করিমগঞ্জ

দিন-কানা দুই মেয়ে নিয়ে উদ্বেগে বাবা

রাতকানা রোগের কথা প্রায়ই শোনা যায়। ওই রোগে আক্রান্তরা রাতে চোখে দেখেন না। কিন্তু দিনের বেলা তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। ঠিক উল্টো ব্যাপারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দিতে। সেখানে দুই বোনের সন্ধান মিলেছে যারা দিনে দেখতে পায় না। তবে রাতের অন্ধকারে সব ঠিকঠাকই দেখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

বিরল দিন-কানা রোগের শিকার দুই বোন। ছবি: শীর্ষেন্দু শী।

রাতকানা রোগের কথা প্রায়ই শোনা যায়। ওই রোগে আক্রান্তরা রাতে চোখে দেখেন না। কিন্তু দিনের বেলা তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। ঠিক উল্টো ব্যাপারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দিতে। সেখানে দুই বোনের সন্ধান মিলেছে যারা দিনে দেখতে পায় না। তবে রাতের অন্ধকারে সব ঠিকঠাকই দেখে।

Advertisement

পাথারকান্দির পশ্চিম চেংজুর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক দিন থেকেই দুশ্চিন্তায়। আরিফার বয়স এখন ১৪ বছর। সুপ্তার ৭। দু’জনের কেউই দিনে চোখে দেখে না। রাতে সমস্যা নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই তারা স্বাভাবিক। জন্ম থেকে দুই সন্তানের একই রোগ। অন্ধ নয়, আবার চোখে যে ঠিকঠাক দেখে তাও বলা যায় না। বয়স যত বাড়ছে ততই তাদের দিনের আলোয় অন্ধত্ব প্রকট হয়ে উঠছে।

আজ করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে এমন রোগের কথা শুনে হতবাক সবাই। হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ গৌতম রায়শর্মা দুই বোনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, “এই রোগের নাম কোনডাইস্ট্রোথি। আমরা দুই পদ্ধতিতে চোখে দেখি। রাতে দেখি রড সেল-এর সাহায্যে। দিনের দেখাটা কন সেল-এর সাহায্যে। যাদের চোখে রডস কাজ করে না, তারাই রাতকানা। তবে কন সেল নিয়ে সচরাচর কোনও সমস্যা হয় না।” যদিও এ ক্ষেত্রে দুই বোনের সমস্যা ওই কন সেল নিয়েই। কলকাতার চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “দিনের বেলা এমন অন্ধত্বের নজির সাধারণ ভাবে খুবই কম। মূলত জন্মগত ছানি থেকে এটা হতে পারে। আবার এক ধরনের গ্লকোমাও এর কারণ হতে পারে।” চক্ষু চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্তের ব্যাখ্যা, “রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশের সাহায্যে আমরা দিনের বেলায় দেখতে পাই। সেই অংশে কোনও সমস্যা থাকলে দৃষ্টিশক্তি বাধা পায়। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে বলে আমার ধারণা।” তবে চিকিৎসকরা প্রায় সকলেই একমত, রোগটি একেবারেই বিরল। তাঁদের মতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ওষুধ খাওয়ানো হলে সামান্য উন্নতি হতে পারে।

Advertisement

করিমগঞ্জের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাইরে ভাল কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা বাবা হিসেবে শহিদুল নিশ্চয়ই ভাবছেন। কিন্তু পেশায় দিনমজুর শহিদুলের চিন্তা তাঁর আর্থিক অক্ষমতা নিয়েই। তিনি জানান, আরিফার যে চোখের সমস্যা রয়েছে, প্রথম দিকে তা বোঝাই যায়নি। রাতে সব দেখলে দিনে দেখবে না? এ কেমন কথা! তাই সে বললেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি কেউই। পরে দেখা যায়, এই অর্ধ-অন্ধত্বই আরিফার জীবনে এক নির্মম সত্য। তবে সুপ্তার জন্মের পর থেকেই লক্ষ রাখা হয়। ধরা পড়ে, সেও ওই একই সমস্যায় আক্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন