ভূত তাড়াতে নারায়ণ পুজো, চণ্ডীপাঠ অফিস-চত্বরে

ভূতের ভয়ে তটস্থ ত্রিপুরার নয়া বিধানসভা ভবন কমপ্লেক্সের কর্মীরা! অশরীরী বাসিন্দাদের তাড়াতে বামশাসিত ত্রিপুরার এই নতুন অফিস চত্বরে দিন কয়েক আগে চাঁদা তুলে সেখানে রীতিমতো শালগ্রাম শিলা এনে নারায়ণ পুজো করলেন বেশ কিছু কর্মী। বাম, অ-বাম ছিলেন দু’দলই। ভূতেদের তুষ্ট করতে ছিল চাল-কলা, ফল-বাতাসা। পুজোর পর শান্তিজল ছড়ানো হল গোটা দফতরের প্রতিটি তলায়, প্রতিটি ঘরে। হুলিয়া ছিল, কোনও কর্মী মোবাইলেও পুজোর ছবি তুলতে পারবেন না।

Advertisement

আশিস বসু

আগরতলা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

ভূতের ভয়ে তটস্থ ত্রিপুরার নয়া বিধানসভা ভবন কমপ্লেক্সের কর্মীরা!

Advertisement

অশরীরী বাসিন্দাদের তাড়াতে বামশাসিত ত্রিপুরার এই নতুন অফিস চত্বরে দিন কয়েক আগে চাঁদা তুলে সেখানে রীতিমতো শালগ্রাম শিলা এনে নারায়ণ পুজো করলেন বেশ কিছু কর্মী। বাম, অ-বাম ছিলেন দু’দলই। ভূতেদের তুষ্ট করতে ছিল চাল-কলা, ফল-বাতাসা। পুজোর পর শান্তিজল ছড়ানো হল গোটা দফতরের প্রতিটি তলায়, প্রতিটি ঘরে। হুলিয়া ছিল, কোনও কর্মী মোবাইলেও পুজোর ছবি তুলতে পারবেন না। সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে রবিবার পুজোর ব্যবস্থা করা হলেও, খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই রাজ্যে। কর্মীদের একাংশের সাফাই, সন্ধের পর বা ছুটির দিনে একা এই চত্বরে থাকতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই।

সরকারি দফতরে ভূতের ভয়ের গল্প নতুন কিছু নয়। খাস কলকাতা শহরের বুকে রাজ্যের সাবেক সচিবালয়, রাইটার্স বিল্ডিং-এর ভূতের গল্পের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। একেবারে চর্মচক্ষে ভূত দেখার ‘সাক্ষী’ তো খোদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তৃণমূলের এই মন্ত্রী তখন একেবারেই তরুণ। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্বে। দেশে তখন জরুরি অবস্থা। প্রত্যেক সংবাদপত্রকে পাতা তৈরি করে তা ছাপতে দেওয়ার আগে সরকারি প্রতিনিধিকে তা দেখিয়ে তাতে সরকারি ছাপ্পা লাগানো ছিল একেবারে বাধ্যতামূলক। সেই ছাড়পত্র দিতেন খোদ মন্ত্রী ও অফিসারেরা।

Advertisement

প্রতিদিন নিয়ম মতো অফিস সেরে মন্ত্রী বাড়ি ফিরতেন। তারপর রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে আটটা নাগাদ ফের আসতেন মহাকরণে। তাঁর ঘর ছিল মহাকরণের তিন তলায়। সুব্রতবাবুর মুখ থেকে বহুবার শোনা কাহিনি অনুযায়ী, ভিআইপি লিফটে করে তিনি তিনতলায় উঠেছেন। লিফট থেকে বেরিয়েই টানা অলিন্দ। সেখানে সাধারণভাবে পুলিশ পোস্টিং থাকে। আসতে যেতে তাঁরা মন্ত্রী-আমলাদের সেলাম ঠোকেন। লিফট থেকে বেরিয়ে সুব্রতবাবু এক পুলিশের মুখোমুখি। প্রতি-অভিবাদন করতে গিয়েই সুব্রতবাবুর চোখ আটকে যায় পুলিশের পায়ের দিকে। পা মাটিতে নেই। মাটি থেকে ফুট খানেক উপরে, হাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছেন ওই কনস্টেবল। কোনও মতে সুব্রতবাবু ঢুকে যান নিজের ঘরে। মন্ত্রীর ঘরে ডাক পড়ে সেন্ট্রাল গেটের পুলিশ অফিসারদের। জানতে পারেন, সে দিন তিনতলায় কাউকে পোস্টিং দেওয়া হয়নি। এরপর সুব্রতবাবু আর রাতে মহাকরণে আসেননি।

ব্রিটিশ আমলের মহাকরণের সঙ্গে ভূতের গল্প বেশ মানিয়ে যায়। কিন্তু ত্রিপুরার এই ভবন তো একেবারে সদ্য তৈরি! কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, দু’বছর আগে নতুন এই ভবনটি চালু হয়। নির্মাণের সময় মাটির তলা থেকে বেশ কয়েকটি নরকঙ্কাল উঠে আসে। চালু কথা, বিধানসভার লাগোয়া জিবি হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশগুলি পুঁতে দেওয়া হত ওই অঞ্চলের টিলা জমিতেই। শুধু তাই নয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সময় নিহত সৈনিকদের গণকবরও ছিল সেখানেই। তারই উপরে তৈরি হয় নতুন এই ভবন-চত্বর।

কর্মীদের একাংশের আতঙ্ক, অতৃপ্ত সে সব প্রেতাত্মাই এখন ঘুরছে ভবনের ঘরে, বারান্দায়! চর্মচক্ষে ‘কিছু’ দেখার সৌভাগ্য কারও না হলেও অনেকেরই মতে, একটা বিশেষ অনুভূতি তাঁদের অনেকেরই হয়েছে। ডানপন্থী-বামপন্থী সরকারি কর্মচারী সংগঠনের যৌথ মঞ্চের নেতা শৌভিক বর্ধন রায়ের কথায়, “নতুন ভবনে কাজকর্ম শুরু হওয়ার পর থেকে এখানকার ১৭ জন কর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন মারা যান। এতেই আতঙ্ক আরও জমাট বেঁধেছে।” তিনি জানান, “সেই কারণেই পুরোহিতের পরামর্শে ভূত তাড়াতে এখানে নারায়ণ পুজো এবং চণ্ডীপাঠের আয়োজন করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন