‘ব্লক বুকিং’ নিয়মে মুনাফা এজেন্টদের, দুর্ভোগে বিমানযাত্রী

পেট্রোলের কালোবাজারির পরে ত্রিপুরায় বিমান-টিকিটে ফাটকাবাজির অভিযোগ উঠছে। বিমানের যাত্রীদের অভিযোগ, একসঙ্গে অনেক টিকিট কেটে রাখছেন এজেন্টরা। পরে সুবিধা মতো সময়ে সেই টিকিট চড়া দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। বিমান যাত্রার বেশ কিছু দিন আগে আগরতলা-কলকাতা রুটের যে টিকিট সাধারণত তিন-চার হাজার টাকায় পাওয়া যায়, শেষ মূহূর্তে সেই টিকিট বিকোচ্ছে ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। কখনও তা ১৫-১৭ হাজার টাকাতেও উঠে যাচ্ছে।

Advertisement

আশিস বসু ও সুনন্দ ঘোষ

আগরতলা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share:

পেট্রোলের কালোবাজারির পরে ত্রিপুরায় বিমান-টিকিটে ফাটকাবাজির অভিযোগ উঠছে। বিমানের যাত্রীদের অভিযোগ, একসঙ্গে অনেক টিকিট কেটে রাখছেন এজেন্টরা। পরে সুবিধা মতো সময়ে সেই টিকিট চড়া দামে বিক্রি করছেন তাঁরা। বিমান যাত্রার বেশ কিছু দিন আগে আগরতলা-কলকাতা রুটের যে টিকিট সাধারণত তিন-চার হাজার টাকায় পাওয়া যায়, শেষ মূহূর্তে সেই টিকিট বিকোচ্ছে ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। কখনও তা ১৫-১৭ হাজার টাকাতেও উঠে যাচ্ছে।

Advertisement

আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে হলে চটজলদি উপায় হল বিমানযাত্রা। এই রুটে প্রতি দিন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি, স্পাইসজেটের দু’টি এবং ইন্ডিগো-র ৩টি উড়ান যাতায়াত করে। বিমান সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়, বেশির ভাগ সময়েই বিমান ভর্তি থাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই শেষ মুহূর্তে ইন্টারনেটে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে দেখাচ্ছে, ‘নো রেকর্ডস’। যার অর্থ, নির্দিষ্ট সেই উড়ানে আর জায়গা নেই। অথচ ওই একই উড়ানের টিকিট বিক্রি করছেন এজেন্টরা। এক যাত্রীর কথায়, “আমি আগের দিন রাতে ইন্টারনেটে বসে দেখেছি, একটি উড়ানের টিকিটের দাম ৮৯৩৩ টাকা। পর দিন কাটতে গিয়ে দেখেছি, সেই টিকিট নিঃশেষিত। এজেন্ট সেই একই উড়ানের টিকিটের দাম চেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা!”

কী করে সম্ভব হচ্ছে এটা?

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, বিমানসংস্থাগুলি থেকে এক লপ্তে অনেকগুলি টিকিট কেটে নিতে পারেন এজেন্টরা। একে ‘ব্লক বুকিং’ বলা হয়। যার অর্থ, আগে থেকেই নির্দিষ্ট দিনের আগরতলা-কলকাতা এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানের অনেকগুলি টিকিট কেটে রাখতে পারেন এজেন্ট। সেই টিকিট কাটতে গড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হলে তাঁকে মোটা টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এই সুবিধা রয়েছে স্পাইসজেট, ইন্ডিগোর ক্ষেত্রেও। আগরতলা-কলকাতা রুটের টিকিটের চাহিদা যেহেতু তুঙ্গে, তাই শেষ মুহূর্তে ওই টিকিটগুলিই চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এ অভিযোগ উঠছে অন্য ব্যস্ত বিভিন্ন রুটের বিমান টিকিটের ক্ষেত্রেও।

ট্রাভেল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “এয়ার ইন্ডিয়া ও জেট এয়ার ওয়েজের ক্ষেত্রে কড়া নিয়ম রয়েছে। টিকিট বিক্রির জন্য যে এজেন্ট রাখা হয় তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সদস্য। তাই তাঁদের উপরে নজরদারি থাকে।” কিন্তু, ইন্ডিগো বা স্পাইসজেট এর মতো সংস্থা আগরতলার মতো ছোট শহরে প্রচুর এজেন্ট নিয়োগ করে। অনিল জানান, ওই সব এজেন্ট ব্লক বুকিং করে আগে থেকে সিংহভাগ টিকিটই কিনে নেন। ফলে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারে বিমান সংস্থাগুলি।

এদের আটকানোর উপায় কী?

ত্রিপুরার পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী মানিক দে বলেন, ‘‘কলকাতা-আগরতলা রুটের অস্বাভাবিক বিমান-ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বহু বার কেন্দ্রের অসামরিক বিমানমন্ত্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনও লাভ হয়নি।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রকও জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। কারণ বিভিন্ন রুটের ভাড়া ঠিক করে বিমানসংস্থাগুলিই। অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “এই ধরনের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলিরই উচিত এজেন্টদের সতর্ক করে দেওয়া। যাত্রীদের থেকে এত টাকা নিলে তাতে বিমানসংস্থার ভাবমূর্তির ক্ষতি হতে পারে।”

কলকাতার এক এজেন্ট বলেছেন, “যে রুটে টিকিটের চাহিদা বেশি সেই রুটের টিকিটই ব্লক বুকিং করা হয়। কলকাতা থেকে ডিসেম্বরে ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর-পোর্টব্লেয়ারের টিকিট আমরা এক সঙ্গে বুক করে রাখি। এক লপ্তে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অনেক সময় সেই ফাটকাবাজি মারও খায়। আমাদের কমিশন তুলে দেওয়া হয়েছে। টিকিট বিক্রি করে কিছু টাকা হয়। ফাটকাটা লেগে গেলে একলপ্তে কিছু মুনাফা হয়। এটাই তো ব্যবসার নিয়ম।” সস্তার এক বিমানসংস্থার জনৈক অফিসারের কথায়, “মুনাফা আমরা করছি না। করছে এজেন্টরা। তা ছাড়া বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে শেষ মূহূর্তে বিমানবন্দরে ঢুকে দেখুন কত গুণ দামে টিকিট কাটতে হয়!”

যাত্রীদের এই দুর্ভোগ কি কমবে না? বিমানের টিকিটের ‘ফাটকাবাজি’ বন্ধ করার উপায় কি রাজ্য প্রশাসনের হাতে রয়েছে? ত্রিপুরা পুলিশের আইজি (ক্রাইম) লালিয়ামিংগা ডারলং বলেন, ‘‘বিমানযাত্রী বা সাধারণ মানুষ যদি কোনও এজেন্টের বিরুদ্ধে টিকিটের কালোবাজারি বিষয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ থানায় জানান, সে ক্ষেত্রেই পুলিশ পদক্ষেপ করতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন