মহারাষ্ট্রে এ বার বেশি আসনের দাবি পওয়ারের

লোকসভা ভোটের পর দৃশ্যতই বেকায়দায় কংগ্রেস। আর সেই মওকা বুঝেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে প্রবল দর হাঁকলেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। বিধানসভার ভোটের আসন সমঝোতা বৈঠকে গত কাল এনসিপি-র তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মোট বিধানসভা আসনের অর্ধেকই এ বার তাদের জন্য ছাড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে ওই বৈঠকে শরদ পওয়ার নিজে উপস্থিত ছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:১৪
Share:

লোকসভা ভোটের পর দৃশ্যতই বেকায়দায় কংগ্রেস। আর সেই মওকা বুঝেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের আগে প্রবল দর হাঁকলেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার।

Advertisement

বিধানসভার ভোটের আসন সমঝোতা বৈঠকে গত কাল এনসিপি-র তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মোট বিধানসভা আসনের অর্ধেকই এ বার তাদের জন্য ছাড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের সঙ্গে ওই বৈঠকে শরদ পওয়ার নিজে উপস্থিত ছিলেন না। তবে এনসিপি-র রাজ্য সভাপতি সুনীল ঠাকরে কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন, গত ভোটের হিসেব তাঁদের ভুলে যেতে হবে। এ বার ১৪৪টি আসন এনসিপি না পেলে জোট হবে না।

দুর্দিনে জোট সঙ্গীর থেকে এমন চাপ যে আসবে, সেই আশঙ্কা কংগ্রেসের ছিলই। সূত্রের খবর, আসন রফা নিয়ে গত কালের বৈঠকের মাঝপথেই বেরিয়ে আসেন মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে পওয়ার বিরোধী বলে পরিচিত পৃথ্বীরাজ। আজ কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ এনসিপি-র সঙ্গে আসন সমঝোতার রফাসূত্র সম্মানজনক হলেই জোট থাকবে। না হলে বিধানসভায় একা লড়তে প্রস্তুত কংগ্রেস।”

Advertisement

কংগ্রেস এবং এনসিপি সূত্র বলছে, কাল ফের দু’দলের আলোচনায় বসার কথা। তার আগে পৃথ্বীরাজ আজ যেমন চাপ বাড়িয়েছেন, তেমনই রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি মানিক রাও ঠাকরে বলেছেন, গত বিধানসভা ভোটের থেকে একটিও বেশি আসন এনসিপিকে ছাড়ার প্রশ্নই নেই। এনসিপি তাঁদের দাবিতে অনড় থাকলে ৭ অগস্ট কংগ্রেসের প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হবে। তার পর ২০ তারিখ দল দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করবে।

অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি আসন সমঝোতা কখনও মসৃণ ভাবে হয়নি। এক টানা ১৫ বছর মহারাষ্ট্রে এই জোট সরকার চলছে। কিন্তু গত তিনটি ভোটেই কমবেশি টানাপড়েন হয়েছে আসন রফা নিয়ে। গত নির্বাচনে এ ব্যাপারে কিছুটা দাপটও দেখিয়েছিল কংগ্রেস। এনসিপি মুখপাত্র ডি পি ত্রিপাঠী আজ যুক্তি দিয়েছেন, ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে আসন সমঝোতার সময়ে কংগ্রেস ‘বিগ ব্রাদারের’ মতো আচরণ করেছিল। রাজ্য বিধানসভার ২৮৮ আসনের মধ্যে এনসিপিকে ছেড়েছিল ১১৪টি আসন। কংগ্রেস নিজে লড়েছিল ১৭৪টি আসনে। কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেস আর কোনও আঞ্চলিক দলের শক্তির মধ্যে ফারাক নেই। তা ছাড়া লোকসভা ভোটে কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে মাত্র ২টি আসন জিতেছে। কিন্তু এনসিপি জিতেছে ৫টি আসনে। তাই গত বারের থেকে এনসিপি যে এ বার বেশি আসন দাবি করছে, তা মোটেই অন্যায্য নয়।

প্রকাশ্যে না বললেও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই মনে করছেন, পওয়ারের জায়গায় অন্য কোনও আঞ্চলিক দল থাকলেও এমনই আচরণ করত। আগের বারের থেকে কিছু বেশি আসন তাই এ বার এনসিপিকে ছাড়তে হতে পারে। কিন্তু স্নায়ুর লড়াই এখনই থামার প্রশ্ন নেই।

কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের মতে, এ বার বিধানসভা ভোটে আসন বন্টনের ক্ষেত্রে দাপট দেখানোর জন্যই মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পৃথ্বীরাজকে অপসারণের দাবি করেছিলেন পওয়ার। কারণ, পৃথ্বীরাজ তাঁর প্রবল বিরোধী। পওয়ার চাইছিলেন, সুশীল শিন্দেকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। এক সময় পওয়ারের হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন দলিত নেতা শিন্দে। পরে পওয়ার নতুন দল গড়লেও শিন্দে কংগ্রেস ছাড়েননি। কংগ্রেস নেতাদের মতে, অন্তত ভোটের আগে পৃথ্বীরাজকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে না সরিয়ে ভাল হয়েছে। শিন্দে মুখ্যমন্ত্রী হলে পওয়ারের পক্ষে দরকষাকষি সহজ হয়ে যেত।

তবে কংগ্রেসের উদ্বেগ অন্যত্র। দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, ভোটের আগে কংগ্রেস ভেঙে মহারাষ্ট্রে এনসিপিকে বড় রাজনৈতিক দল করে তুলতে পারেন পওয়ার। পৃথ্বীরাজের বিরুদ্ধে এমনিতেই কংগ্রেস বিধায়কদের বড় অংশের ক্ষোভ রয়েছে। পওয়ার ক্রমাগত তাতে উস্কানি দিয়ে চলেছেন। আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে সুবিধা না হলে পওয়ার সেই খেলায় নামতে পারেন। সেই কারণে হাইকম্যান্ডের নির্দেশে পৃথ্বীরাজ এখন প্রতিদিনই নিয়ম করে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করছেন। বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হল, কংগ্রেস-এনসিপি জোট কি ভাঙতে পারে? এখনই সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত যদিও নেই। কারণ, জোট ভেঙে গেলে উভয়েরই ক্ষতি। টানা ১৫ বছরের এই জোট সরকারের বিরুদ্ধে এ বার প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও প্রবল। আলাদা লড়লে বিপদ দু’পক্ষেরই। তাই জোট হয়তো এ বারও হবে। কিন্তু আগের থেকে অন্তত কিছু বেশি আসন এনসিপিকে ছাড়তে হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন