পাচার ভেবে শিশু উদ্ধার, সঙ্কটে অভিভাবকরা

শিশু পাচার হচ্ছে ভেবেই গুয়াহাটি স্টেশনে পুলিশ উদ্ধার করে ১৯ জন শিশু-কিশোরকে। আর তাতেই বিপত্তি। উদ্ধার হয়েই সঙ্কটের মুখে তারা। অখুশি তারা, অখুশি তাদের অভিভাবকরাও। দলটিতে হাইলাকান্দির ৫ ও ত্রিপুরার ১৪ গরিব শিশু-কিশোর ছিল। হিমাচল প্রদেশের একটি বৈষ্ণব আশ্রমে তাদের থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানেই তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ইদানীং প্রায়শই উত্তর-পূর্ব থেকে শিশু পাচারের ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

শিশু পাচার হচ্ছে ভেবেই গুয়াহাটি স্টেশনে পুলিশ উদ্ধার করে ১৯ জন শিশু-কিশোরকে। আর তাতেই বিপত্তি। উদ্ধার হয়েই সঙ্কটের মুখে তারা। অখুশি তারা, অখুশি তাদের অভিভাবকরাও।

Advertisement

দলটিতে হাইলাকান্দির ৫ ও ত্রিপুরার ১৪ গরিব শিশু-কিশোর ছিল। হিমাচল প্রদেশের একটি বৈষ্ণব আশ্রমে তাদের থাকা-খাওয়া ও পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানেই তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ইদানীং প্রায়শই উত্তর-পূর্ব থেকে শিশু পাচারের ঘটনা ঘটছে। সেই কারণেই ট্রেনগুলিতে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ, গোয়েন্দারা। পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়েছে, এই সন্দেহেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটি রেল স্টেশন থেকে অসম পুলিশ ও সিআইডি এই ১৯টি বাচ্চাকে উদ্ধার করে। পাচারকারী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় তিন জনকে। পরে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের সম্মতিতেই তাদের ওই আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

গত কাল ওই শিশুদের নিজের নিজের জেলায় ফেরত পাঠানো হয়। বরাকের ৫ শিশুকে হাইলাকান্দি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাইলাকান্দি জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন প্রীতিকণা পাল বলেন, “আমাদের জানিয়ে গেলেই সমস্যা হত না। আইনে বলা হয়েছে, অভিভাবক ছাড়া শিশুদের কোথাও নিয়ে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির অনুমতি প্রয়োজন। তা না থাকাতেই পাচারের সন্দেহে ওদের আটক করা হয়।

Advertisement

অভিভাবকরা জানিয়েছেন, তাঁদের সম্মতিতেই শিশু-কিশোরদের হিমাচল প্রদেশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেখানকার শ্রীচৈতন্য গৌড়ীয় সেবা সমিতি ট্রাস্ট বাচ্চাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিল। বীরজামণি রিয়াং নামে স্থানীয় এক যুবক এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে সে দিন তাঁকেও পাচারকারী সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ধরা হয়েছিল সেবা সমিতির দুই সাধুকেও। পরে অবশ্য কাগজপত্র দেখালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা বাধে আটক নিয়ে। কারণ বীরজামণি সব ব্যবস্থা করলেও জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির অনুমতি নেননি। আদালতের নির্দেশে তাই তাদের বাড়ি পাঠানো হয়।

খবর পেয়ে অভিভাববকরা কাল বিকেলেই কমিটির অফিসে যান। সন্তানদের পক্ষকাল পরে দেখে তাঁরা যত না খুশি হয়েছেন, উদ্ধারকর্তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার চেয়েও বেশি। সিবদা রিয়াং, জনক রিয়াংরা বলেন, “বনজঙ্গল থেকে কাঠ-কুটো, ঝাডু-ঘাস সংগ্রহ করে কোনও ক্রমে দিন কাটে। ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ক্ষমতা নেই। যা হোক একটা ব্যবস্থা হয়েছিল। তাও কার্যকর হল না।” অনুকূল দাসের বক্তব্য, “আমি খেতমজুর। সংসার চালানো কঠিন। ছেলের মঙ্গলের কথা ভেবেই গুরুজির আশ্রমে তাকে দিতে চাইছিলাম।” পাঁচ অভিভাবকই জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির কাছে শিশুদের জন্য কিছু করতে অনুরোধ জানান। প্রীতিকণা দেবী বলেন, “দক্ষিণ অসমের চার জেলা জুড়ে এই ধরনের শিশু-কিশোরদের ভরণপোষণের জন্য একটি মাত্র কেন্দ্র রয়েছে শিলচরে। তাও সেখানে আসন সংখ্যা মাত্র ২৫। এখনই তাদের সেখানে পাঠানো সম্ভব নয়।” তবে হিমাচল প্রদেশের ওই আশ্রমটি এখনও যদি তাদের নিতে সম্মত থাকে তবে অভিভাবকরা কমিটির কাছে আবেদন করতে পারেন। প্রীতিকণা দেবীরাও ওই আশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। ভাল বুঝলে অনুমতি দেবেন। তখন বাচ্চাদের পাঠাতে আর সমস্যা হবে না। কিন্তু অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায়, মঠ কি এখন আর ওই বাচ্চাদের নিতে রাজি হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন