শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পালাবদলের পরে এ বার তামিল আবেগকে ছুঁতে একটি নতুন পদক্ষেপ করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন তিনি। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, তাঁর সেই সম্ভাব্য সফরের প্রথম গন্তব্যটিই হতে চলেছে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত জাফনা।
এর আগে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জাফনা সফরে যাননি। ইউপিএ সরকারের দু’দফায় শ্রীলঙ্কায় কোনও রাষ্ট্রীয় সফরেও যাননি প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালে দু’দিনের জন্য মনমোহন সিংহ কলম্বো গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেই সফরের উপলক্ষ ছিল সার্ক সম্মেলন। ইউপিএ জমানার একেবারে শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জাফনা যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজাপক্ষে সরকারের জমানায়, তামিলদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে দেয়নি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। লোকসভা নির্বাচনে তামিল ভোটে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বলে আশঙ্কা করেছিল কংগ্রেসের একটি বড় অংশ। পরে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেছিলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। কাকেই বা দোষ দেব! চেয়েছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে প্রথম বারের জন্য নিয়ে যেতে। জাফনায় আমরা ৫০ হাজার বাড়ি তৈরি করেছি। সেখানে আমাদের তৈরি রাস্তা এবং অন্যান্য প্রকল্পও রয়েছে। কিছুই তাঁকে দেখানো গেল না।”
বিদেশনীতিতে নতুন জোয়ার আনতে চাওয়া মোদী ঠিক এই জায়গাটি থেকেই ধরতে চাইছেন। কূটনীতিকদের মতে, বিদেশনীতির প্রশ্নে জাতীয় বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং ঘরোয়া রাজনীতিকে একই বন্ধনীতে রেখে মোদী এগোতে চাইছেন। শ্রীলঙ্কায় ভারতের যে কর্মকাণ্ড চলছে সেটিকে এ বার ভারতের তামিল জনতার সামনেও তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করে মোদী সরকার।
শ্রীলঙ্কায় নতুন সরকার আসার পরে তাই আর সময় নষ্ট করতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার নয়া প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনাও যে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এগোতে চাইছেন তা কলম্বো জানিয়ে রেখেছে। ক্ষমতায় বসার পাঁচ দিনের মধ্যে সে দেশের নতুন বিদেশমন্ত্রী ভারত সফর করে গিয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চলতি মাসের মাঝামাঝি ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে খোদ সিরিসেনার।
সিরিসেনা সরকার তামিলদের ক্ষেত্রে কিছুটা উদারনীতি নেবে বলেই আশা সাউথ ব্লকের। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘে দিল্লির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তামিলদের প্রতি উদারনীতি নেওয়ার বিষয়ে তাঁর উপরেও অনেকটা নির্ভর করছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে ভারতের কূটনৈতিক অস্বস্তি অনেকটাই বাড়িয়েছিলেন। এলটিটিই-র বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর অভিযানের সময়ে তাঁকে সমর্থন করেছিল দিল্লি। কিন্তু পরে ওই অভিযানে শ্রীলঙ্কা সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠে। ফলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাজাপক্ষের মিত্র দেশ হিসেবে প্যাঁচে পড়তে হচ্ছিল দিল্লিকে।
কূটনীতিকদের মতে, চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েও দিল্লিকে উদ্বেগে ফেলেছিলেন রাজাপক্ষে। ফলে, কলম্বোয় নয়া সরকার আসায় স্বস্তিতে দিল্লি। সাউথ ব্লকের কর্তারা জানাচ্ছেন, সিরিসেনা-বিক্রমাসিঙ্ঘের সঙ্গে দিল্লিতেই এক বার তামিলদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া বা উত্তর শ্রীলঙ্কা থেকে সেনা সরানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে ফের আলোচনা করে নিতে চান মোদী। জাফনায় তামিল জনতার প্রতি বক্তৃতা দিতেও পারেন প্রধানমন্ত্রী। বেজিং-ঘনিষ্ঠতা কাটিয়ে শ্রীলঙ্কা দিল্লির কতটা কাছে আসে, তাই দেখার।