জলভরা মেঘের ফাঁক গলে আসা টুকটাক রোদ্দুরই সপরিবার দুগ্গা ঠাকুরের গায়ে মাখিয়ে নিচ্ছেন গুয়াহাটির পটুয়ারা। কিন্তু, বৃষ্টির দাপটে নামনি অসমে পুজোর আয়োজন আপাতত শিকেয়।
ঠিক একই রকম হাল পড়শি রাজ্য মেঘালয়েরও।
অসমের কোথাও বেলুড় মঠ, পঞ্চমহেশ্বর, কৈলাস, লালকেল্লার আদলে মণ্ডপ গড়ে একে অন্যেকে টেক্কা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় ছিলেন পুজোকর্তারা। ২০ সেপ্টেম্বর আচমকা সেই কর্মযজ্ঞে জল ঢাললেন ‘বরুণদেব’। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে মাটি হতে বসেছে সব আয়োজন। বন্যার জলে রাজ্যের অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন গোয়ালপাড়া। ধুবুরি, কামরূপ, বঙাইগাঁও, লখিমপুর, নলবাড়ি, শোণিতপুর, উদালগুড়ি, বরপেটাতেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্তব্ধ পুজোর কাজকর্ম।
সব মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ গৃহহীন। ছ’দিন পরের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি দূর, খাবার-জল-আশ্রয়ের অভাবে বেঁচে থাকাই দায় হয়েছে তাঁদের সকলের। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। মেঘালয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেখানে ইতিমধ্যেই ৫০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গোয়ালপাড়ায় উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলি দাহ করার চিলতে জমিও মিলছে না।
কোকরাঝাড়, বঙাইগাঁওয়ের বাঙালিপ্রধান এলাকা, অসম লাগোয়া পশ্চিম গারো পাহাড়ও পুজোর আমেজ হারিয়েছে।
শিলঙে গত দু’দিনে গড়ে প্রায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাল্লা দিয়ে নামছে ধস।
এরই মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে গুয়াহাটির পুজোকর্তাদের। দু’দিন ধরে আবহাওয়া সামান্য ভাল হওয়ায় দিনরাত এক করে প্রতিমার কাজ চলছে। মেরামতি চলছে মণ্ডপের। কারণ বৃষ্টিতে কোনও পুজো প্রাঙ্গনের কৈলাস পর্বত গলে গিয়েছে, কোথাও মাঠে জমেছে এক হাঁটু থকথকে কাদা।
শিলচরেও মাথায় হাত উদ্যোক্তাদের। কয়েক দিন আগে ছিল উপনির্বাচন। তার পর শুরু হল একটানা বৃষ্টি। বিজ্ঞাপন, চাঁদা আদায়, মণ্ডপের কাজ তাতেই থমকে গিয়েছে। পুজোতেও আকাশের মুখ এমন ভারী থাকবে কি না, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন সকলে। আবহবিদরা এখনও পর্যন্ত আশার কথা শোনাতে পারেননি। প্রতিযোগিতার লড়াই ভুলে তাই এক জোট হয়েছেন পুজোকর্তারা।
তাঁদের বিপক্ষে এক জনই বৃষ্টির দেবতা বরুণদেব!
কমিটির লোকজন বলছেন, ভোটের সময়ে পুজোর কাজ কার্যত বন্ধ ছিল। বিভিন্ন দলের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন ক্লাবগুলির কর্তা, সদস্যরা। ১৬ সেপ্টেম্বর ভোটগণনা শেষ হওয়ার পর, পুজোর কাজে নামতে না নামতেই বৃষ্টিতে সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। শহরের কয়েকটি এলাকায় জল জমে যাওয়ায় চাঁদা তুলতে সমস্যা হচ্ছে। এগোচ্ছে না মণ্ডপ নির্মাণের কাজ।
মহালয়ায় বাতিল করতে হয়েছে প্রভাতফেরি, মঙ্গলঘট নিয়ে শোভাযাত্রা, চণ্ডীপাঠের আসর।
এ দিকে, পুজোয় আগরতলায় কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করছে ত্রিপুরা পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসছে সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার। রাজ্য পুলিশের ডিআইজি নেপালচন্দ্র বলেন, ‘‘পুজোর সময় সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পার্বত্য জঙ্গল এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে টিএসআর বাহিনী।”