গাঁধীনগরের গাঁধী আশ্রমে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। ছবি: পিটিআই
এক সময় তাঁকে ভিসা দিতে চায়নি যে দেশ, তারাই আজ ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের অন্যতম সহযোগী। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আসছেন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তার আগে বিদেশসচিব এসে জানিয়ে গেলেন, ভারতের যে নতুন ইতিহাস লিখছে মোদী প্রশাসন, তাতে সামিল হতে চায় আমেরিকা।
গত বছর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর সময়ই পট বদলাতে শুরু করে। গত বারেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি আমেরিকা ও মোদীর মধ্যে বরফ গলাতে সাহায্য করে। তত দিনে লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে। গুজরাত দাঙ্গার পর থেকে মোদীকে কার্যত অচ্ছুৎ করে রাখা আমেরিকা তখন থেকেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলের কাজটা শুরু করে দিয়েছে। ব্রিটেন-সহ ইউরোপের অন্য দেশগুলি তার আগেই মোদীকে প্রাপ্য সম্মান দিতে শুরু করেছে। ওবামার দেশ আর পিছিয়ে থাকেনি। এমনকী, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রাষ্ট্রদূত বদল করা হয়। নির্বাচনে জেতার পরে মোদীকে ফোন করেন ওবামা। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নয়া সমীকরণ তৈরির কাজ দ্রুত এগোতে থাকে। সেই কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান বলে বার্তা দিয়েছেন কেরি।
এবং সে কাজে কত দূর যেতে পারে আমেরিকা, বোঝাতে মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এ দিন একে একে তুলে আনলেন মোদীর স্লোগানগুলি। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘সবকা সাথ, সবকে বিকাশ’... এই স্লোগানগুলিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন এ কথাই জানালেন কেরি। তাঁর মতে, এই স্লোগানগুলির সার্থক রূপায়ণ হলে সারা বিশ্বের উপকার হবে। তিনি মনে করেন, মেক ইন ইন্ডিয়াকে গোটা বিশ্বের জন্য লাভজনক করা সম্ভব।
মোদীর প্রসঙ্গে কেরি বলেন, “চা-বিক্রেতা থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনা সত্যিই অসাধারণ। ভারতের ইতিহাসে চাঞ্চল্যকর নয়া অধ্যায় লেখা হচ্ছে। আমরাও সেই উৎসবে সামিল হলাম।” তাঁর বক্তব্য, “ওবামা সব সময়েই বলেন, তাঁর মতো এক জনের পক্ষে কেবল মার্কিন গণতন্ত্রেই প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব। একই ভাবে কেবল ভারতীয় গণতন্ত্রেই মোদীর মতো কারও পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব।” মার্কিন বিদেশসচিব জানাচ্ছেন, মোদীর রাজ্য গুজরাতে আসার আমন্ত্রণ তিনি ফেরাতে পারেননি। কারণ, গুজরাতকে সম্ভাবনার আর এক নাম করে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বার গোটা দেশে সেই কাজ করার পালা। তাতে মোদীর পাশে আছে আমেরিকা। কেরির দাবি, ১৩১ জনের সরকারি প্রতিনিধি দল নিয়ে এসে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। আগে এত বড় মার্কিন সরকারি প্রতিনিধি দল ভারতে আসেনি। এই প্রথম কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি দিল্লিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছেন রিচার্ড বর্মা।
ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০০ সাল থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। কেরির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তা আরও কয়েক গুণ বাড়াতে আগ্রহী ওয়াশিংটন। মার্কিন বিদেশসচিব জানাচ্ছেন, ভারত-মার্কিন সহযোগিতার নয়া ক্ষেত্র হল স্বাস্থ্য পরিষেবা, পর্যটন, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন।
তবে আমেরিকার উদ্বেগের বিষয়গুলিও ভোলেননি কেরি। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন। এই নিয়ে দায় কার বেশি, তা নিয়ে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির টানাপড়েন হয়েছে বিস্তর। কেরির কথায়, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শস্য উৎপাদন ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসা করার খরচও।” ভারত, আমেরিকা ও অন্য দেশগুলি মিলে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন মার্কিন বিদেশসচিব। কারণ, তা না হলে অচিরেই জলবায়ুর বদলের ফলে ঘরছাড়া মানুষের দেখা পাওয়া যাবে। তাঁরা জল, খাবার ও বেঁচে থাকার সুযোগের জন্য পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করবেন।
প্যারিসে ‘শার্লি এবদো’ পত্রিকার দফতরে হামলার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসের কথাও ভোলেননি কেরি। বলেছেন, “কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাই স্বাধীনতার গতি রুখতে পারবে না।” প্রায় একই সুরে প্যারিসের ঘটনার নিন্দা করেছেন মোদীও।