লম্বা লাইন শিলচরের পেট্রোল পাম্পে। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বপন রায়।
জাহাজের কারবারি থেকে আদার ব্যাপারি, শিলচরের জনগণ আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলেন ‘তেল’ নিয়ে। রেল যোগাযোগ বন্ধ, ধস ও অবরোধে সড়ক পরিবহণ বিঘ্নিত। ফলে গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরায় পেট্রোল সঙ্কটের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিলচরেও। সড়ক যোগাযোগ মসৃণ হওয়ার পর আজই বেশ কিছু তেলের ট্যাঙ্কার শিলচরে আসে। আর ‘সেই বার্তা রটি গেল’ দ্রুত তেল ঢুকে গিয়েছে। বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর দেখা, বাজারের পথে দুই প্রতিবেশীর দেখা, পরিবারিক আলোচনা, এমনকী রিকশা ও আরোহীর কথোপকথনেও সবাই সবাইকে জানিয়েছেন ‘ব্রেকিং নিউজ’টিশুনেছেন তো? তেল ঢুকে গিয়েছে!
আর এর ফলে সকাল থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে শহরের পেট্রোল পাম্পগুলিতে। কেউ দু’চাকা, কেউ তিন চাকা, কেউ বা চার চাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। কিন্তু গাড়ি নেই এমন বহু মানুষও হাজির হন পাম্পে। কারও হাতে জ্যারিকেন, কারও বা হাতে স্রেফ খালি জলের বোতল। ভাবখানা এই: তেল ঢুকেছে যখন, তখন এ বেলা খানিকটা তুলে তো রাখি!
অথচ সোমবার ত্রিপুরায় যখন পেট্রোল-ডিজেলের তীব্র সঙ্কট ও কালোবাজারি, তখনও কাছাড় জেলায় তেলের মজুত সন্তোষজনক। যেমন ডিজেল, তেমনই পেট্রোল। রয়েছে পর্যাপ্ত কেরোসিনও। আসলে পাশের রাজ্যের ‘নাই-নাই’ বাঙালি অধ্যুষিত এই অঞ্চলকেও প্রভাবিত করে। কাছাড়ের জেলাশাসক গোকুল মোহন হাজরিকা জানিয়েছেন, “জেলায় প্রতিদিন সর্বাধিক ৬০ হাজার লিটার তেলের প্রয়োজন। আইওসি-র স্থানীয় ডিপোতে ১০ লক্ষ ৫৫ হাজার লিটার পেট্রোল মজুত রয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিন রয়েছে যথাক্রমে ৮২ লক্ষ ২৪ হাজার লিটার ও ৫১ লক্ষ ১৩ হাজার লিটার। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ও সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ার দরুন গত কয়েকদিন তেল বিক্রি সামান্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল মাত্র। আইওসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাময়িক নিয়ন্ত্রণও দুই-এক দিনের মধ্যে প্রত্যাহৃত হতে চলেছে। কাল গুয়াহাটি থেকে দেড় লক্ষাধিক লিটার তেল নিয়ে ট্যাঙ্কারগুলি রওনা হয়েছে। রাতেই পৌঁছে যায় পঞ্চাশ হাজার লিটার। সকালে আসে আরও বেশ ক’টি গাড়ি। এখন আর সঙ্কটের আশঙ্কা নেই।
তবে কেন তেল ঢোকার খবরে এমন হুড়োহুড়ি? আইওসি সূত্রটি বলেন, প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে চড়া দামে পেট্রোল বিক্রির খবর এবং দু’ তিন দিন এখানেও নিয়ন্ত্রণ বলবৎ হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। এ তারই ফলশ্রুতি।