বিদেশি লগ্নি টানতে নয়া নীতির ভাবনা বাজেটে

ভারত আবার জগৎসভায় চিনের পরের আসন নেবে। বিদেশি পুঁজি টানার প্রতিযোগিতায় এই লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যার জন্য ভারতের অর্থনীতিকে ফের বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে লোভনীয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বিষয়ে মোদী সরকারের প্রথম বাজেটেই নতুন নীতি ঘোষণা হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

ভারত আবার জগৎসভায় চিনের পরের আসন নেবে। বিদেশি পুঁজি টানার প্রতিযোগিতায় এই লক্ষ্য নিয়েই এগোতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যার জন্য ভারতের অর্থনীতিকে ফের বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে লোভনীয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বিষয়ে মোদী সরকারের প্রথম বাজেটেই নতুন নীতি ঘোষণা হতে পারে।

Advertisement

অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামের মতে, বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিদেশি লগ্নিকারীরা তখনই এ দেশে বিনিয়োগ করবেন, যখন তারা সেখান থেকে লাভের মুখ দেখবেন। আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়লে তবেই লাভের সুযোগ তৈরি হবে। আবার বিদেশি লগ্নি এলেই বৃদ্ধির হার বাড়বে। অর্থসচিবের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সেই কারণেই বারবার দেশের অর্থনীতিকে আর্থিক বৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।” বৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সে জন্য আরও লগ্নি প্রয়োজন। দেশীয় লগ্নিতে সব প্রয়োজন মিটবে না। তাই বিদেশি লগ্নি প্রয়োজন।

বিদেশি পুঁজির গন্তব্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় স্থানেই ছিল ভারত। চিনের পরেই। আন্তর্জাতিক লগ্নি সম্পর্কে আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি)-র যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ভারত নিজের জায়গা হারিয়েছে। কিন্তু চিন এখনও প্রথম স্থানে। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভারত চিনের পরে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। আন্তর্জাতিক মন্দার পরে ২০০৯ সালে ভারত নেমে যায় তৃতীয় স্থানে। পরের বছর ফের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও ২০১১ সালে ফের ভারত তৃতীয় স্থানে চলে যায়। পরের বছর আরও খারাপ, অষ্টম স্থান। গত বছরে তৃতীয় স্থানে উঠে এলেও চলতি বছর লগ্নিকারীদের পছন্দের গন্তব্যের তালিকায় ভারত চতুর্থ স্থানে চলে গিয়েছে।

Advertisement

চিন ছাড়াও ভারতকে ছাপিয়ে গিয়েছে আমেরিকা ও ইন্দোনেশিয়া। চিন, আমেরিকা ছাড়াও সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্রাজিলে বিদেশি লগ্নি বাড়ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে ভারত। অর্থসচিব জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির বিনিয়োগের বদলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগেই অর্থ মন্ত্রক বেশি আগ্রহী। অর্থাৎ মোদী সরকার চায়, শুধুই শেয়ার বাজারে লগ্নি না করে বিদেশি বা বহুজাতিক সংস্থাগুলি সরাসরি এ দেশে শিল্প বা ব্যবসা করতে আসুক। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। একই ভাবে রেলের প্রকল্প, ই-কমার্স এবং আবাসন শিল্পেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রক। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে কী নীতি নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার? অর্থসচিবের জবাব, “বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”

গত আর্থিক বছরে (২০১৩-’১৪) দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪.৭ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এই পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে যে বিদেশি লগ্নি ছাড়া উপায় নেই, তা ভালই বুঝতে পারছে নতুন সরকার। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে ভারতে ২৪২৯ কোটি ডলার মূল্যের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তার আগের বছরের ২২৪২ কোটি ডলারের বিদেশি লগ্নির তুলনায় সামান্য উন্নতি হলেও কেন্দ্র বিদেশি লগ্নির পরিমাণ আরও বাড়াতে চাইছে।

অর্থসচিব মায়ারাম জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি হলেই বিদেশি লগ্নি আসবে না। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ টানতে হলে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। নতুন সরকার যে এ বিষয়ে সংস্কারের পথে এগোচ্ছে, গত সপ্তাহের শেষে অস্ট্রেলিয়ায় জি-২০ সম্মেলনেও সে কথা জানান মায়ারাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন