ভোট টানতে বাংলায় প্রচার ঝাড়খণ্ডে

ভোটের হাওয়া পালে টানতে বাংলা ভাষাও বড় ‘ভরসা’ ঝাড়খণ্ডের রাজনেতাদের! ইস্পাতনগরী জামশেদপুরই হোক বা রাঁচি, হাজারিবাগ থেকে রাজ্যের উত্তরের সাহেবগঞ্জ, দুমকা, পাকুড়, রাজমহল বাঙালি, বঙ্গভাষী ভোটার ছড়িয়ে রয়েছেন সব প্রান্তে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, ঝাড়খণ্ডে এখন বাঙালি ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ। জন্মসূত্রে বাঙালি নন, কিন্তু বাংলা ভাষায় সাবলীল বঙ্গভাষীর সংখ্যাটাও কম নয়।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

জামশেদপুরে ভোটের প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

ভোটের হাওয়া পালে টানতে বাংলা ভাষাও বড় ‘ভরসা’ ঝাড়খণ্ডের রাজনেতাদের!

Advertisement

ইস্পাতনগরী জামশেদপুরই হোক বা রাঁচি, হাজারিবাগ থেকে রাজ্যের উত্তরের সাহেবগঞ্জ, দুমকা, পাকুড়, রাজমহল বাঙালি, বঙ্গভাষী ভোটার ছড়িয়ে রয়েছেন সব প্রান্তে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, ঝাড়খণ্ডে এখন বাঙালি ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ। জন্মসূত্রে বাঙালি নন, কিন্তু বাংলা ভাষায় সাবলীল বঙ্গভাষীর সংখ্যাটাও কম নয়। ভোট এলে তাই ওই ভাষাভাষী নাগরিকদের দিকে বাড়তি নজর দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। কোথাও বাঙালি প্রার্থীদের লড়াইয়ে নামানো হয়, কোথাও জনসংযোগ করতে আসরে নামেন বঙ্গভাষী নেতারা।

আজ ঘাটশিলার প্রচারসভায় যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীতে ভিড় জমালেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডে বাংলা দ্বিতীয় রাজভাষা। কিন্তু ওই ভাষায় শিক্ষার পরিকাঠামো একেবারে বেহাল। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি হয় পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে, না হয় তালাবন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনও দলের নেতাদের তা নিয়ে সারা বছর হেলদোল নেই। ভোট এগোলেই ছবিটা বদলে যায়। বিজেপি, জেএমএম, কংগ্রেস বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সব দলের প্রচারেই তখন বাংলা ভাষার উন্নয়নের এক রাশ প্রতিশ্রুতি।

আগামী ২ ডিসেম্বর রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটে জামশেদপুর, চাইবাসা, ঘাটশিলা, বহরাগোড়া, পোটকা, জুগসলাইয়ের মতো ২০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। ওই আসনগুলির আওতায় থাকা গ্রামীণ এলাকায় বাঙালি, বঙ্গভাষী লোকেদের আধিক্য বেশি। প্রার্থীরা সেখানে বাংলায় কথা বললেই ভোট-বাক্সে বাজিমাত করার সুযোগ থাকে। লোকসভা নির্বাচনে তা টেরও পেয়েছে বিজেপি। বঙ্গভাষী জেএমএম নেতা বিদ্যুৎবরণ মাহাতোকে নিজেদের শিবিরে নিয়ে এসে জামশেদপুর আসন দখল করেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।

বিধানসভা ভোটে একই ‘ফর্মূলা’ ব্যবহার করতে পর পর ৯টি জনসভার জন্য ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে। এ দিন বহরোগোড়ার চাকুলিয়া, ঘাটশিলার সার্কাস ময়দান, জুগসলাইয়ের পরশুডিহি ও করণডিহিতে বিজেপি-আজসু জোট প্রার্থীদের সমর্থনে জনসভা করেন বাবুল। ঘাটশিলায় বক্তৃতার শুরুতেই গেয়ে ওঠেন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় মা, মাসিমা, কাকিমাদের সঙ্গে এখানে বেড়াতে আসতাম।” বাংলা-হিন্দি মেশানো বক্তব্যে আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বলেন, “জোট রাজনীতিই হোক বা সরকার, তা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। এতে রাজ্যের উন্নয়ন থমকে যায়। ঠিক যেমন হয়েছে ঝাড়খণ্ডে।” বিকেলে জামশেদপুরের রাজপথে জিপ, মোটরবাইকে ঘুরে তিনি লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন।

বাঙালি ভোট ‘দখলের’ প্রতিযোগিতায় জিততে মরিয়া জেএমএম, কংগ্রেসও। বহরাগোড়ায় কাবু দত্তকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। গিরিডির বগোদরে প্রার্থী করা হয়েছে পূজা চট্টোপাধ্যায়কে।

বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় জনতার মন জিততে মাঠে নেমেছেন বিজেপির আঞ্চলিক ভাষা কমিটির আহ্বায়ক শিবলাল ঘোষ। তিনি বলেন, “এটা ভুললে চলবে না, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার আমলেই ঝাড়খণ্ডে বাংলা দ্বিতীয় রাজভাষার মর্যাদা পায়।” জামশেদপুরে বিজেপির দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী রঘুবর দাস ও সরযূ রাইয়ের জন্য বাংলায় প্রচার করতে কলকাতা থেকে গিয়েছেন দলীয় নেতা অশোক সরকার। হাজারিবাগের বাঙালি-প্রধান এলাকাতেও তিনি প্রচার করবেন। শিবলালবাবু ঘুরবেন দুমকা, পাকুড়, রাজমহলে।

মোদী শিবিরের ছক টের পেয়ে বাঙালি এলাকায় নতুন ধাঁচে প্রচার চালাচ্ছে জেএমএম। দলের মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য জনসংযোগের কৌশল ঠিক করছেন। জনসভায় বাংলায় কথা বলতে সে সব এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে রাঁচির জেএমএম প্রার্থী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজিকে। সুপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘কোলহান এলাকায় বিজেপির প্রত্যেক চালের পাল্টা দেওয়া হবে।” গিরিডিতে একই কারণে প্রচারে নেমেছেন জেএমএম জেলা সভাপতি পঙ্কজ তা। ঝাড়খণ্ডে বাঙালিদের ঘিরে তাই আরও সরগরম ভোটের হাওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন