দলীয় বিধায়কদের মুখোমুখি নীতীশ-শরদ। রবিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই
দলের ভরাডুবির দায় নিয়ে গত কালই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। আজ দিনভর পটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ধর্না বিক্ষোভ, হুমকি-অনশনের পরে আবার সেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পথে এক পা বাড়িয়ে রাখলেন তিনি।
মুখে অবশ্য বলেছেন, তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না তা তিনি আগামিকাল জানাবেন। তবে গোটা জেডিইউ নেতৃত্ব তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে, আপাতত নীতীশ বিদ্রোহের মেঘ কাটিয়ে দিতে পেরেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিজেপিকে রুখতে নীতীশ লালু প্রসাদের সঙ্গে হাত মেলাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে নানা শিবিরে। কারণ, সে ক্ষেত্রে দু’দলের ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দু’দলের পক্ষেই ওই ঝুঁকি নেওয়া বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন অনেকে।
লোকসভা ভোটে ভরাডুবির দায় মেনে গত কাল রাজ্যপালের কাছে গিয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন নীতীশ। তিনি বলেছিলেন, “ভোট প্রচারের নেতৃত্ব দিয়েছি। তাই হারের দায় নিয়ে ইস্তফা দিলাম।” ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানান, দল থেকেই অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। তাতে তিনি দলের প্রচারের কাজে অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন। সেই উদ্দেশ্যেই আজ বিকেলে দলের নেতা নির্বাচনে পটনার অ্যানে মার্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বিধায়ক দলের বৈঠকও ডাকা হয়। দলের জাতীয় সভাপতি শরদ যাদব, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য, সমস্ত নেতা এবং বিধায়ক সেখানে হাজির ছিলেন। বৈঠকের শুরু থেকে নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হবে বলে দাবি ওঠে। যদিও তা মানতে চাননি নীতীশ।
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অবস্থান এবং অনশনের হুমকি দেন জেডিইউ নেতা, বিধায়করা। পরিস্থিতি সামলাতে ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়ে নেন নীতীশ। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দলের চাপে সম্ভবত ফের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতীশই।
একদা শরিক এখন মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি-র দাবি, গোটা পর্বটিই নাটক। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, গত ন’বছরে নীতীশের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে জেডিইউয়ের অন্দরমহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় বিধায়ক, সাংসদ এমনকী সাধারণ কর্মীরাও নীতীশের মনোভাবে ক্ষুব্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে যে দলে অসন্তোষ রয়েছে তা ভাল করেই জানেন নীতীশ। বিজেপির এক নেতার কথায়, “কিন্তু এ যাবৎ দল ভাল ফল করায় কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেনি। এখন লোকসভায় খারাপ ফল করায় নীতীশ নিজেও বুঝতে পারছিলেন সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতে বাধ্য। তাই তড়িঘড়ি ইস্তফার নাটক করলেন তিনি।” বিরোধীদের ব্যাখ্যা, ইস্তফা দিয়ে দলীয় কর্মী ও জনমানসের সহানুভূতি পেতে চেয়েছিলেন নীতীশ। তাঁর সেই কৌশল খেটে গিয়েছে। ফলে শরদ যাদব বা নরেন্দ্র সিংহের মতো নীতীশ-বিরোধী নেতারা এখন কার্যত মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।
নীতীশের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলেন শরদ যাদব। ফলে আজ শরদ বিক্ষোভের মুখে পড়েন। নীতীশের বাড়িতে ঢোকার সময়ে তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান দলের কর্মী, সমর্থকরা। বিক্ষোভের জেরে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের পিছনের দরজা দিয়ে শরদের গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আত্মাহুতি দেওয়ার চেষ্টা করেন দীলিপ কুমার নামে এক যুবক। মারধর করা হয় এক বিধায়ককেও।
সমর্থকদের মনোভাব বুঝতে পেরে আজ বৈঠকে নীতীশের নেতৃত্বের উপর সিলমোহর দেন শরদও। অন্য দিকে আজ সকালে নীতীশ মন্ত্রিসভার কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহের বাড়িতে হাজির হন কয়েক জন জেডিইউ বিধায়ক। ভোটের ফলাফলের আগের দিন নীতীশের ডাকা বৈঠকে গরহাজির ছিলেন নরেন্দ্র। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যেই নীতীশের কাজকর্মের সমালোচনা করেছিলেন নরেন্দ্র। তবে আজ বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি জানান, দলের নতুন নেতা হওয়ার দৌড়ে তিনি নেই।
একই সুরে কথা বলেছেন দলের অন্যতম নেতা বিজয় চৌধুরিও। তাঁর বক্তব্য, “ম্যায় কোই রেস মে নেহি হু।” দলের শীর্ষ নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন, বিজেপি তাদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে দলে ভাঙন রুখতে গেলে নীতীশে ভরসা রাখা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই তাঁদের কাছে।
শরদ যাদবের একটি মন্তব্য থেকেই লালু-নীতীশ জোট নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল। কিন্তু লালু-বিরোধিতা করেই নীতীশ ক্ষমতায় এসেছেন। তাই লালুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে জেডিইউ-র অন্দরমহলেই সন্দেহ রয়েছে। লালুও জানিয়েছেন, এ নিয়ে জেডিইউয়ের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। এর মধ্যেই লালুর আরজেডি-র তিন নেতা সম্রাট চৌধুরী, রামলখন রাম, জাভেদ ইকবাল বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, জেডিইউতে যোগ দিয়ে নীতীশের হাত শক্ত করবেন।