স্নাতক স্তরে ভর্তি শুরু হওয়ার কথা ছিল কাল থেকে। কিন্তু পাঠ্যক্রমের মেয়াদ তিন বছরের হবে না কি চার, সেই জটিলতা না কাটায় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে গেল।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত বছর স্নাতক স্তরে চার বছরের পাঠ্যক্রম চালু করেছিল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। বিজেপি ও সিপিএম দু’পক্ষেরই অভিযোগ ছিল, মূলত মার্কিন লবির চাপেই তড়িঘড়ি পাঠ্যক্রমটি চালু করা হয়েছে। গত কাল ইউজিসি ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় আজ সরব হয় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ছাত্ররা। পোড়ানো হয় উপাচার্য দীনেশ সিংহের কুশপুত্তলিকা। চার বছরের পাঠ্যক্রমের সমর্থনকারী ছাত্ররা প্রতিবাদ জানালে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ।
সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পুরনো ছাত্র-ছাত্রীরা। বিশেষত যাঁরা গত এক বছর নতুন পাঠ্যক্রমে পড়া শুরু করেছিলেন। যদিও ইউজিসির আশ্বাস, পুরনো ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি ব্রিজ কোর্সের ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এতে প্রায় ৫৫ হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দিল্লি ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন বা ডুটা-র। ওই সংগঠন প্রথম থেকেই চার বছরের পাঠ্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছিল। সংগঠনের সভাপতি নন্দিতা নারায়ণ বলেন, “উপাচার্যের খেয়ালখুশিতে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।”
গোটা দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের পাঠ্যক্রম শুরু হলে শিক্ষাব্যবস্থায় অসাম্য সৃষ্টি হবে এই যুক্তিতে প্রথম থেকেই সরব ছিল বিজেপি থেকে সিপিএম প্রায় সব দল। কিন্তু তখন উপাচার্যর পাশে দাঁড়ান তৎকালীন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী পল্লম রাজু। কিন্তু এখন সরকার বদল হওয়ার পরে কালই ইউজিসি জানিয়ে দেয়, এ বছরই ফিরিয়ে আনতে হবে আগের ব্যবস্থা। নির্দেশ আসার পরে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় কাল থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ।
উপাচার্য এখনও পিছু হটার লক্ষণ দেখাননি। যদিও নির্দেশ না মানলে কেন্দ্রীয় অনুদান কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইউজিসি। তার পরেও দীনেশ অনড় থাকলে তাঁকে বরখাস্ত করার কথাও ভাবছেন মন্ত্রকের কর্তারা। তবে এ ব্যাপারে ইউজিসি-র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেছেন মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যদিও মন্ত্রকের বক্তব্য, পাঠ্যক্রম বদলের এই গোটা উদ্যোগটি স্মৃতির নিজেরই। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারেও পুরনো পাঠ্যক্রম ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই স্মৃতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে ছাড়পত্র আদায় করে নেন। তার পরে স্মৃতির নির্দেশেই তৎপর হয় ইউজিসি।