নেহরুর উত্তরাধিকার

মোদীকে রুখতে সঙ্ঘের নিবন্ধই অস্ত্র কংগ্রেসের

কংগ্রেস নেতৃত্বকে পথে বসাতে এখন জওহরলাল নেহরুর উত্তরাধিকারেও থাবা বসাতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মোদীর সেই কৌশল ভেস্তে দিতে আজ সঙ্ঘের মুখপত্রকেই হাতিয়ার করল কংগ্রেস। সঙ্ঘ পরিবারের মুখপত্র ‘কেশরী’-তে সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজেপির কেরলের এক লোকসভা প্রার্থী বি গোপালকৃষ্ণন পরোক্ষে লিখেছেন, মহাত্মা গাঁধীকে হত্যা না করে নাথুরাম গডসে জওহরলাল নেহরুকে মারতে পারতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সামিল শশী তারুর। শনিবার তিরুঅনন্তপুরমে পিটিআইয়ের ছবি।

কংগ্রেস নেতৃত্বকে পথে বসাতে এখন জওহরলাল নেহরুর উত্তরাধিকারেও থাবা বসাতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মোদীর সেই কৌশল ভেস্তে দিতে আজ সঙ্ঘের মুখপত্রকেই হাতিয়ার করল কংগ্রেস।

Advertisement

সঙ্ঘ পরিবারের মুখপত্র ‘কেশরী’-তে সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজেপির কেরলের এক লোকসভা প্রার্থী বি গোপালকৃষ্ণন পরোক্ষে লিখেছেন, মহাত্মা গাঁধীকে হত্যা না করে নাথুরাম গডসে জওহরলাল নেহরুকে মারতে পারতেন। তাঁর কথায়, “ইতিহাসের ছাত্ররা যদি দেশভাগের আগের ঘটনা সততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেন এবং গডসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুভবের চেষ্টা করেন, তা হলে বুঝবেন, উনি ভুল টার্গেট বেছেছিলেন।”

আরএসএস মুখপত্রে প্রকাশিত এই প্রবন্ধের সমালোচনা করে কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ বলেন, “বিজেপি-র মনোভাব এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ওরা মানসিক ভাবে দেউলিয়া। হিংসা ও ঘৃণাই ওঁদের মূল মতাদর্শ।” মাকেনের কথায়, শাসক দলের কোনও নেতার বিকৃত মানসিকতা আরএসএসের মুখপত্রে যে ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা বিপজ্জনক। দেশে সম্প্রীতির বাতাবরণ বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রীর উচিত সঙ্ঘের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

Advertisement

সন্দেহ নেই, ‘কেশরী’-তে প্রকাশিত ওই প্রবন্ধ নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে। কারণ, শুধু নরেন্দ্র মোদী নন, সামগ্রিক ভাবে গোটা সঙ্ঘ পরিবার এখন তাঁদের অতীত অবস্থান ছেড়ে ক্রমশই গাঁধী, নেহরু, বল্লভভাই পটেল, জয়প্রকাশ নারায়ণের মতাদর্শ ও তাঁদের ভাবনার কথা বেশি করে তুলে ধরছেন। তাঁদের চিন্তাভাবনাকেও আত্মস্থ করছেন। অনেকেই যদিও মনে করেন, এ সবের নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে। আসলে কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসে মোদী ক্রমশ মধ্যপন্থা নিতে চাইছেন। যাতে দেশের সব অংশের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া এই কৌশলের মধ্যে দিয়ে কংগ্রেসের জমি ক্রমশই দখল করে নিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

সেই কারণেই আজ কেশরীর বিতর্কিত লেখাটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছে আরএসএস। সঙ্ঘের অন্যতম নেতা এম জি বৈদ্য বলেছেন, “ওই প্রবন্ধে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা লেখকের ব্যক্তিগত মত। তার সঙ্গে সঙ্ঘের কোনও সম্পর্ক নেই।”

কিন্তু কংগ্রেস সুযোগ ছাড়বে কেন! ক’দিন আগেই জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করতে একটি কমিটি গড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, নেহরুর ভাবনার সঙ্গে মোদী ও তাঁর মস্তিষ্ক আরএসএস যে শত যোজন দূরে, তা অজানা নয়। সেটাই এ বার নগ্ন ভাবে প্রকাশ পেয়ে গেল। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেই কারণেই তা করতে চলেছে সরকার। এর মধ্যে বিজেপির কোনও ভাবাবেগ নেই।

কংগ্রেসের এই অবস্থান আজ তুলে ধরেছেন দলের কেরলের সাংসদ শশী তারুরও। প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের প্রশংসা করে সম্প্রতি কংগ্রেসের মুখপাত্রের পদ খুইয়েছেন শশী। তার পরেও আজ তিরুঅনন্তপুরমে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে এই অভিযান আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করতে হাতে ঝাড়ু তুলে নেন শশী। কিন্তু বলেন, “স্বচ্ছ ভারত অভিযান কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। মহাত্মা গাঁধী স্বচ্ছতার কথা বলতেন। কংগ্রেস সেই মতাদর্শেই চলেছে। তা ছাড়া গাঁধীজি বা সর্দার পটেলকে মোদীর হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন