তিন মাথা নিয়ে জোর টানাটানি কংগ্রেসে

পরের পর দশটা নির্বাচনে হেরেছে দলটা। দিল্লিতে তো খাতাই খুলতে পারেনি। কে নেতৃত্ব দেবেন এই দলের? এই নিয়ে লাগাতার তরজায় দলের নেতারা যখন প্রায় দিশাহারা, তারই মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজতে মহা-অধিবেশন ডাকতে চলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। এপ্রিলে বেঙ্গালুরুতে হতে পারে ওই অধিবেশন। অধিবেশনের খবর চাউর হতেই দু’ধরনের চাপ পড়ছে গাঁধী পরিবারের উপরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

—ফাইল চিত্র

পরের পর দশটা নির্বাচনে হেরেছে দলটা। দিল্লিতে তো খাতাই খুলতে পারেনি। কে নেতৃত্ব দেবেন এই দলের? এই নিয়ে লাগাতার তরজায় দলের নেতারা যখন প্রায় দিশাহারা, তারই মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজতে মহা-অধিবেশন ডাকতে চলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। এপ্রিলে বেঙ্গালুরুতে হতে পারে ওই অধিবেশন। অধিবেশনের খবর চাউর হতেই দু’ধরনের চাপ পড়ছে গাঁধী পরিবারের উপরে। এক দল বলছেন সনিয়া গাঁধী লাও, প্রিয়ঙ্কা লাও। দ্বিতীয় দলটি বলছে, পদ আঁকড়ে থাকা অকর্মণ্যদের বিদেয় করে রাহুল গাঁধী নেতৃত্ব দিন দলকে।

Advertisement

প্রথম দলটি সংখ্যায় কম। জনার্দন দ্বিবেদী, আহমেদ পটেল, সি পি জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের বক্তব্য, সনিয়া গাঁধীই ফের হাল ধরুন। রাহুলের নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা ও তাঁর রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দল ও দলের বাইরে সম্ভাব্য শরিকদের নিয়ে পথ চলাও সম্ভব নয় রাহুলের পক্ষে। বরং ২০০৩-এর মতো ফের জাতীয় স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার ক্ষমতা আছে একমাত্র সনিয়ারই। নয়তো প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে নিয়ে আসা হোক নেতৃত্বে।

এটা স্পষ্ট যে সনিয়া ইদানীং নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। দিল্লি ভোটে মাত্র এক দিনই প্রচারে বেরিয়েছেন তিনি। বরং জমি ছেড়ে দিয়েছেন রাহুলের জন্যই। এখনই রাহুলকে সভাপতি করার প্রস্তাবও আজকাল আর এক কথায় খারিজ করছেন না। সনিয়া নরম হওয়াতেই চাপ বাড়াচ্ছেন ওই নেতারা।

Advertisement

অন্যরা দলে ভারী। এই অংশে রয়েছেন দিগ্বিজয় সিংহ, কিশোরচন্দ্র দেও-রা। এঁদের দাবি, এপ্রিলের অধিবেশন থেকেই দলের রোজকার কাজ থেকে অব্যাহতি নিন সনিয়া। পাকাপাকি ভাবে সভাপতি হোন রাহুল। তার পর জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরে যে সব প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলি অবিলম্বে এবং দ্রুত রূপায়ণ করা হোক।

রাহুলকে অযোগ্য আখ্যা দিয়ে যাঁরা সনিয়াকে ফের এগিয়ে আসার কথা বলছেন, তাঁদের এক হাত নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের আদিবাসী নেতা কিশোরচন্দ্র দেও আজ বলেন, “দলটা অকর্মণ্যদের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেকড়হীন, মেরুদণ্ডহীন কিছু নেতা দু’দশক ধরে দলের সংগঠন আঁকড়ে থেকেই দলকে ডুবিয়েছেন।” সংগঠনে দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলে কিশোরচন্দ্র জানান, দিল্লির হার বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। বিশ্বাসযোগ্য কোনও নেতৃত্বকে সামনে দাঁড় করাতে না পারার জন্যই রাজ্যে-রাজ্যে গো-হারা হচ্ছে কংগ্রেস। রাহুলের উচিত হবে, দায়বদ্ধতা ও শৃঙ্খলা কায়েমের জয়পুর-প্রস্তাব রূপায়ণ করা।

গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার এ কথা বলছেন দিগ্বিজয়ও। আজ তিনি বলেন, “রাহুলও চেয়েছিলেন আপের মতো সংগঠন তৈরি করে মানুষের সঙ্গে যোগ স্থাপনের পথে হাঁটতে। দলেরই কিছু মুরুব্বি বার বার বিভ্রান্ত করেছেন, পিছন থেকে টেনে ধরেছেন তাঁকে।” নাম না করলেও, রাজধানীর রাজনীতিকদের কাছে এটা অস্পষ্ট নয় যে, দিগ্বিজয়ের আঙুল জনার্দন দ্বিবেদী, আহমেদ পটেল, সি পি জোশীর মতো নেতাদের দিকে।

দিগ্বিজয়ের বক্তব্য, “প্রমাণ হয়ে গিয়েছে অণ্ণা হজারে সঙ্ঘ পরিবারের হয়ে কাজ করছিলেন। অরবিন্দ কেজরীবালও আরএসএসের হয়েই কাজ করছেন। দেশকে কংগ্রেস-মুক্ত করার যে চিত্রনাট্য সঙ্ঘ তৈরি করেছে, তারই একটি চরিত্র হল কেজরীবাল।” কিশোরচন্দ্র দেওয়ের ব্যাখ্যা, রাজনীতিতে স্থান শূন্য থাকে না। কংগ্রেস স্থান শূন্য রেখেছিল বলেই আপ তার দখল নিয়েছে। এটাই বাঁচোয়া যে কংগ্রেসের ভোট বিজেপিতে যায়নি। তাঁর আশা, এ বার অন্তত রাহুল সক্রিয় হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন