মাওবাদী হানার তদন্তে এনআইএ

বস্তারের ঘন জঙ্গলে মাওবাদী হামলায় ১৬ জনের মৃত্যুর তদন্তভার তুলে দেওয়া হল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-র (এনআইএ) হাতে। কিন্তু, এরই পাশাপাশি প্রশ্ন উঠল, গত বছরের ২৫ মে এই এলাকারই জিরম ঘাঁটিতে কংগ্রেস নেতাদের উপরে মাওবাদীদের প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার যে তদন্ত এনআইএ করছে, তার ফল কী দাঁড়াল?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৫০
Share:

বস্তারের ঘন জঙ্গলে মাওবাদী হামলায় ১৬ জনের মৃত্যুর তদন্তভার তুলে দেওয়া হল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-র (এনআইএ) হাতে। কিন্তু, এরই পাশাপাশি প্রশ্ন উঠল, গত বছরের ২৫ মে এই এলাকারই জিরম ঘাঁটিতে কংগ্রেস নেতাদের উপরে মাওবাদীদের প্রাণঘাতী হামলার ঘটনার যে তদন্ত এনআইএ করছে, তার ফল কী দাঁড়াল?

Advertisement

ছত্তীসগঢ়ে মঙ্গলবারের হামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান ও রাজ্য পুলিশের কর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জগদলপুরে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে আজ অবশ্য জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় জড়িতদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে এনআইএ। ওই ঘটনায় অভিযুক্তেরা ছত্তীসগঢ়ের কোনও জায়গায় ঘন জঙ্গলে রয়েছে। তাদের ধরতে ছত্তীসগঢ় পুলিশের সাহায্য নেওয়ার জন্য ওই তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুকমার টোঙ্গপালে তাকাবাদা গ্রামের কাছে মাওবাদীদের হামলার ঘটনার বদলা নেওয়া হবে বলেও আজ হুমকি দিয়েছেন শিন্দে। রাজ্যপাল শেখর দত্ত, মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামসেবক পাইকরা-কে সঙ্গে নিয়ে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিন্দে অবশ্য গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে নকশালপন্থীদের আনাগোনা এবং উপস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে গোয়েন্দা রিপোর্টও পাঠানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, “নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে যে সব নির্দেশিকা রয়েছে, গত বছর জিরম ঘাঁটির ঘটনার পরে তা যথাযথ ভাবেই মেনে চলা হয়। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে ভুল হয়ে গেলে এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে।”

Advertisement

বুধবার রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে পৌঁছেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কে বিজয় কুমার, রাজ্যের মুখ্যসচিব বিবেক আনন্দ, রাজ্য পুলিশের ডিজি এ এন উপাধ্যায়-সহ পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় অফিসারদের সঙ্গে। পরে জগদলপুর পৌঁছে আরও এক দফা বৈঠক হয়।

তবে, মঙ্গলবারের ঘটনার পরে মাওবাদীদের গতিবিধি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এক অফিসার জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে হামলা চালিয়ে মাওবাদীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দন্তেওয়াড়া ও নারায়ণপুর জেলার দিকে এগোচ্ছে। সাধারণ ভাবে জঙ্গলের রাস্তায় দিনে এক একটি দল ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার গতিবেগে এগোতে পারে। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, ওড়িশার কোরাপুট জেলা থেকে ৩৫-৪০ জনের একটি দল দিন কয়েক আগেই বস্তারে ঢোকে।

তারা প্রাথমিক ভাবে ঘাঁটি গাড়ে কোরাপুট ও বস্তারের সীমানায় কোলেং নামে এক গ্রামে। সেখান থেকে তারা পৌঁছয় সুকমার তাকাবাদা গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে ঘেরা এক এলাকায়। এই দলটি ঘটনাস্থলে ‘রেইকি’ করতে আসে ৯ মার্চ।

গোয়েন্দাদের এই তত্ত্ব সত্য হলে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। সেটি হল, ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধি মানেনি সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী। সুকমায় রাস্তা তৈরির কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিরাপত্তার ভারপ্রাপ্ত বাহিনী এই নিরাপত্তা বিধি মানলে মাওবাদীরা

এত নিখুঁত ভাবে অভিযান চালাতে পারত না বলেই মনে করছে রাজ্য পুলিশের একাংশ।

আজ ছত্তীসগঢ় পুলিশের ডিআইজি (গোয়েন্দা বিভাগ) দীপাংশু কাবরা আনন্দবাজারকে বলেন, “এখনও পর্যন্ত মাওবাদীদের দু’টি রুটের হদিস পাওয়া গিয়েছে। এই অভিযানে ভাগ নেওয়া একটি দল এসেছিল ওড়িশা-সুকমা রুটে। আর একটি দল দন্তেওয়াড়া-সুকমা রুট ধরে। জিরম ঘাটিতে নতুন মোবাইল টাওয়ার বসেছে। তা ছাড়া সুকমায় নতুন রাস্তাও তৈরি হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, ওই দু’টি জায়গাও মাওবাদীদের নিশানায় রয়েছে।” ইতিমধ্যেই জঙ্গলে চলাফেরা করায় অভ্যস্ত পুলিশ ও সিআরপিএফের যৌথ বাহিনী কৌশলগত তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-কে দেওয়ার পরে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা ঠিক কী হবে? রাজ্য পুলিশের আর এক কর্তা জানান, পুলিশ তার তদন্ত চালিয়ে যাবে।

তা ছাড়া, গত বছর জিরম ঘাঁটিতে নকশাল হামলার পরে এনআইএ-কে সাহায্য করেছিল রাজ্য পুলিশ। পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই সংস্থা তদন্ত চালায়। এ ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থাই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন