বিস্ফোরণে সিমির হাত দেখছেন গোয়েন্দারা

বেঙ্গালুরুর চার্চ স্ট্রিটে বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। রবিবার বেঙ্গালুরুতে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে বিস্ফোরণে নিহত হন ভবানী বালা নামে এক মহিলা। জখম তিন জন। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের ধারণা, এর পিছনে রয়েছে সিমি। কেন গোয়েন্দাদের এমন মনে হচ্ছে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:০৬
Share:

বেঙ্গালুরুর চার্চ স্ট্রিটে বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।

Advertisement

রবিবার বেঙ্গালুরুতে একটি রেস্তোরাঁর বাইরে বিস্ফোরণে নিহত হন ভবানী বালা নামে এক মহিলা। জখম তিন জন। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের ধারণা, এর পিছনে রয়েছে সিমি।

কেন গোয়েন্দাদের এমন মনে হচ্ছে?

Advertisement

রাজ্যের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, যে ভাবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) দিয়ে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে তা ব্যবহারের নজির রয়েছে এক মাত্র সিমির সদস্যদের। আজ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এস সিদ্দারামাইয়া বলেন, “আমাদের অনুমান মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া জেল থেকে সিমির যে সদস্যরা পালিয়ে গিয়েছিল, তারাই সম্ভবত কর্নাটকে ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।”

অন্য দিকে, ‘লেটেস্ট-আবদুল’ নামে সোমবারই একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ঘটনার দায় স্বীকার করে টুইট মিলেছে বলে বেঙ্গালুরু পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ যদিও এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ।

কেন্দ্রের গোয়েন্দারাও মনে করছেন, এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সিমি। আগেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছিল যে, গত বছর জেল থেকে পালানোর পরে সিমির সদস্যরা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। সংগঠনকে মজবুত করা ছাড়াও সংগঠনের প্রভাব বাড়াতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্ফোরণের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাদের। এর মধ্যে দুই জঙ্গিকে কিছু দিন আগে বেঙ্গালুরুতে দেখাও যায়। গোয়েন্দাদের আর একটি সূত্র বলছে, ওই দুই জঙ্গি যে বেঙ্গালুরু থেকে হায়দরাবাদে একাধিক বার যাতায়াত করেছিল, সেই তথ্যও এসেছিল তাদের হাতে। সম্প্রতি হায়দরাবাদের করিমনগরের একটি ব্যাঙ্ক লুঠের পিছনেও ওই দুই সিমি জঙ্গির হাত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, লুঠের টাকা এ দেশে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহারকরা হচ্ছে।

এর আগে পুণে ও চেন্নাই স্টেশনে আইইডি ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল সিমি। এখন বেঙ্গালুরুর বিস্ফোরণ বিশ্লেষণ করে তিনটি ঘটনার মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ওই তিনটিই ছিল নিম্ন ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি দিয়ে ঘটানো ছোটখাটো বিস্ফোরণ।

কিন্তু বারবার এমন ছোটখাটো বিস্ফোরণ কেন ঘটাচ্ছে সিমি?

গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা, সিমির সদস্যরা এ দেশে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) বা আল কায়দার শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। এখন আইএম নেতা ইয়াসিন ভটকল, তেহসিন আখতারের মতো তাদের সহযোগীরাও ধরা পড়ে যাওয়ায় বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটানোর মতো কোমরের জোর তাদের নেই বলেই গোয়েন্দাদের একাংশের অভিমত। এ ছাড়াও রয়েছে পুলিশের লাগাতার ধরপাকড়। নতুন ক্যাডারের অভাবেও ভুগছে সংগঠনটি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই সব কারণে দক্ষ বোমা-বিশেষজ্ঞের অভাব দেখা দিয়েছে সিমিতে। তাই এমন ছোটখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। সেই সঙ্গে এই ভাবে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটানোর মহড়াও দিচ্ছে।

আজ জরুরি বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ আইবি ও র-এর শীর্ষ কর্তারা। পরে রাজনাথ সিংহ বলেন, “বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র একসঙ্গে কাজ করছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।” একই সঙ্গে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বেঙ্গালুরুর সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্ষশেষের রাতে বিভিন্ন পানশালা ও ক্লাবের অনুষ্ঠানের সময়সীমা কমানোর বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন