ভোট-ময়দানে মোদীর অস্ত্র প্রসার ভারতীও

প্রসার ভারতীর স্বশাসনের বিতর্ককেও এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট-অস্ত্র করে নিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, “জাতীয় চ্যানেলকে পেশাদারিত্বের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে দেখে দুঃখ হচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

প্রসার ভারতীর স্বশাসনের বিতর্ককেও এ বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট-অস্ত্র করে নিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মোদীর মন্তব্য, “জাতীয় চ্যানেলকে পেশাদারিত্বের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে দেখে দুঃখ হচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে জরুরি অবস্থার স্মৃতি উস্কে দিতেও চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “জরুরি অবস্থার সময় যে ভাবে বাক্-স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হনন করা হয়েছিল, তা বিভীষিকা। সে সব দিন গণতন্ত্রের কালো অধ্যায়।”

Advertisement

কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মোদীর আজকের এই আক্রমণের জন্য গত কালই তাঁর ব্যাটের সামনে কার্যত বল ঠেলে দিয়েছিলেন প্রসার ভারতীর বর্তমান সিইও জহর সরকার। সম্প্রতি দূরদর্শনে মোদীর একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচারে দেরি করা হয়। তার পর সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ কাটছাঁটও করা হয়। সেই প্রসঙ্গেই সমালোচনার মুখে পড়ে গত কাল জহর সরকার প্রসার ভারতীর বাকি সদস্যদের চিঠি দিয়ে বলেন, গত দু’বছর ধরে বেতার ও দূরদর্শনের স্বশাসন চেয়ে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যাপারে ‘তরুণ মন্ত্রী’ মণীশ তিওয়ারিকে দায়ী করেন সিইও। বলেন, কার্যকরী স্বশাসনের বিষয়টি মন্ত্রকের কর্তারাও তাঁকে বোঝাতে পারেননি। আর তাতেই বারবার বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছে প্রসার ভারতীকে।

আজ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবসে জহর সরকারের সেই মন্তব্যকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন মোদী। সকালেই টুইটারে কেন্দ্রের শাসক দলকে নিশানা করেন। এর সঙ্গেই বিজেপি নেতারা দাবি করেন, ক্ষমতায় এলে প্রসার ভারতীকে স্বশাসন দেবে বিজেপি।

Advertisement

বিতর্কের মধ্যেই জহরবাবুর অভিযোগ খারিজ করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি। নাম না করে কাল তাঁকে ‘তরুণ মন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন প্রসার ভারতীর সিইও। আজ মণীশও জহর বাবুর নাম না করে বলেছেন, “বর্ষীয়ান আমলার সম্পর্কে মন্তব্য করব না। এটুকু বলতে পারি, সংসদে আইন পাশ করে প্রসার ভারতীর স্বশাসনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক প্রসার ভারতীর থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই চলে।”

দূরদর্শনের ডিরেক্টর জেনারেল এস এম খানও আজ দাবি করেছেন, মোদীর সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ হয়নি। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দূরদর্শন। সম্প্রচার করতে একদিন অপেক্ষা করা হয়েছিল ঠিকই, তবে তা একেবারেই খবরের ভারসাম্য রক্ষার কারণে। ভাবা হয়েছিল যাতে ওই সময়ের মধ্যে যদি শাসক দলেরও কোনও বড় নেতার সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। সাক্ষাৎকারের যেটুকু কাঁটছাট করা হয়েছিল তা-ও একেবারেই কারিগরি প্রয়োজনেই।

তবে এই বিতর্কের মধ্যে আজ প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন্দ্রে নতুন সরকার এলেও কি প্রসার ভারতীর প্রকৃত স্বশাসন কায়েম করা সম্ভব? বিশেষ করে বিজেপি সেই দাবি জানানোয় কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। ঘরোয়া আলোচনায় সরকারের একাধিক আমলা এখন বলছেন, এন ডি এ-র সময়েও যেমন প্রসার ভারতীর পেশাদার স্বাধীনতা ছিল না, তেমনই ইউ পি এ জমানাতেও একই পরিস্থিতি রয়েছে। সম্ভবত ভবিষ্যতেও এমনই অবস্থা থাকবে। এর কারণ নিহিত রয়েছে প্রসার ভারতীর গঠনতন্ত্রেই। প্রসার ভারতীর সিইও নিয়োগ করে সরকার। প্রসার ভারতীতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মীই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে ডেপুটেশনের ভিত্তিতে কাজ করতে যান। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকেও দূরদর্শন ও বেতারের সংবাদ পরিবেশন ও বিভিন্ন কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করা হয়। এসব অতীতেও হয়েছে, বর্তমানেও পুরোদস্তুর রয়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিতর্ক নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের ভিতরেই জহর সরকার জানান, মোদীর সাক্ষাৎকার বিতর্কে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না, সোমবার তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন