ধর্মগুরুদের সঙ্গেই মোদী মন রাখলেন যোগগুরুর

হিন্দুত্ব নিয়ে যে সুর চড়া করবেন না, সেই বার্তা দিয়েছেন বহু দিন আগেই। কিন্তু হিন্দি বলয়ের সাবেক হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে ধরে রাখতে এ বারে ধর্মগুরুদের তুষ্ট করার পথে হাঁটলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৯
Share:

কাছাকাছি। রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে। ছবি: এএফপি।

হিন্দুত্ব নিয়ে যে সুর চড়া করবেন না, সেই বার্তা দিয়েছেন বহু দিন আগেই। কিন্তু হিন্দি বলয়ের সাবেক হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে ধরে রাখতে এ বারে ধর্মগুরুদের তুষ্ট করার পথে হাঁটলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। আর সেটা করতে গিয়ে একদিকে যেমন যোগগুরু রামদেবের সঙ্গে এক মঞ্চে সভা করলেন, তেমনই হিন্দু ধর্মগুরুদের কথা শুনে তাঁকে নিয়ে ওঠা ‘হর হর মোদী’ স্লোগান ব্যবহার না করতে নির্দেশ দিলেন দলের কর্মীদের।

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরে প্রকাশ্যেই নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপিকে সমর্থনের বার্তা দিলেও তাঁর অনুগামীদের বিজেপি টিকিট না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যোগগুরু রামদেব। আজ সেই ক্ষোভ সামাল দিতে দিল্লির রামলীলা ময়দানে যোগগুরুর যোগাসন সমারোহে হাজির হলেন মোদী। রামদেবের সভায় গিয়ে মোদীও যোগাসন করেন কি না, তা দেখতে অনেকেই উৎসুক ছিলেন। তা না করলেও রামদেবের পাশেই হাঁটু মুড়ে আসন করে বসেছেন মোদী। সেই অবস্থাতেই হাতে মাইক নিয়ে মিনিট দশেক বক্তৃতাও করেছেন তিনি। বক্তৃতার পরতে পরতে ছিল রামদেবের প্রশংসা। মোদীর বক্তব্য, কালো টাকা, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবের মতো যে সব বিষয় রামদেব তুলছেন, তা তিনিও সমর্থন করেন। কিন্তু এতে অনেকেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে। আর তাই তাঁরা রামদেবকে হেনস্থা করছেন। মোদীর কথায়, “ওঁনার মধ্যে সততার আগুন রয়েছে। তা না হলে উনি কবেই পালিয়ে চলে যেতেন।”

পাল্টা প্রশংসা পেয়েছেন মোদীও। রামদেব তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছেন, ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করতে হবে যে সরকারে কোনও শক্তিশালী লোককেই আনতে হবে। শুধু রামলীলা ময়দানে উপস্থিত ভক্তদের কাছে নয়, রামদেবের আজকের অনুষ্ঠান প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ৬০০ জেলায় এক সঙ্গে প্রচারিত হয়েছে। সেখানেও যোগগুরুর এই বার্তা পৌঁছে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। এর পর মোদীর হয়ে প্রচারের জন্য রামদেব বারাণসীতেও যেতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এই অনুষ্ঠানে বারাণসী থেকে বেশ কয়েক জন ধর্মগুরুও হাজির হয়েছিলেন।

Advertisement

শুধু রামদেবই নন, দিল্লিতে এসে এ দিন হিন্দু ধর্মগুরুদের ক্ষোভও প্রশমিত করার চেষ্টা করেছেন মোদী। বারাণসীতে বিজেপি কর্মীরা ‘হর হর মোদী’ স্লোগান তোলায় রবিবারই এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন দ্বারকাপীঠের শঙ্করাচার্য স্বরূপানন্দ সরস্বতী। মোহন ভগবতের কাছেও এ বিষয়ে আপত্তি জানান তিনি। তাঁর যুক্তি ছিল, এতে ভগবান শিবকে অপমান করা হচ্ছে। আরএসএস ব্যক্তিপুজোকে সমর্থন করে না। তাই আরএসএসের উচিত এই স্লোগান অনুমোদন না করা। অন্য ধর্মগুরুরাও এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। আজ মোদী টুইট করেছেন, “কিছু অতি উৎসাহী সমর্থক এই স্লোগান ব্যবহার করছেন। আমি তাঁদের উৎসাহকে সম্মান জানাই। কিন্তু এই স্লোগান ভবিষ্যতে ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি।” এই বার্তা দিয়ে ওই স্লোগান থেকে দূরত্ব তৈরি করেছেন মোদী। শুধু ধর্মগুরুরা নন, এ নিয়ে কংগ্রেসের নেতারাও আপত্তি তুলেছিলেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী এই সব করেই নরম হিন্দুত্বে উস্কানি দিতে চাইছেন। কংগ্রেসের এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ভারপ্রাপ্ত নেতা অমিত শাহ। তাঁর যুক্তি, “কোথাও এমন একটা বিবৃতিও দেওয়া হচ্ছে না, যাতে হিন্দুত্বের উস্কানিমূলক বার্তা রয়েছে। উল্টে উন্নয়ন ও আর্থিক বৃদ্ধির কথাই বলা হচ্ছে প্রচারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন