বরখাস্ত কুরেশি, মিজোরাম কি রাজ্যপালদের আঁস্তাকুড়

এ যেন ব্রিটিশ জমানার সাজা-এ-কালাপানি! দ্বীপান্তরে পাঠাও, তার পর সেখানে মৃত্যুদণ্ড দাও! নরেন্দ্র মোদী জমানায় আন্দামান ও মিজোরাম যেন এই সূত্রেই কোথাও মিলে যাচ্ছে! মিজোরামের রাজ্যপাল পদ থেকে আজ বরখাস্ত করা হল কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা আজিজ কুরেশিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

আজিজ কুরেশি।

এ যেন ব্রিটিশ জমানার সাজা-এ-কালাপানি! দ্বীপান্তরে পাঠাও, তার পর সেখানে মৃত্যুদণ্ড দাও! নরেন্দ্র মোদী জমানায় আন্দামান ও মিজোরাম যেন এই সূত্রেই কোথাও মিলে যাচ্ছে!

Advertisement

মিজোরামের রাজ্যপাল পদ থেকে আজ বরখাস্ত করা হল কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা আজিজ কুরেশিকে। মিজোরামের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে। কুরেশি এর আগে উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন। তাঁকে মাস খানেক আগেই মিজোরামে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। রাজ্যপাল পদ থেকে বরখাস্ত করে কুরেশিকে নতুন কোনও দায়িত্ব দেয়নি সরকার।

কুরেশিকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা সরাসরির প্রশ্ন না তুললেও দু’টি প্রশ্ন উঠে এসেছ এ নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এখন বিহার ও মিজোরামেরও অতিরিক্ত দায়িত্বে। দেশের মোট ১০টি রাজ্যে স্থায়ী কোনও রাজ্যপাল নেই বর্তমানে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সেগুলির ভার দিয়ে রাখা হয়েছে অন্যান্য রাজ্যের রাজ্যপালদের হাতে। আইনি বাধা না থাকলেও প্রশাসনিক কাজকর্মের দিক দিয়ে এটা যে বাঞ্ছনীয় নয়, শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরের নেতারাই ঘরোয়া আলোচনায় তা স্বীকার করে নিচ্ছেন।

Advertisement

দ্বিতীয় প্রশ্নটি সরাসরি মোদীর উদ্দেশে। কেশরীনাথকে নিয়ে আট মাসের মধ্যে মিজোরাম মোট সাত জন রাজপালকে দেখল। কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, সরকার পুবে তাকাও নীতির কথা বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও বারবার ঘোষণা করছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ঘটাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অথচ মিজোরামকে বারবার রাজ্যপালদের আস্তাকুঁড় হিসেবে ব্যববহার করে কোন বার্তা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?

কুরেশির প্রতি যেটা করা হল, ছ’মাস আগে ঠিক সেটাই ঘটেছিল কংগ্রেস আমলে নিযুক্ত গুজরাতে রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়ালের ক্ষেত্রে। তাঁকেও গুজরাত থেকে সরিয়ে প্রথমে মিজোরামে পাঠানো হয়েছিল। তার পর এক মাসের মধ্যে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। একই ভাবে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল কে শঙ্করনারায়ণকে মিজোরামে পাঠাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও সরকারের কৌশল আঁচ করে নিজের মান বাঁচাতে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শঙ্করনারায়ণন রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইউপিএ জমানায় নিযুক্ত রাজ্যপালদের মধ্যে এখনও সসম্মানে সেই পদে থেকে যাওয়াদের অন্যতম হলেন দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার কে কে পল। তিনি এখন উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল।

সরকারি সূত্রে খবর, কেন্দ্রে সরকার গঠনের পরপরই ইউপিএ জমানায় নিযুক্ত রাজ্যপালদের একে একে সরাতে সচেষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা যাতে ভালয় ভালয় সরে যান সে জন্য তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী একে একে তাঁদের সকলকে ফোন করে অনুরোধ করেন। বেঁকে বসেন শঙ্করনারায়ণন, কমলা বেনিওয়াল, আজিজ কুরেশি, শীলা দীক্ষিত, বীরেন্দ্র কাটারিয়ারা। তবে সরকারের মতিগতি বুঝে সসম্মানে ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল পদ থেকে সরে দাঁড়ান প্রাক্তন প্রতিরক্ষাসচিব শেখর দত্ত। গোড়ায় আপত্তি করলেও দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করার পর কেরলের রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেন শীলা দীক্ষিতও। কিন্তু আজিজ কুরেশি সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। শঙ্করনারায়ণনও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল পদে থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। কমলা বেনিওয়ালের সঙ্গে মোদীর সংঘাত চলছিল তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই। মোদী কেন্দ্রে আসার পর রাজ্যপালদের মধ্যে প্রথম সরানো হয় বেনিওয়ালকেই। প্রথমে মিজোরামে, পরে রাজ্যপালের পদ থেকেই। এর পর পুদুচেরির রাজ্যপাল পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্র কাটারিয়াকে।

আপাতত ওই তালিকার সর্বশেষ নামটি হল আজিজ কুরেশি। তাঁকে বরখাস্ত করা নিয়ে কংগ্রেস আজ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি কংগ্রেস। ঘরোয়া মহলে অবশ্য দলের কোনও কোনও নেতা বলছেন, রাজ্যপালদের মিজোরামে টেনে নিয়ে গিয়ে বরখাস্ত করছেন মোদী। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা ছাড়া কিছু নয়। তবে কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতাই কিন্তু মনে করছেন, এই রাজ্যপালদের উচিত ছিল নিজের মর্যাদা রক্ষায় নিজে থেকেই সরে দাঁড়ানো। কেন্দ্রে এখন বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। তারা যাঁদের সঙ্গে কাজ করতে সহজ বলে মনে করবে, তাঁদেরই রাজ্যপাল করবে। এবং এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে জেদাজেদি করাটা অনুচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন