বদরপুর-আগরতলা মিটার গেজ ট্রেনের অন্তিম যাত্রা

অসম-ত্রিপুরার মানচিত্রে ‘ইতিহাস’ হল মিটারগেজ ট্রেন। আজ এক দিকে, করিমগঞ্জ স্টেশন থেকে শেষ বারের মতো আগরতলার পথে যাত্রা করল যাত্রীবাহী মিটারগেজ ট্রেনটি। অন্য দিকে, আগামী কাল আগরতলা থেকে করিমগঞ্জের দিকে রওনা দিয়েই শেষ হবে মিটার গেজের চলাচল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ ও আগরতলা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

বিদায়। মিটারগেজ ট্রেনকে বিদায় জানানো হচ্ছে। শনিবার করিমগঞ্জ স্টেশনে শীর্ষেন্দু সী-র তোলা ছবি।

অসম-ত্রিপুরার মানচিত্রে ‘ইতিহাস’ হল মিটারগেজ ট্রেন।

Advertisement

আজ এক দিকে, করিমগঞ্জ স্টেশন থেকে শেষ বারের মতো আগরতলার পথে যাত্রা করল যাত্রীবাহী মিটারগেজ ট্রেনটি। অন্য দিকে, আগামী কাল আগরতলা থেকে করিমগঞ্জের দিকে রওনা দিয়েই শেষ হবে মিটার গেজের চলাচল।

১০টি বগি নিয়ে মিটারগেজ ট্রেনের ‘শেষ যাত্রা’ দেখতে করিমগঞ্জ রেল স্টেশনে উপচে পড়ে ভিড়। অনেকেই অন্তিম যাত্রার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন। এমনকী করিমগঞ্জ রেল বিভাগে কর্মরত জনৈক কর্মী প্রণাম করে ট্রেনটিকে বিদায় জানান।

Advertisement

আজ সকাল ৯.৪০ মিনিটে আগরতলার উদ্দেশে যাত্রা করে ট্রেনটি। স্বাধীনতার আগে করিমগঞ্জে রেল লাইন স্থাপন করেছিল তত্কালীন ব্রিটিশ সরকার। করিমগঞ্জের সঙ্গে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশেরও যোগাযোগ ছিল ট্রেনের মাধ্যমে। করিমগঞ্জ শহরের প্রবীণ নাগরিক রথীন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে ট্রেন চালু হওয়ার আগে করিমগঞ্জের মানুষ দেখেছিলেন হয়েছিল বাষ্পচালিত ট্রেন। কালের প্রবাহে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের জায়গা নেয় ডিজেল ইঞ্জিন। আজ সেই ডিজেল ইঞ্জিন চালিত মিটার গেজ ট্রেনটিও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল।’’

১ অক্টোবর থেকে করিমগঞ্জ-আগরতলা রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে ৬ মাসের জন্য মেগাব্লকের কাজে হাত দিচ্ছে রেল বিভাগ। তাই আজ এই লাইনে শেষবারের মত চলাচল করল এম জি যাত্রাবাহী ট্রেন। ২০১৫-র স্বাধীনতা দিবসের আগেই গুয়াহাটি-বদরপুর, গুয়াহাটি-শিলচর রুটে ব্রডগেজ ট্রেন চলার কথা ছিল। সিআইএসএফ ইন্সপেকশনও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বরাকের জনগণ প্রায় প্রতিদিনই ভাবছেন, এই বুঝি চালু হল ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ট্রেন। কিন্তু প্রতি মাসেই তা পিছিয়ে পড়ছে। রেল কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, যাত্রী নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁরা একশো ভাগ নিশ্চিত না হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে না। তবে এই লাইনে মালগাড়ি চলাচল করছে।

তবে এই ঘটনা জেরে, করিমগঞ্জ-আগরতলা রুটে ৬ মাসের জন্য মেগাব্লক নেওয়া হলেও সত্যি সত্যি ৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। কারণ অসমের ডিমাহাসাও এলাকার মতো ত্রিপুরাতেও কিছু পাহাড়ি এলাকা রয়েছে। তবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের উপর বরাক-সহ করিমগঞ্জের মানুষের যথেষ্ট আস্থা। রেল যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ, কিন্তু রাজ্য সরকার চাপ সৃষ্টি করলে সেই কাজে অনেকটাই গতি আসবে বলে তারা মনে করে।

আজ থেকে রেললাইন বন্ধ হওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগই এখন একমাত্র ভরসা ত্রিপুরার। তাই ত্রিপুরা সরকার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্রডগেজ লাইন চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ রাখবে বলেই আশাবাদী বরাকের জনগণ।

উত্তর-পূর্বাঞ্চল ফ্রন্টিয়ার রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নৃপেন ভট্টাচার্য জানান, ‘‘আনুষ্ঠানিক ভাবে আজই শেষ হল মিটার গেজের চলাচল। কাল থেকেই ব্রড গেজের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগরতলা স্টেশনের সামনে একটি মিটার গেজ ট্রেনের ইঞ্জিন দর্শনার্থীদের জন্য রেখে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ দিকে, বদরপুর থেকে আগরতলা ভায়া করিমগঞ্জ মিটার গেজ থেকে ব্রড গেজ লাইনে পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে। ছ’মাসের মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে রেল কর্তাদের দাবি। নৃপেনবাবু বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই বদরপুর থেকে আগরতলা পর্যন্ত ব্রড গেজের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন