মোদী নারাজ, পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা নেই ইস্তাহারে

নরেন্দ্র মোদীর আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থার ঘোষণা থাকছে না বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাম আমলের দেনা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত তিন বছরের জন্য সুদ ও আসল শোধের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে দফায় দফায় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কাছে দরবার করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু বাড়তি কোনও আর্থিক সুবিধা কেন্দ্র দেয়নি। উল্টে ক’দিন আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দ্বিধাহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২০
Share:

নরেন্দ্র মোদীর আপত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থার ঘোষণা থাকছে না বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে।

Advertisement

২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাম আমলের দেনা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত তিন বছরের জন্য সুদ ও আসল শোধের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে দফায় দফায় কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের কাছে দরবার করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু বাড়তি কোনও আর্থিক সুবিধা কেন্দ্র দেয়নি। উল্টে ক’দিন আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দ্বিধাহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনও ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।

এই অবস্থায় শরিক টানার লক্ষ্য সামনে রেখে মমতার আর্থিক দাবি সম্পর্কে সহানুভূতি দেখিয়েছে বিজেপি। দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ ব্রিগেডের সমাবেশে স্পষ্টই জানালেন, সুদ-আসল পরিশোধের উপরে স্থগিতাদেশের ব্যাপারে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। রাজনাথ চেয়েছিলেন, মমতাকে বার্তা দিতে বিষয়টি দলের ইস্তাহারে রাখা হোক। রাখা হোক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আর্থিক প্যাকেজের দাবিও।

Advertisement

মমতার মতো নীতীশও দীর্ঘদিন ধরে বিহারের অনুন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রের কাছে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করার পরে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সেই দাবি বিবেচনার ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস-জেডিইউ জোট হয়নি। আর্থিক প্যাকেজও পায়নি বিহার। নীতীশের আশা পুরোপুরি না-ছাড়া বিজেপি মনে করে, পশ্চিমবঙ্গের মতো বিহারেরও কেন্দ্রের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়া উচিত।

তা হলে আগামিকাল দলের যে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ হতে চলেছে, তাতে সেই প্রসঙ্গ থাকছে না কেন?

বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজনাথ আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি রাখতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী মোদী মনে করেন নির্বাচনী ইস্তাহার কোনও একটি বা দু’টি রাজ্যের জন্য বিশেষ সুবিধা ঘোষণার মঞ্চ নয়। সেখানে গোটা দেশের কথাই বলতে হবে। এটা ঠিক যে, দেশের পশ্চিম প্রান্তের তুলনায় পূর্ব প্রান্ত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। সে কথা মোদী নিজেই বারবার বলেছেন। ক্ষমতায় এলে পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন করতে চান তিনি। সেই সামগ্রিক বার্তাটাই মোদী নির্বাচনী ইস্তাহারে রাখতে চেয়েছেন। কারণ, তাঁর মতে বিশেষ কোনও রাজ্যের কথা বলা হলে অন্যত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে মমতা-নীতীশকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিলেন রাজনাথ। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বাকি রাজ্যের বিরাগভাজন হতে চাননি মোদী। তাঁদের বক্তব্য, এটা কোনও ভাবেই মমতা বা নীতীশ-বিরোধী অবস্থান নয়। ইস্তাহারে তাঁদের রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা না থাকলেও অন্য ভাবে এই বার্তা দেওয়া হতে পারে। বিজেপির এক নেতার কথায়, “আলাদা করে প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা যদি না-ও করা হয়, পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির উন্নয়নের কথা বলা হবে।”

মোদী ইতিমধ্যেই বলেছেন, তিনি দেশে আরও একশোটি নতুন শহর গড়তে চান। স্মার্ট সিটি, হেলথ সিটি, টুইন সিটিও গড়া হবে। সব রাজ্যে একটা করে এইমস গঠন করা হবে। অটলবিহারী বাজপেয়ী যে ভাবে চার মেট্রো শহরকে জাতীয় সড়কে বেঁধেছেন, এ বার তার পাশাপাশি বুলেট ট্রেন চালাতে চান মোদী। সব রাজ্যে আইআইটি, আইআইএম গড়া হবে। স্বাস্থ্যের অধিকার, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুনিশ্চিত করা, সকলের জন্য বাড়ি, বড় শিল্পের সঙ্গে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নও তাঁর লক্ষ্য। মধ্যবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের জন্য করের বোঝা লাঘব করতেও আগ্রহী তিনি। কাল প্রকাশ হতে যাওয়া বিজেপির ইস্তাহারে এ সবই থাকতে পারে।

বিজেপি চাইছে, মনমোহন সিংহের জমানায় দেশের অর্থনীতি যে ভাবে ভেঙে পড়েছে, তার জবাব থাকুক এই ইস্তাহারে। দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য কিছু ঘোষণা থাকবে। উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা করে রোজগার বাড়ানোও মোদীর লক্ষ্য। গ্যাসের দাম কমানোর জন্য গ্যাস-গ্রিড চালু, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তহবিল গড়া, কালোবাজারি রুখতে সাজা দেওয়া ও বিশেষ আদালত গঠনের মতো প্রতিশ্রুতিও থাকতে পারে।

পাশাপাশি, মোদীকে যখন সাম্প্রদায়িক নেতা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিরোধীরা, তখন হিন্দুত্বকে আড়ালে রেখে আগাগোড়া উন্নয়নের কথাই বিজেপির ইস্তাহারে বলা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগের ইস্তাহারের মতো রামমন্দির নির্মাণের উল্লেখ শুধু ছুঁয়ে যাওয়া হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন