মুজফ্ফরনগরে মুখোমুখি মিয়াঁ-বিবি

পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য নয়, অধিকার বুঝে নেওয়ার দাবিতে এ বার পতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছেন সাহিদা বেগম। পতি আবার যে সে লোক নন।! উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের ডাকসাইটে সাংসদ। নাম কাদির রানা। এলাকার নামকরা বাহুবলী। অভিযোগ, খুন-জখম, তোলাবাজিতে যেমন হাত পাকিয়েছেন তেমনই হাওয়া বুঝে দল পাল্টাতেও ওস্তাদ তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:২৩
Share:

বিশ্বজিতের সঙ্গে মুজফ্ফরনগরের তৃণমূল প্রার্থী রাধিকা বালিয়ান (বাঁ দিকে) এবং উন্নাওয়ের প্রার্থী আয়েশা রহমান। ছবি: প্রেম সিংহ।

পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য নয়, অধিকার বুঝে নেওয়ার দাবিতে এ বার পতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামছেন সাহিদা বেগম।

Advertisement

পতি আবার যে সে লোক নন।! উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের ডাকসাইটে সাংসদ। নাম কাদির রানা। এলাকার নামকরা বাহুবলী। অভিযোগ, খুন-জখম, তোলাবাজিতে যেমন হাত পাকিয়েছেন তেমনই হাওয়া বুঝে দল পাল্টাতেও ওস্তাদ তিনি। রাষ্ট্রীয় লোক দল, সমাজবাদী পার্টির মতো ছোট-বড় নানা দল পাল্টে অবশেষে কাদিরের গত ছয় বছরের স্থায়ী ঠিকানা বহেনজি মায়াবতী। গত বছরের শেষে মুজফ্ফরনগরে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে যে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতেও কাদিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বিশেষ তদন্তকারী দল। ঘুরে এসেছেন জেলও। কিন্তু তাতে কী! জেতা আসন ধরে রাখতে আসন্ন নির্বাচনে কাদিরেই ভরসা রাখছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী।

বহেনজির ভরসা অটুট। কিন্তু বিবি! ভোটের আগে বিদ্রোহের ডাক দিয়ে বসেছেন তিনি। এলাকার অনুন্নয়নই তাঁর প্রচারের অঙ্গ হতে চলেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। উন্নয়নকে পাখির চোখ করেই স্বামীর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছেন সাহিদা। নির্দল প্রার্থী হিসেবে গত কাল মনোনয়নপত্রও পেশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। বর্তমান সাংসদের এই গৃহবিবাদ দেখে বিরোধীদের একাংশ উল্লসিত। কেউ বলছেন, কৌশলটা মন্দ নয়, দু’জনের যে-ই জিতুক, আসনটা বাড়িতেই থাকবে। অন্য দলের আবার বক্তব্য, এটা নিছকই গড়াপেটার খেলা। স্রেফ ডামি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে সাহিদাকে।

Advertisement

মিয়া-বিবির লড়াইটা আসলে ভোট পর্যন্ত গড়াবে কি না তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, স্বামীর নামে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ার মতো বেশ কিছু ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। চলছে তদন্তও। মনোনয়ন পেশের পর তা পরীক্ষার সময় কাদিরের নাম পাছে কমিশন বাতিল করে দেয়, সেই আশঙ্কা থেকেই বেগমকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন বিএসপির ওই সাংসদ। যাতে তিনি না পারলেও অন্তত ঘরের লোকই সংসদে পৌঁছতে পারেন। কাদিরের নাম বাতিল হলে বিএসপি সাহিদাকেই সমর্থন করবে বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা।

এই কেন্দ্রে ওই দু’জন ছাড়াও সংখ্যালঘু প্রার্থী রয়েছে আম আদমি পার্টির। এই কেন্দ্রের সাড়ে চার লক্ষ সংখ্যালঘু ভোট যদি তিন ভাগ হয় তবেই জয়ের আশা বাড়তে পারে সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল ও কংগ্রেসের হিন্দু প্রার্থীদের। নয়তো লড়াইটা যে বেশ কঠিন, মানছেন তাঁরাও।

মেরুকরণের রাজনীতিতে অভ্যস্ত উত্তরপ্রদেশের এই কেন্দ্রে জাঠ ভোট প্রায় তিন লক্ষ। এক সময়ে অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোক দলের প্রতিপত্তি থাকলেও গোষ্ঠী সংঘর্ষের বিভন্ন ঘটনার পরে প্রভাব বেড়েছে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপিরও। কিন্তু স্থানীয় বিধায়ক সঙ্গীত সোমের বদলে সঞ্জীব বালিয়ানকে টিকিট দেওয়ায় স্থানীয় বিজেপির একাংশ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ। অন্য দিকে বৈশ্য সমাজের লক্ষাধিক ভোটের ভরসায় পঙ্কজ অগ্রবালকে টিকিট দিয়েছে কংগ্রেস। এই জাতপাতের অঙ্ক মাথায় রেখেই স্থানীয় জাঠ ভোটের কথা ভেবে তৃণমূল রাধিকা বালিয়ানকে টিকিট দিয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, রাধিকার স্বামী সতেন্দ্র তৃণমূলের কর্মী। মেরঠ তৃণমূলের সভাপতি। উপরন্তু মুজফ্ফরনগরের ভূমিপুত্র। তাই সব বিবেচনা করেই তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু জেতার সম্ভবনা? রাধিকা বলেন, “কাদির পাঁচ বছর কোনও কাজ করেনি। উপরন্তু সংঘর্ষ বাঁধানোর অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে রাজ্যের শাসক সপা-র বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে যে ভাবে ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি হয়েছে তা সংখ্যালঘু বা জাঠ কোনও পক্ষই ভাল ভাবে নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে নতুন এক বিকল্প হিসেবে তৃণমূলকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি তৃণমূল ওখানে লড়াই করার পরিস্থিতিতে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন