ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়!
ফের সে কথার প্রমাণ মিলল ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমে। পাহাড়ি ঝর্ণার জল ‘পাইপ-বন্দি’ করে নিজেদের বসতিতে নিয়ে এলেন দলমা পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা।
বাসাডেরা, ডাইনমারি, ভূরমু, টেরাপানির মতো গ্রামের রোজনামচার ছবিটা বদলে দেল তাতেই। জলের কষ্ট ছিল সারা বছর। খারাপ হয়ে পড়েছিল গভীর নলকূপগুলোও। কলসি, বালতি নিয়ে কয়েক মাইল হেঁটে ঝর্নার জল নিয়ে বাড়ি ফিরতেন স্থানীয় মহিলারা। ঝাড়খণ্ডের অন্য এলাকার গ্রামের বাসিন্দাদের মতোই। সরকারের উদাসীনতা দেখে, শেষ পর্যন্ত নিজেদের দুদর্শা কাটানোর উদ্যোগ নিলেন গ্রামবাসীরাই।
পাইপ বসিয়ে দলমা পাহাড়ের ঝর্ণার জল গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হল। সাহায্য মিলল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। ধারাগিরি, উসরাঘাঁটি, চতরানালা, চাউলিবুরু, বাঁদরচুঁয়ার মতো ঝর্নার জলের ধারার কয়েকটি জায়গায় পাইপ বসিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েক মাইল দূরের গ্রামগুলি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয় পাইপগুলি। ফল পাওয়া গেল হাতেনাতেই। জলের কষ্ট এখন কার্যত ভুলেছেন এলাকাবাসী। গ্রামের অলিগলিতে জলের কল, ফোয়ারা। ২৪ ঘণ্টাই জল পাওয়া যায় তাতে।
খুশি গ্রামের মহিলারা। পাহাড়, জঙ্গলের রাস্তায় মাইলের পর মাইল হেঁটে তাঁদের আর যেতে হয় না জলের সন্ধানে। এ কাজে গ্রামবাসীদের সাহায্য করেছে পশ্চিমবঙ্গের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার তরফে সুজয় ভট্টাচার্য জানান, ঝর্নার জল সেচের জন্য ব্যবহার করতেই প্রথমে ওই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে, তা কিছুটা বদলে পাহাড়ের গ্রামগুলিতে জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামগুলির বনরক্ষা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই প্রকল্প তৈরি হয়। পাইপ-সহ অন্য জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি গ্রামে জল সংরক্ষণ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বাসাডেরা গ্রামে ওই কমিটির সদস্য পঞ্চানন সিংহ বলেন, “কমপক্ষে আড়াই হাজার মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছেন। পানীয় জলের সঙ্কটও কেটেছে।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সুজয়বাবু বলেন, “গ্রামবাসীরা ওই জলই এখন পান করছেন। আমরা পানীয় জলের লাইনে জল-শোধনের যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করছি।”