দুই বিমানের দূরত্ব কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয়

চাই আকাশের নির্দিষ্ট একটি উচ্চতা। যেখান দিয়ে উড়লে বিমানের জ্বালানি-খরচ হয় সব থেকে কম। এতটাই যে, এ বার কলকাতা-দিল্লি রুটে দ্রুত ওই উচ্চতায় উঠে ওড়ার বিশেষ সুবিধা চালু হওয়ায় রোজ বাঁচবে ১৭ লক্ষ টাকার জ্বালানি! জ্বালানি সাশ্রয়ের সেই উচ্চতার কথা জানা ছিল। কিন্তু হুট বলতেই এত দিন কোনও বিমানকে হুড়মুড়িয়ে সেই উচ্চতায় ওঠার অনুমতি দিতে পারত না এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

চাই আকাশের নির্দিষ্ট একটি উচ্চতা। যেখান দিয়ে উড়লে বিমানের জ্বালানি-খরচ হয় সব থেকে কম। এতটাই যে, এ বার কলকাতা-দিল্লি রুটে দ্রুত ওই উচ্চতায় উঠে ওড়ার বিশেষ সুবিধা চালু হওয়ায় রোজ বাঁচবে ১৭ লক্ষ টাকার জ্বালানি!

Advertisement

জ্বালানি সাশ্রয়ের সেই উচ্চতার কথা জানা ছিল। কিন্তু হুট বলতেই এত দিন কোনও বিমানকে হুড়মুড়িয়ে সেই উচ্চতায় ওঠার অনুমতি দিতে পারত না এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। কারণ, তখন ওই উচ্চতায় রয়েছে অন্য বিমান। এখনও অন্য বিমান সেখানে থাকতেই পারে। তবে দু’টি বিমানের মধ্যে যে-ব্যবধান রাখা জরুরি, সেটা এখন কমিয়ে আনা গিয়েছে। তাই বিমানবন্দর ছেড়ে ডানা মেলার পরেই বিমান দ্রুত উঠতে পারবে সেই উচ্চতায়! আর সেখানে উড়লে বহু গুণ বাঁচবে জ্বালানি খরচ।

কলকাতা-দিল্লি রুটে এই সুবিধা চালু হয়েছে গত সোমবার। এবং আপাতত শুধু ওই রুটেই এর সুবিধা মিলবে। এর আগে ওই কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হত বিমানকে। অর্থাৎ আকাশে অন্য উচ্চতায় উড়তে হতো। ফলে জ্বালানিও পুড়ত বেশি। বিমান সংস্থার এক কর্তার কথায়, “কলকাতা-দিল্লির দু’ঘণ্টার উড়ানে একটি বিমানে এ বার থেকে সাশ্রয় হবে প্রায় ৭৫০ লিটার জ্বালানি। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫০ হাজার টাকা!” আশা করা হচ্ছে, এর ফলে বিমান টিকিটের দামও কমতে পারে। কারণ, বিমান সংস্থাগুলির দাবি, তাদের খরচের অধিকাংশই চলে যায় জ্বালানির পিছনে।

Advertisement

বিমানবন্দরের এক অফিসারের হিসেব, কলকাতা-দিল্লি রুটে দিনে কমপক্ষে ১৭টি উড়ান চলে। আবার ১৭টি ফিরে আসে। প্রতিটি উড়ানে যদি ৫০ হাজার টাকার জ্বালানি বাঁচে, তা হলে ওই রুটে প্রতিদিন সব বিমান সংস্থা মিলে ১৭ লক্ষ টাকার বেশি জ্বালানি বাঁচাতে পারবে। অঙ্কটা বছরে ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতা থেকে মুম্বই এবং অন্যান্য রুটেও এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। আরও লাভবান হবে বিমান সংস্থাগুলি। সেই সঙ্গে বাড়বে টিকিটের দাম কমার সম্ভাবনাও।

এটা সম্ভব হচ্ছে কী ভাবে?

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন কলকাতা-দিল্লি আকাশপথে ওই উচ্চতায় দু’টি বিমানের মধ্যে বাধ্যতামূলক ভাবে আড়াআড়ি ব্যবধান রাখতে হতো প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। সোমবার থেকে সেই দূরত্ব কমিয়ে ৭৫ কিলোমিটার করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জেনারেল ম্যানেজার চন্দন সেন বলেন, “এর ফলে ওই রুটে আরও বেশি বিমানকে জায়গা করে দেওয়া যাবে। এবং এর সুফল অনেক।” সেই সুফলের বেশির ভাগটাই যাবে বিমান সংস্থার ঘরে। কারণ, তারা ওই রুটে ঢুকে খুব তাড়াতাড়ি কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় উঠে যেতে পারবে। বাঁচবে জ্বালানি।

জ্বালানি বাঁচানো ছাড়াও পরিবেশ দূষণের দিকটিও এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন চন্দনবাবুরা। কারণ, বিমানের জ্বালানি যত কম পুড়বে, দূষণও সেই অনুপাতে কম হবে। শুধু দেশি সংস্থা নয়, এই ব্যবস্থার সুফল পাবে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলিও। কারণ, ব্যাঙ্কক থেকে ইউরোপ যাতায়াতের সময় বহু বিমানই ভারতের আকাশে কলকাতা-দিল্লি রুট ব্যবহার করে। সেই সব বিমান সংস্থাও জ্বালানি বাঁচাতে পারবে বলে চন্দনবাবু জানান। একটি বিমান সংস্থার কর্তার কথায়, “কলকাতা-দিল্লির মতো ব্যস্ত রুটের ক্ষেত্রে মাটি থেকে ওড়ার জন্যও ইঞ্জিন চালু করে অপেক্ষা করতে হয়। এ বার ওই উচ্চতায় যে-হেতু বেশি বিমানকে জায়গা করে দেওয়া যাবে, তাই মাটিতে সেই অপেক্ষার সময়টাও আসবে কমে। সাশ্রয় হবে সেখানেও।”

কিন্তু দু’টি বিমানের মাঝখানের দূরত্ব কমানো গেল কী ভাবে?

কলকাতা-দিল্লি রুটে গয়া ও ধানবাদের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার আকাশপথ এত দিন ছিল রেডারের আওতার বাইরে। অর্থাৎ ওই ‘অন্ধকার’ এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা বিমানের ছবি ফুটে উঠত না বিমানবন্দরের মনিটরে। তাই দূরত্ব কমানোর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। শুধু ওই এলাকার জন্যই দিল্লি থেকে কলকাতার মধ্যে দুই বিমানের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার রাখা হচ্ছিল। কলকাতা-দিল্লি রুটের মাঝখানে রয়েছে বারাণসী। তাদেরও রেডার রয়েছে। এখন ওড়িশার ঝাড়সুগুদা ও বিহারের কাটিহারে সদ্য বসানো দু’টি রেডারও কাজ শুরু করেছে। ফলে এত দিন অন্ধকারে থাকা ওই ৩০ কিলোমিটার এলাকা চলে এসেছে রেডারের আওতায়। ওই দুই রেডারের সাহায্যে কলকাতার মনিটরে দেখা যাচ্ছে বিমানের গতিবিধি। এই ব্যবস্থা চালু হওয়াতেই দু’টি বিমানের মাঝখানের দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন