মোদী-অমিতের পোস্টার ছিঁড়ে বেনজির বিক্ষোভ কর্মী-সমর্থকদের

দলের অন্দরে বেনজির ক্ষোভের মুখে পড়লেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। বিজেপি কেন্দ্রের মসনদ দখল করার পরে গত সাত মাস ধরে যা এক বারও হয়নি। উপলক্ষ, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। আগামিকালই মনোনয়ন পেশের শেষ দিন। আর এর মধ্যেই কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা থেকে প্রার্থী তালিকা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবল অসন্তুষ্ট দিল্লি বিজেপির কর্মীরা। যার জেরে আজ দিল্লি বিজেপি দফতরে দলের কর্মীরা কিরণ বেদীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। যে পোস্টারে কিরণ বেদীর সঙ্গেই ছিলেন মোদী-অমিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

দলের অন্দরে বেনজির ক্ষোভের মুখে পড়লেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। বিজেপি কেন্দ্রের মসনদ দখল করার পরে গত সাত মাস ধরে যা এক বারও হয়নি।

Advertisement

উপলক্ষ, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। আগামিকালই মনোনয়ন পেশের শেষ দিন। আর এর মধ্যেই কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা থেকে প্রার্থী তালিকা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবল অসন্তুষ্ট দিল্লি বিজেপির কর্মীরা। যার জেরে আজ দিল্লি বিজেপি দফতরে দলের কর্মীরা কিরণ বেদীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। যে পোস্টারে কিরণ বেদীর সঙ্গেই ছিলেন মোদী-অমিত। টিকিট বণ্টন নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তা আটকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

কেন এই অসন্তোষ? দিল্লি বিজেপির এক নেতা বলেন, “নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ এখন কংগ্রেসের ঘরানায় চলছেন। আলোচনা ছাড়াই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এবং সেটিই সকলকে মানতে হবে, যেমনটি হয় গাঁধী পরিবারে। এত বছর ধরে যাঁরা দলের জন্য কাজ করলেন, তাঁদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে পছন্দ-অপছন্দকেই বড় করে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

দলের একটি সূত্রের দাবি, দিল্লির নানা প্রান্তে এই বিক্ষোভের পিছনে আসলে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বিজেপিরই বেশ কিছু নেতা। এত দিন মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হবে বলে আশায় রাখা হয়েছিল দিল্লি বিজেপি সভাপতি সতীশ উপাধ্যায়কে। কিন্তু সতীশ ও তাঁর সহযোগী আশিস সুদের বিরুদ্ধে অরবিন্দ কেজরীবাল অনিয়মের অভিযোগ তোলায় তাঁদের টিকিটই দেওয়া হয়নি। এমন কী, মালব্য নগরে সতীশের পছন্দ উপেক্ষা করে প্রার্থী করা হয়েছে নন্দিনী শর্মাকে। এর পর নির্বাচনে আর কোনও কাজ না করার কথা ঘনিষ্ঠ মহলে জানান এই নেতারা। যে হর্ষবর্ধনের চিরাচরিত আসনে কিরণ বেদীকে প্রার্থী করা হয়েছে, তিনিও খুশি নন এই সিদ্ধান্তে।

বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। গতকাল প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় আটটি আসন ছেড়ে রাখা হয়েছিল। আজ রাতে ঘোষণা করা হয়, গতবারের মতোই শরিক অকালিকে চারটি আসন দেওয়া হবে। বাকি আসনের মধ্যে গ্রেটার কৈলাসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে দু’বারের কাউন্সিলর রাকেশ গুলিয়াকে। আবার বিকাশপুরীতে সাংসদ কীর্তি আজাদের স্ত্রী পুনম প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ‘পূর্বাঞ্চলী’ (উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের) নেতাদের তুষ্ট করতে সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে সঞ্জয় সিংহকে। মেহরৌলি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মেয়র সরিতা চৌধুরি। আর মালব্য নগর থেকে প্রার্থী হচ্ছেন নন্দিনী।

এরই মধ্যে দিল্লির অলিন্দে গুজব ছড়িয়েছে, কিরণ বেদীকে আরও চাপে রাখতে তাঁর কৃষ্ণনগর আসন থেকে লড়তে পারেন খোদ অরবিন্দ কেজরীবাল। আজ নয়াদিল্লি আসন থেকে মনোনয়ন পেশের কথা থাকলেও রোড শো-তে দেরি হওয়ায় তা করতে পারেননি কেজরীবাল। আগামিকাল শেষ দিনে মোক্ষম চালটি দিতে পারেন তিনি। যদিও আপ এই বিষয়ে এখনও নীরব।

এক নেতার কথায়, “অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে নুপুর শর্মাকে টিকিট দিয়ে দল কার্যত কেজরীবালকেই জেতার সুযোগ করে দিল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন নেত্রীর দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়বার কোনও অভিজ্ঞতা নেই। যেমন রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা নেই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থীর।” গতকাল প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জগদীশ মুখী ও সাংসদ মনোজ তিওয়ারিরা। তাঁদের ধমকে নিরস্ত্র করা হয়। রাতে কিরণের নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার সময়েও অমিত শাহ বলেন, “সকলে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সকলে একজোট হয়ে লড়াই করবেন।”

কিন্তু দলের নেতাদের কাছে অমিত শাহ সেই বার্তা পৌঁছে দিলেও ক্ষোভ সামাল দেওয়া যায়নি। অমিত শাহ আজ কলকাতায়। দিল্লিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “অনেক মাস ধরেই দিল্লির নেতাদের মধ্যে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের মধ্যে এত কলহ, জাতপাত-সম্প্রদায়ে এতটাই ভেদাভেদ যে, তাঁরা কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি।” কিন্তু তাই বলে মোদী-অমিত তো দিল্লির মতো রাজ্য হাতছাড়া করার ঝুঁকি নিতে পারেন না! তাই কেজরীবালের মোকাবিলায় কিরণ বেদীকে নিয়ে আসা ছাড়া আর কোনও গতি ছিল না, মত সেই নেতার। জানা গিয়েছে, অমিত শাহ দিল্লি ফিরে ফের দিল্লি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। দলে কোনও রকম শৃঙ্খলাভঙ্গ বরদাস্ত করা হবে না। দিল্লি বিজেপি মুখপাত্র অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন, “কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবেন।

প্রণব-কন্যার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী

২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ছিল। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে গ্রেটার কৈলাস আসনে দু’বারের কাউন্সিলর রাকেশ গুলিয়াকে প্রার্থী করে অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপি সব আসনেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। রাকেশকে প্রার্থী করে দু’মুখী কৌশল নিলেন দলীয় নেতৃত্ব। গতবার এই আসনটিতে বিজয় মলহোত্রর ছেলে অজয় হেরে যান। এ বছর এখানে বিজয় জলি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। দু’পক্ষের কোন্দল ধামাচাপা দিতেই রাকেশকে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে মত অনেকের। অন্য দিকে, শর্মিষ্ঠার আসনে কম পরিচিত একটা মুখ তুলে এনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও বার্তা দিল বিজেপি। তবে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, রাকেশ ‘কম পরিচিত’ হলেও কম গুরুত্বপূর্ণ নন। কাউন্সিলর হিসেবে তৃণমূল স্তরে তিনি যথেষ্ট কাজ করেছেন। শর্মিষ্ঠার মতো প্রতিপক্ষকে টক্কর দেওয়ার জন্য তিনিই যে আদর্শ, ভোটের ফলই তা বলে দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন