ন’দফা থেকে নোটা, প্রথম অনেক কিছুই

এই ভোটে অনেক কিছুই ‘এই প্রথম’। আজ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে গিয়ে একের পর এক নতুন নজির গড়ল নির্বাচন কমিশন। গত বার যে নির্বাচন ছিল পাঁচ দফার, এ বার তা হয়ে গেল ন’দফার। ভারতে এত বেশি দফায় কোনও ভোট আগে হয়নি। ৭ এপ্রিল থেকে একেবারে ১২ মে। তার ওপর ভোটের সময়সূচি এত দিন পর্যন্ত নিজেদের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেই জানাত কমিশন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪১
Share:

এই ভোটে অনেক কিছুই ‘এই প্রথম’।

Advertisement

আজ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে গিয়ে একের পর এক নতুন নজির গড়ল নির্বাচন কমিশন। গত বার যে নির্বাচন ছিল পাঁচ দফার, এ বার তা হয়ে গেল ন’দফার। ভারতে এত বেশি দফায় কোনও ভোট আগে হয়নি। ৭ এপ্রিল থেকে একেবারে ১২ মে। তার ওপর ভোটের সময়সূচি এত দিন পর্যন্ত নিজেদের দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেই জানাত কমিশন। সেই রেওয়াজও ভাঙল আজ। দিল্লির যে বিজ্ঞান ভবনে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন, সেখানেই ভোটের সময়সূচি ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত।

কেন এত বেশি দফায় ভোট?

Advertisement

৯ দফা কবে কোথায়। সবিস্তার...

কমিশনের বক্তব্য, বিশাল নিরাপত্তা বাহিনীকে লাগাতার এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তাই এর প্রধান কারণ। এ ছাড়া, বিভিন্ন রাজ্যের উৎসব-পার্বণ, পরীক্ষা, তাপপ্রবাহের আশঙ্কার মতো বিষয়গুলির কথাও ভাবতে হয়েছে। তবু একটি দফার সঙ্গে অন্য দফার ব্যবধান কম রেখে ভোটপর্বের সার্বিক সময়কাল গত বারের চেয়ে ৩ দিন কমানো গিয়েছে।

পূর্বের রাজ্যগুলিতে মাওবাদী গতিবিধি, উত্তর-পূর্ব ও জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতার কথা মাথায় রাখতে হয়েছে কমিশনকে। ইতিমধ্যেই এক লক্ষের মতো আধাসেনা বিভিন্ন রাজ্যে মোতায়েন রয়েছে। আরও এক লক্ষের বেশি বাহিনী চেয়ে রেখেছে কমিশন। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ আসবে কেন্দ্র থেকে, বাকি রাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী। এখানেও রেকর্ড। এর আগে এত বেশি বাহিনী কোনও ভোটে ব্যবহার হয়নি। কমিশনের যুক্তি, এই কারণেই ত্রিপুরা, মণিপুরের মতো রাজ্যে দু’দফায়, অসমে তিন দফায়, জম্মু-কাশ্মীর-পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ দফায়, উত্তরপ্রদেশ-বিহারের মতো রাজ্যে ছ’দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। দিল্লি-হরিয়ানা, দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশেও একই দিনে ভোট করানো হচ্ছে।

অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটপর্বের পাশাপাশি কমিশন এ বার ভোটারদের বুথমুখী করায় সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছে। তাই ভোটের দিন ঘোষণার পরেও আগামী রবিবার আরও এক বার ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম মিলিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে জনতাকে। ভুয়ো ভোটার ঠেকাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচিত্র ভোটার তালিকা মেলানো হবে। দেওয়া হবে সচিত্র ভোটার স্লিপ (এ-ও সম্ভবত প্রথম বার)। তার পর ভোট ঠিকমতো পড়ল কি না, তা নিশ্চিত করতে এই প্রথম থাকছে ‘পেপার ট্রেল’। ইভিএমে সংযুক্ত বিশেষ যন্ত্রে ভোটার মিলিয়ে নিতে পারবেন তিনি কাকে ভোট দিলেন, সঙ্গের বাক্সে জমা হবে ছাপা ‘রসিদ’)। আর থাকবে লোকসভা ভোটে প্রথম বার ‘নোটা’ বিকল্প। কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হলে এই বোতাম টিপে রায় জানানো যাবে।

আর রয়েছে টাকার বিনিময়ে ভোট ও কালো টাকা আটকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ। এমনিতেই খরচের মাত্রা একটু বাড়িয়ে দলগুলিকে বাড়তি ছাড় দিয়েছে কমিশন। তার উপরেও কালো টাকা রুখতে ‘ফ্লাইং স্কোয়াড’ থাকছে। খরচ দেখার জন্য পর্যবেক্ষকেরও ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আর্থিক গোয়েন্দাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভোট ঘোষণার পর রাজনীতিও আজ থেকে নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রচারের হাওয়া গরম হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আজ রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোটের প্রচারের সময়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে কমিশন। আবার আজই লখনউয়ে আপ ও বিজেপির খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। গুজরাত প্রশাসনের অরবিন্দ কেজরীবালকে আটক করার প্রসঙ্গ তুলে আপ অভিযোগ করেছে যে, নির্বাচন কমিশন দলগুলিকে শুধুমাত্র প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে ছেড়ে দেয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সেই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “এমন নয়, আমরা পারি না। আমাদের ক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয় রাজনীতিকদের।”

কিন্তু পরীক্ষাটা রাজনীতিকদেরই। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই নিজের প্রচার তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। গণতন্ত্রের উৎসবকে স্বাগত জানিয়ে আজ তিনি টুইট-বার্তা দিয়েছেন ভোটারদের, বিশেষত দশ কোটি নতুন ভোটারকে। কংগ্রেস এখনও রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করলেও ন’দফায় ভোট ঘোষণায় খুশি। তারা মনে করছে, মোদীর এখন আর নতুন কিছু বলার নেই। বরং ইস্তাহার প্রকাশের পর সনিয়া-রাহুলের তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নামার সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সচিবালয় সাফল্যের সূচি প্রকাশ করে দাবি করেছে, ‘কম বোলা, কাম বোলা’। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী কম কথা বলেছেন, কাজ করে দেখিয়েছেন।

আজ ভোটের দিনক্ষণ প্রকাশের পরেই মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের সভায় রাহুল বলেন, “হিটলার চিৎকার করতেন। কারণ তাঁর আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। কিন্তু গাঁধীজি তা করেননি। শান্ত ভাবে বললেই মানুষ পাশে থাকবেন।” এই খোঁচার লক্ষ্য মোদীই, মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, রাহুল-মোদী চূড়ান্ত দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেল আজ থেকেই।

কমিশনের ছয়

• বোতাম টেপার পর দলের নাম-প্রতীক ছাপা কাগজ বেরিয়ে
আসবে ইভিএম থেকে। ভোটারের দেখা হলে জমা হবে নির্দিষ্ট বাক্সে।

• এই প্রথম লোকসভা ভোটে ‘নোটা’(না-ভোট)-র সুযোগ থাকছে।

• ভোটারদের দেওয়া স্লিপে থাকবে তাঁদের ছবিও।

• কোন দল নির্বাচনে কত খরচ করছে তা দেখবেন প্রতিনিধিরা। স্পর্শকাতর কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ।

• গত বারের চেয়ে দশ কোটি ভোটার বেড়েছে। দেশ জুড়ে ন’লক্ষ তিরিশ হাজার ভোটকেন্দ্র।

• ভোট চলাকালীন মদ তৈরি ও বিক্রির উপর বিশেষ নজরদারি। নজর থাকবে ব্যাঙ্ক লেনদেনেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন