এক মাস কাটতে চলল। তবু বিজেপি দফতরের ত্রিসীমানাতে দেখা মিলছে না মন্ত্রীদের। অথচ খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। মাসে অন্তত একদিন দিল্লির অশোক রোডে দলের সদর দফতরে বসে যাতে মানুষের দুর্দশার কথা শোনেন মন্ত্রীরা, মোদীর সেই নির্দেশ ঘটা করে শুধু ঘোষণাই করা হয়নি— বলা হয়, কোন মন্ত্রী কবে বসবেন, খুব তাড়াতাড়ি তার তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
ক্ষমতায় আসার পরেই মোদী তাঁর মন্ত্রীদের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের নীতি, সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন। পাশাপাশি, মানুষের থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া নেওয়ারও দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষ যাতে সরাসরি মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন, সে জন্য দলের সদর দফতরে বসে অভাব-অভিযোগ শোনা ও পদক্ষেপ করার ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু প্রশ্ন হল, মোদীর নির্দেশ সত্ত্বেও এক জন মন্ত্রীও বিজেপির সদর দফতরে এসে কেন আম আদমির সঙ্গে দেখা করতে এলেন না?
মোদী সরকারের অনেক শীর্ষ মন্ত্রীই মনে করেন, অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও মন্ত্রীদের সদর দফতরে বসার চল শুরু হয়েছিল। বেঙ্কাইয়া নায়ডু বসতে শুরুও করেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন সে সব চালানো সম্ভব হয়নি। কারণ, পূর্ব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, অনেকেই দলের কর্মী হয়ে বিশেষ কোনও কাজ করানোর সুপারিশ নিয়ে আসেন। অনেকে আসেন কারও বদলির তদ্বির নিয়ে। আম আদমির সঙ্গে দেখা করার ভাবনা আখেরে বাস্তবায়িত হয় না। বিজেপি সূত্রের খবর, অরুণ জেটলির মতো নেতা মোদীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিজেপি দফতরে বসে মানুষের সঙ্গে দেখা করতে মোটেই আগ্রহী নন। তাঁর যুক্তি, দেশের অর্থমন্ত্রী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে না। সে ক্ষেত্রে যদি কেউ আসেন, নিজের স্বার্থ নিয়েই তার আসার সম্ভাবনা থাকে। আর অনেক সময়েই ফড়েরাও কর্মী সেজে ঘুরে বেড়ায়।
তা হলে আম আদমির সঙ্গে মন্ত্রীদের যোগাযোগের ব্যাপারে মোদীর ভাবনা কি ‘ফ্লপ’ হল? জবাবে সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী বলেন, “সব সাংসদ এমনকী মন্ত্রীরাও সারা দিনে অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করেন। কারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেখানেও শোনা যায়। সে ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হল, কারা আসছেন, কাদের মাধ্যমে আসছেন, তা যাচাই করে নেওয়া যায়। কিন্তু দলের সদর দফতরে খোলা দরবারে এ সব পরখ করার কোনও উপায় নেই।
যুক্তি যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, কিছু মন্ত্রী অন্তত দলের সদর দফতরে বসুন। অমিত শাহ সবে সভাপতি হয়েছেন। মোদী ও শাহ উভয়েই সরকার ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের পক্ষপাতী। বিজেপি সভাপতি একটু গুছিয়ে উঠলেই সমন্বয়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে। পাশাপাশি, জেটলিকে মোদী নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করাতে নিয়মিত দলের মুখপাত্রদের সঙ্গে বসতে।