বুলবুলি না লড়লেও, মোষ-যুদ্ধ হল অসমে

এক দিকে আদালতের আদেশ, অন্য দিকে অমঙ্গলের আশঙ্কা এ নিয়ে সংশয় ছিল অসমে। কয়েকশো বছরের পরম্পরা ভেঙে মাঘ বিহুতে হাজোর বুলবুলির লড়াই বন্ধ হলেও, নগাঁও ও মরিগাঁওয়ে মোষের লড়াই হল। মরিগাঁওয়ের আহতগুড়িতে পুলিশ-প্রশাসনের চাপে মোষ-যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় উজানি-নামনি অসমে সড়ক ও রেল লাইনে অবরোধ করল ক্ষুব্ধ জনতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

যুদ্ধ। অসমের আহতগুড়িতে মোষের লড়াই। শুক্রবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।

এক দিকে আদালতের আদেশ, অন্য দিকে অমঙ্গলের আশঙ্কা এ নিয়ে সংশয় ছিল অসমে। কয়েকশো বছরের পরম্পরা ভেঙে মাঘ বিহুতে হাজোর বুলবুলির লড়াই বন্ধ হলেও, নগাঁও ও মরিগাঁওয়ে মোষের লড়াই হল। মরিগাঁওয়ের আহতগুড়িতে পুলিশ-প্রশাসনের চাপে মোষ-যুদ্ধ বন্ধ হওয়ায় উজানি-নামনি অসমে সড়ক ও রেল লাইনে অবরোধ করল ক্ষুব্ধ জনতা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে হাজোয় বুলবুলির লড়াই শুরু করে মুঘলরা। ভোগালি বিহুর দিন মণিকূট পাহাড়ের মাধব মন্দির চত্বরে লড়াই হয়। তার ১২ ঘণ্টা আগে বুলবুলিদের বিশেষ মাদক খাওয়ানো হয়। শ’তিনেক ক্ষুধার্ত পাখি লড়াইয়ে নামত। বেঁচে থাকা পাখিগুলিকে ফের ছেড়ে দেওয়া হত। অন্য দিকে, প্রায় তিনশো বছর ধরে অসমে চলছে মোষের লড়াই।

অসমের ওই দু’রকম লড়াইয়ের বিরুদ্ধে পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। আদালত জানায়, দেশের কোথাও মনোরঞ্জনের জন্য প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া চলবে না। কর্নাটকের কাম্বালা ও তামিলনাড়ুর জালিকাট্টু বলদ-যুদ্ধ তার জেরে বন্ধ হয়। কেন্দ্রীয় বন্যপ্রাণী কল্যাণ পরিষদের তরফে অসম সরকারকে বিহুর সময় পশু-পাখির লড়াই বন্ধ করতে বলা হয়েছিল।

Advertisement

সরকারি সূত্রে খবর, হাজোয় প্রায় ২০০টি বুলবুলির মালিক লড়াইয়ের জন্য নাম জমা দিয়েছিলেন। আহতগুড়িতে নথিভুক্ত হয় ৪৫টি মোষের নাম। রাজ্য সরকারের নির্দেশ পেয়ে দুই উৎসব কমিটিরই মাথায় হাত পড়ে। লড়াই ঘিরে জমে ওঠে মেলা। বিজ্ঞাপনও আসে। তা বন্ধ হলে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা।

তবে হাজো মন্দির কর্তৃপক্ষ এলাকার লোকেদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বছর বুলবুলির লড়াই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। আহতগুড়ির উৎসব কমিটির তরফে জানানো হয়, তারা মোষের লড়াইয়ের আয়োজন করবে না। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ তা করলে তার দায় কমিটি নেবে না। কমিটির সদস্যদের একাংশ জানান, পাল্টা আবেদন নিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বছরে এক বার মোষদের লড়াই করিয়ে তাদের তেজ কমিয়ে দিতে হয়। না হলে সেগুলি মানুষ ও গবাদি পশুকে আক্রমণ করতে পারে।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ মোষ নিয়ে ময়দানে যাওয়ার চেষ্টা করেন কয়েক জন। পুলিশ তাঁদের আটকায়। ক্ষুব্ধ জনতা মোষের প্রতিমূর্তি নিয়ে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধ করা হয় রেল লাইন। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, লড়াইয়ে কোনও মোষের মৃত্যু হয় না। এই লড়াই বন্ধ করতে হলে অন্য জায়গায় বলি ও প্রাণীহত্যা রুখতে হবে। বিকেলের দিকে রেল ও সড়ক অবরোধ ওঠে। এর পর আচমকা কয়েক জন আহতগুড়ির মাঠে নেমে মোষের লড়াই শুরু করিয়ে দেন।

তবে, মরিগাঁওয়ের বাসাগুড়ি ও নগাঁও জেলার কুয়ামণিতে ঐতিহ্য মেনেই মোষের লড়াই হয়। কুয়ামণিতে দুপুর ১টা ও বাসাগুড়িতে সকাল ১১টা থেকে ওই লড়াই চলে। দু’জায়গার উৎসব কমিটি জানায়, তারা প্রশাসনের তরফে কোনও নির্দেশ পায়নি।

তাই পরম্পরা মেনেই লড়াই চলবে। রাজ্যের অনেক জায়গায় মোরগের লড়াইও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন