শেক্সপীয়র বলতে পারেন, নামে কী বা আসে যায়। কিন্তু ভোটের ময়দানে আলবত্ এসে যায়! নামে কত কী যে আসে যায়, এখন হাড়ে হাড়ে বুঝছেন কেরলের বাম প্রার্থীরা!
দক্ষিণী এই রাজ্যের ২০টি আসনে ভোট ১০ এপ্রিল। প্রার্থী হিসাবে ২০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ২৬৯ জন। তাঁদের মধ্যে এ বার ৩০ জন এমন প্রার্থী আছেন, যাঁদের নাম অন্যদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে! এবং ঘটনাচক্রে, মিল বেশি হয়ে গিয়েছে বাম প্রার্থীদের সঙ্গেই! একের পর এক বাম প্রার্থী আবিষ্কার করছেন, তাঁদের সঙ্গে নামের মিলসম্পন্ন ব্যক্তিরা কোথা থেকে যেন আবির্ভূত হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন!
কাসারগোড়, কান্নুর, আলাতুর, পোন্নানি, ভাডাকারা, মাভেলিক্কারা, আলপ্পুঝা, পাতানামতিট্টা, কোল্লম, তিরুঅনন্তপুরম, আট্টিঙ্গল একের পর এক কেন্দ্রে কাছাকাছি নামের প্রার্থীরা এখন চূড়ান্ত বিভ্রান্তি তৈরি করে বসেছেন কেরলে! প্রতিষ্ঠিত দলের প্রার্থীরা সংখ্যায় অল্প, তাঁদের প্রতীকও পরিচিত। কিন্তু কম ভোটে জয়-পরাজয়ের ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে বেশি, সেখানে নামের গেরোয় কিছু ভোট হারাে নার আতঙ্ক তাড়া করছে বাম প্রার্থীদের!
এসএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি পি কে বিজু যেমন। আলাতুরের সাংসদ তিনি। এ বারও কাস্তে-হাতুড়ি-তারা চিহ্ন নিয়ে পালাক্কাড জেলার ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তার পরে দেখছেন আর বিজু, এ বিজু, কে বিজু নামে আরও তিন তিন জন বিজু ময়দানে হাজির! মানে এক কেন্দ্রে চার বিজু! সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, “আমাদের দলের প্রতীক লোককে নতুন করে চেনানোর দরকার নেই। কিন্তু এই রকম একই ধরনের নাম নিয়ে প্রার্থীরা থাকলে ভোটারদের একাংশের মধ্যে বিভ্রান্তি স্বাভাবিক!” বিভ্রান্তির মাসুল ইতিপূর্বে দিয়েছে সিপিএম। ওই নেতার কথায়, “গত বার যেমন কোঝিকোড আসনে আমাদের প্রার্থী ছিলেন মহম্মদ রিয়াজ। ওই রিয়াজ নামেই আরও চার জন প্রার্থী সে বার ওই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে পড়ে বেশ কয়েক হাজার ভোট পেয়েছিলেন। শেষমেশ আসনটা আমরা হেরেছিলাম মাত্র ৮৩৮ ভোটে!” ঘরপোড়া বিজুরা তাই সিঁদূরে মেঘ দেখছেন! বিশেষত, কেরল থেকে যথাসম্ভব আসন বার করার লক্ষ্য নিয়ে লড়তে নেমে স্রেফ নামের গেরোয় স্বপ্ন বানচালের আশঙ্কায় গাল পেড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম ভুলিয়ে দিচ্ছেন কমরেডরা!
ভাডাকারা আসনে এ এন শামসির, আলপ্পুজায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক সি বি চন্দ্রবাবু বা ইদুক্কির বাম সমর্থিত নির্দল জয়েস জর্জ, এঁদের সকলের নামেই ভাগ বসানোর প্রার্থী ওই সব কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে পড়েছেন! তিরুঅনন্তপুরমে এ বার অনেক অঙ্ক কষে দলের বাইরে থেকে কলেজ সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন কর্তা তথা ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বেনেট পি আব্রাহামকে প্রার্থী করেছে বাম শরিক সিপিআই। নানা ঘটনায় বিপর্যস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কংগ্রেস প্রার্থী শশী তারুরকে কোণঠাসা করার আশায় ময়দানে নেমে তারা দেখছে, ভোট-বাজারে আরও বেঞ্জামিন আছেন! সিপিআইয়ের আর এক প্রার্থী সত্যেন মোকারির অভিজ্ঞতাও একই রকম। আট্টিঙ্গলের সিপিএম সাংসদ এ সম্পতের নামের সঙ্গে ধ্বনিগত সাদৃশ্য নিয়ে সম্বত এবং সম্পত, দুই-ই উপস্থিত!
সমস্যা শুধু বামেদেরই, এমন অবশ্য নয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটের শরিক এসজেডি-র প্রার্থী এম বীরেন্দ্রকুমারের কেন্দ্রে জনৈক ও পি বীরেন্দ্রকুমার আছেন! বাম জোটের কাছে আসন না-পেয়ে এলডিএফ ছেড়ে বেরিয়ে এ বার ইউডিএফের হয়ে ভোটে লড়ছেন আরএসপি নেতা এন কে প্রেমচন্দ্রন। কোল্লমে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবির (নাম-বিভ্রান্তিকে যিনি ‘কেরল ট্রেন্ড’ বলছেন) সঙ্গে তাঁর লড়াই এ বার কেরলের ভোটে উত্তেজক যুদ্ধ হিসাবেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাম জোট ছেড়ে গিয়েও প্রেমচন্দ্রনের নামের বিধি বামই আছে! কোল্লমের দেওয়ালে আরও দুই প্রেমচন্দ্রন অস্তিত্ব জানান দিয়ে বসে আছেন!
সকলেরই মনে মনে সন্দেহ, তাঁদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলই ভোটারদের বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য তলে তলে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে! কিন্তু কোনও প্রমাণ নেই। অগত্যা কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং সাংসদ পি করুণাকরন বলছেন, “এখন তো কারও নাম বদলাতে পারব না! প্রচারের সময়ে প্রার্থীদের দল এবং প্রতীকের কথা বেশি করে বলতে হবে। এ ছাড়া আর কী করা যাবে!”