননি বলেও অভিযোগ।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। ডিমাপুরের এস ডি জৈন কলেজের এক ছাত্রীকে চার দফায় ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পূর্ব পরিচিত দুই ব্যবসায়ী বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিল মেয়েটি। পরে এক ব্যবসায়ী গাড়ি থেকে নেমে গেলে অন্য জন মেয়েটিকে দফায় দফায় ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মেয়েটির দাবি, তাঁকে মদ্যপানেও বাধ্য করা হয়। দেওয়া হয় প্রাণে মারার হুমকিও। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে। তার পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠছিল।

Advertisement

এই নিয়ে গত দু’দিন ধরে ডিমাপুরে বনধ চলছে। বের হয় বিরাট মিছিল। ধর্ষণের ঘটনা নাগা বনাম অ-নাগা দ্বন্দ্ব অন্য মাত্রা পেয়েছিল। এই ঘটনাকে সামনে রেখে, নাগা ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। রাজ্য থেকে অবিলম্বে সব বাংলাদেশি নাগরিককে বের করার দাবিতেও তারা সরব হয়ে উঠেছে। ডিমাপুরে থাকা বেশ কিছু ব্যবসায়ীর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার জন্য সশস্ত্র জনতা জেলা প্রশাসনের দফতরেও হানা দেয়। অভিযুক্ত অসমের গাড়ি ব্যবসায়ী। সে কারণে অসমের ব্যবসায়ীদের দোকান খালি করে দেওয়ারও হুমকি দেয় নাগারা। উত্তপ্ত অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য ডিমাপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়। জারি হয় ১৪৪ ধারা। তার মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যায় এস ডি জৈন কলেজের ছাত্ররা হাজি পার্ক, হংকং মার্কেটের বহু দোকানে ভাঙচুর চালায়। গত রাতে ডিমাপুরের নিউ মার্কেটেও কয়েকটি দোকানে আগুন লাগানো হয়। বিশেষ করে জাতিগত সংঘাত ও অনুপ্রবেশ সমস্যা দু’টি ধর্ষণের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত জনরোষে পরিণত হয়।

এ দিনও ডিমাপুরের সব দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সকালে তথাকথিত বিদেশি ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে নাগা ছাত্র সংগঠন ও সুমি হো হো বিরাট মিছিল বের করে। জেলাশাসক ওয়েজিও কেনি আন্দোলনকারীদের বোঝাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ধর্ষণে অভিযুক্তকে ডিমাপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল। মিছিল ‘চার মাইল’ এলাকায় জেলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু জনতা সেই পুলিশি বাধা অগ্রাহ্য করেই এগোয়। পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার ভয়ে পুলিশ গুলি চালায়নি। বন্দিকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে এর পর জনতা কারাগারে ঢোকার চেষ্টা করে। কারাগারের রক্ষীদের কাবু করে দু’টি গেট ভেঙে ফেলে তারা। এর পরে উন্মত্ত জনতা জেলের ভিতরে ঢুকে জেল-অফিসে ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ বাহিনী লাঠি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, শূন্যে গুলি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বেনজির ভাবে জেল কর্তৃপক্ষ কারাগারের মূল ফটক খুলে দিতে বাধ্য হন। জনতা তাকে বের করে আনে। জেলে প্রায় ৫০০ কয়েদি ছিল। জেলের খোলা দরজার সুযোগ নিয়ে তিন বিচারাধীন জঙ্গিও পালিয়ে যায়।

এর পরেই অভিযুক্তকে নগ্ন করে তাকে নিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থল ক্লক টাওয়ারের দিকে রওনা হয় জনতা। গোটা রাস্তায় তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এর পর পুরনো বাজার এলাকায় একটি মোটরবাইকের পিছনে ওই যুবককে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে আসা হয় ক্লক টাওয়ারে। জেলাশাসক, এসপি এবং কয়েকশো পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও পরিস্থিতি পুলিশ বা প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ পর্যন্ত মরিয়া হয়েই পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। কয়েক জন বিক্ষোভকারী জখম হন। তবে কোহিমার সরকারি কর্তারা স্বীকার করেছেন, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। জনতা এক দিকে যেমন পুলিশ-প্রশাসনের মাথায় চড়ে গিয়েছে, তেমনই অভিযুক্ত তত ক্ষণে গণপ্রহারে মারা গিয়েছে। সেই মৃতদেহই ক্লক টাওয়ারে ঝুলিয়ে দেয় জনতা। এরপর দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গেলে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে পিছু হঠতে হঠতে সেখান থেকে সরে গিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন