বেঙ্গালুরুর স্কুলে ছ’বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী আজ ধৈর্য হারিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন সাংবাদিকদের দিকে। জানতে চাইলেন, “এটা ছাড়া কি আর কোনও বিষয় নেই আপনাদের? এই একটি মাত্র খবরই কি আছে আপনাদের কাছে?” এক বার নয়, তিতিবিরক্ত, ক্ষিপ্ত সিদ্দারামাইয়া বলতেই থাকেন, “আবারও বলছি, এটা ছাড়া কি.....”
সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ছাত্রী-ধর্ষণের ওই ঘটনার তদন্ত কত দূর এগিয়েছে? দোষীদের গ্রেফতার করতে রাজ্য সরকার এত দেরিই বা করল কেন? এতেই ধৈর্য হারিয়ে মুখমন্ত্রী নতুন করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। গত শুক্রবার বিধানসভায় নারী নির্যাতন নিয়ে বিতর্কের সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। টিভিতে সে দিন গোটা দেশ দেখতে পায়, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে জে জর্জের পদত্যাগের দাবিতে বিজেপি বিধায়করা যখন গলা ফাটাচ্ছেন, ঠিক তখনই সামনের দিকে মাথা এলিয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চোখ বোজা। টিভিতে সে ছবি দেখানোর পরে সিদ্দারামাইয়া দাবি করেন, মোটেই ঘুমোচ্ছিলেন না, আসলে খুব মন দিয়েই বিতর্ক শুনছিলেন তিনি।
স্কুলে ধর্ষণের এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মুস্তাফা আগে যে স্কুলে চাকরি করত, সেই স্কুলের অধ্যক্ষ আজ স্কুলের ফেসবুক পাতায় জানিয়েছেন, বহু বার সতর্ক করা সত্ত্বেও নানা অজুহাতে মেয়েদের ছোঁয়া বন্ধ করেনি মুস্তাফা, তখনই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশ্নে উঠেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ সে সময়ই কেন পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। সম্প্রতি ২২ বছরের এক যুবতী ও ১৬ বছরের এক সন্ন্যাসিনীও ধর্ষিতা হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু পুলিশ তেমন কোনও সাফল্য দেখাতে পারেনি তদন্তে। এমনকী যৌন-নির্যাতন, ধর্ষণের মতো অভিযোগেও কেবলমাত্র গুন্ডা দমন আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আজ জানতে চাওয়া হয়, ৬ বছরের স্কুলছাত্রী-ধর্ষণে প্রধান অভিযুক্ত মুস্তাফা এর আগেও শ্লীলতাহানির মতো অপরাধে চাকরি খুইয়েছে। এ কথা জানার পরেও কি তার বিরুদ্ধে স্রেফ গুন্ডা দমন আইনের ধারা প্রয়োগ করা হবে? এই প্রশ্নেরও সদুত্তর দেননি মুখমন্ত্রী। শুধু বলেছেন, “যেখানে গুন্ডা আইন প্রয়োগ করা দরকার, সেখানে তা অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে।”
বেঙ্গালুরুর নতুন পুলিশ কমিশনার এম এন রেড্ডি আজ ছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি জানান, বাচ্চাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে বিষয়গুলি অভিভাবক প্রতিনিধিরা তুলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব সেগুলির সমাধান করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছেন তিনি।
স্কুলের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে এ দিন বৈঠক করেন রাজ্যের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী কিম্মানে রত্নাকরও। তিনি জানান, পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আগামী কাল থেকে স্কুল খোলা হতে পারে। তবে স্কুলের তত্ত্বাবধানের ভার থাকবে সরকারের হাতে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যের পরে অভিভাবকরা কতটা আশ্বস্ত বোধ করছেন তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।