রাজমহলে সম্মানের লড়াই হেমন্ত, অর্জুনের

ঝাড়খণ্ডের ওই কেন্দ্র দখলে আত্মসম্মানের ‘যুদ্ধ’ প্রাক্তন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর। গত বিধানসভা ভোটেও একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন সেই কেন্দ্রের দুই প্রার্থী। তবে এখন পাল্টে গিয়েছে দু’জনেরই দলের রঙ, প্রতীক।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১০
Share:

ঝাড়খণ্ডের ওই কেন্দ্র দখলে আত্মসম্মানের ‘যুদ্ধ’ প্রাক্তন এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর।

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটেও একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন সেই কেন্দ্রের দুই প্রার্থী। তবে এখন পাল্টে গিয়েছে দু’জনেরই দলের রঙ, প্রতীক।

নির্বাচনের ময়দানে রাজমহলে এমনই ‘বোড়ে’ নামিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, তাঁর পূর্বসূরি অর্জুন মুণ্ডা। আগামীকাল ঝাড়খণ্ডে শেষ দফার নির্বাচনে সাঁওতাল পরগনার ওই লোকসভা কেন্দ্র এ সব কারণেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

Advertisement

রাজমহলের লড়াইয়ে এক প্রার্থী বিজেপি-র হেমলাল মুর্মূ। তাঁর সঙ্গে লড়ছেন জেএমএম-এর বিজয় হাঁসদা। ২০০৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বরহেট কেন্দ্রে হেমলালের কাছে দু’হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন বিজয়। দু’জনেই তখন অন্য দলের প্রার্থী। হেমলাল জেএমএম-এর। কংগ্রেসের টিকিট না-পেয়ে বিজয় লড়েছিলেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে।

বছর খানেক আগে অনাস্থা প্রস্তাবে অর্জুন মুণ্ডার সরকার ফেলে দিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া গড়েন হেমন্ত। মুখ্যমন্ত্রীও হন। পাল্টা জবাব দিতে লোকসভা ভোটের মুখে জেএমএম-এর অন্যতম নেতা হেমলালকে ছিনিয়ে নেন অর্জুন। বিজেপি সূত্রের খবর, দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে হেমলালের জন্য রাজমহলের টিকিট নিয়ে আসেন মুণ্ডা। তাতে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল।

রাজমহলে বিজেপি-কে বেকায়দায় ফেলতে বিজয়কে দলের প্রার্থী করেন হেমন্ত। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা টমাস হাঁসদার ছেলে বিজয়। গত বারের লোকসভা নির্বাচনে রাজমহলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন টমাস। কিন্তু দেবীধন বেসরার কাছে তিনি হেরে যান।

হেমলালের কাছে পরাজয়ের ‘প্রতিশোধ’ নিতে তৈরি বিজয়। তাঁর কথায়, “জেএমএম, কংগ্রেস, আরজেডি সমর্থকরা আমারই পাশে রয়েছেন। রাজমহলে বিজেপি কোনও উন্নয়নের কাজই করেনি। এ বার তাই আমি জিতবই।”

হেমলালের মন্তব্য, “জেএমএম আমাকে ঠকিয়েছে। আদিবাসী মানুষ তা বুঝেছেন। তাই তাঁরা আমার সঙ্গেই মানসিকভাবে জেএমএম ছেড়েছেন।”

সাঁওতাল পরগনার ওই কেন্দ্রে বাংলাভাষীদের বসবাস বেশি। সংখ্যালঘুদের অনেকেই বাংলা বলেন। বাঙালি ভাবাবেগের দিকে তাকিয়ে সেখানে বাংলাতেই প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। অর্জুন মুণ্ডাও সেখানে বাংলাতেই বক্তৃতা দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি-র ‘আঞ্চলিক ভাষা সমিতি’র আহ্বায়ক শিবলাল ঘোষের কথায়, “মুণ্ডাজির আমলে বাংলাকে ঝাড়খণ্ডের দ্বিতীয় রাজভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। হেমন্ত সোরেনের সরকার তা কার্যকর করল না। বাংলা স্কুলগুলি বন্ধ থাকায় দরিদ্র বঙ্গভাষী আদিবাসীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”

অন্য দিকে জেএমএম নেতাদের দাবি, রাজমহলের সাহেবগঞ্জে গঙ্গা ভাঙনের সমস্যা মেটাতে হেমন্তের সরকার অনেক কাজ করেছে। ভাঙন কবলিত জায়গায় সংখ্যালঘুদের বড় অংশের বসবাস। সে কারণে তাঁদের ভোট জেএমএম-এর দিকেই যাবে।

প্রচারের বিষয় যা-ই থাকুক না কেন, রাজমহলে ভোট-যুদ্ধে মুখ কিন্তু দু’জনেরই হেমন্ত, অর্জুনের।

শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যভেদ কে করেন সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন