মুঙ্গেরের সভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: শ্যামলী দেব।
বিরোধীদের চাপ ছিলই। সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ রক্ষা করতে গত কাল বার্তা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। আজ দাদরি কাণ্ড তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিহারে নির্বাচনী প্রচারের সময়ে সেই বার্তা দিতে বেছে নিলেন রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকেই।
আজ বিহারের মুঙ্গের, বেগুসরাই, সমস্তিপুর ও নওয়াদায় নির্বাচনী সভা করেন মোদী। সেখানে তিনি দাদরিতে গোমাংস খাওয়ার গুজবে পিটিয়ে মারার ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে পারেন বলে আশা ছিল নানা শিবিরের। প্রথমে সরাসরি এ নিয়ে বার্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং মুঙ্গেরের সভায় লালু প্রসাদকে তোপ দাগেন তিনি। দাদরির ঘটনার পরে ‘হিন্দুরাও গোমাংস খান’ বলে মন্তব্য করেন লালু। সেই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘এ কথা বলে লালুজি যদুবংশীয় (যাদব) তথা গোটা রাজ্যকে অপমান করছেন। লালুজি মনে রাখবেন, যদুবংশীয়দের সমর্থন ছাড়া আপনি ক্ষমতা দখল করতে পারতেন না।’’ ঐতিহাসিক ভাবে যদুবংশীয়রা গোপালক হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এর পরে লালু ‘‘শয়তানের প্রভাবে ওই কথা বলেছি’’ বলে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিহারে এত মানুষ থাকতে লালু প্রসাদের শরীরে শয়তান ঢুকল কেন। তিনিই বা কেন শয়তানকে নিজের আত্মীয় ভেবে শরীরে স্থান দিলেন।’’
মোদীর এই বক্তব্যের পরেই সরব হন নীতীশ কুমার ও লালু প্রসাদ। নীতীশ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর আসল চেহারা দেখা যাচ্ছে। তিনি বিহার ভোটে সাম্প্রদায়িকতার বিষ মেশাতে চাইছেন। দাদরি কাণ্ড নিয়ে তিনি চুপ। অটলবিহারী বাজপেয়ী মোদীকে রাজধর্ম পালন করতে বলেছিলেন। কিন্তু মোদী আজ বাজপেয়ীর কথা ভুলে গিয়েছেন।’’ লালুর পাল্টা তোপ, ‘‘শয়তান আমার দেহে ভর করার কথা কোথায় বলেছি তা মোদী দেখিয়ে দিন। তা না হলে ক্ষমা চান।’’
এর পরে নওয়াদায়, দিনের শেষ সভায় অবশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মুখ খোলেন মোদী। তখন সরাসরি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকেই অস্ত্র করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘গত কাল শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আমাদের রাস্তা দেখিয়েছেন। দেশের কাছে এর চেয়ে বড় পথনির্দেশ কিছু হতে পারে না। দেশবাসীর কাছে আমার প্রার্থনা, রাষ্ট্রপতিজির বক্তৃতা শুনুন।’’ মোদীর কথায়, ‘‘হিন্দু ও মুসলমানদের ঠিক করতে হবে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে লড়বেন, না দারিদ্রের মোকাবিলা করবেন। রাজনীতিকরা উল্টোপাল্টা কথা বললে তাতে প্রভাবিত হবেন না। এমনকী নরেন্দ্র মোদীও এই ধরনের কথা বললে তাতে কান দেবেন না।’’ সরাসরি দাদরির ঘটনার কথা না বললেও মোদীর ইঙ্গিত কোন দিকে তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনও শিবিরেরই।
বিরোধীদের একাংশের মতে, দাদরির ঘটনা নিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়েছে মোদী সরকার। ওই ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন সাহিত্যিক নয়নতারা সেহগল ও অশোক বাজপেয়ী। প্রধানমন্ত্রীর ‘‘মৌনব্রত’’ নিয়ে তোপ দাগছেন বিরোধীরা। কাল রাষ্ট্রপতিও গত কাল সরকারকে যথেষ্ট চাপে ফেলেছেন। আজ জর্ডনের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ নিয়ে সরব হয়েছেন প্রণববাবু। ধর্মকে ক্ষমতা দখলের মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলে ওই সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর
পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলা ছাড়া পথ ছিল না।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার পাল্টা দাবি, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলার বিষয়টি নিয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কারণ, সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্য জানানোর পরে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা জানিয়ে দেওয়া উচিত। আজ মুঙ্গেরের সভায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই লালুকে জবাব দিয়েছেন মোদী। তার পরে লালু-নীতীশের প্রতিক্রিয়া দেখে শেষ সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।