রাহুলকে আড়াল করতে এখনই সরব কংগ্রেস

বুথ-ফেরত সমীক্ষার হিসেব মানতে নারাজ কংগ্রেস। কিন্তু ফল যদি সত্যি সত্যিই খারাপ হয়, তা হলে তার দায় যে খোদ রাহুল গাঁধীর উপর এসে পড়বে তা বিলক্ষণ জানেন কংগ্রেস নেতারা। আর সেই আশঙ্কা থেকেই সহ-সভাপতিকে আড়াল করতে নেমে পড়লেন তাঁরা। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, ভোট হয়েছে সরকারের কাজের নিরিখে। রাহুল সরকারে ছিলেন না। অতএব ফল খারাপ হলে তাঁকে দোষ দেওয়ার কোনও কারণ নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

বুথ-ফেরত সমীক্ষার হিসেব মানতে নারাজ কংগ্রেস। কিন্তু ফল যদি সত্যি সত্যিই খারাপ হয়, তা হলে তার দায় যে খোদ রাহুল গাঁধীর উপর এসে পড়বে তা বিলক্ষণ জানেন কংগ্রেস নেতারা। আর সেই আশঙ্কা থেকেই সহ-সভাপতিকে আড়াল করতে নেমে পড়লেন তাঁরা। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, ভোট হয়েছে সরকারের কাজের নিরিখে। রাহুল সরকারে ছিলেন না। অতএব ফল খারাপ হলে তাঁকে দোষ দেওয়ার কোনও কারণ নেই।

Advertisement

এ ব্যাপারে আজ প্রথম মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ নেতা কমল নাথ। মধ্যপ্রদেশের এই পোড় খাওয়া রাজনীতিক বলেন, “গত দশ বছরে সরকারের কাজের ভিত্তিতেই ভোট চেয়েছে কংগ্রেস। রাহুল মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। তাই তাঁকে দায়ী করা যায় না।” পরে একই কথা বলেন রাহুল ঘনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশও। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপির মতো ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচার চালায়নি কংগ্রেস। তাই ভাল-মন্দ যা-ই হোক সেই দায়ও কারও একার নয়।”

তবে গাঁধী পরিবার ঘনিষ্ঠ নেতাদের এ হেন মন্তব্য দল এবং সরকারের মধ্যে দূরত্ব শেষ বেলাতেও ফের এক বার সামনে এনে দিল বলে মনে করছেন কংগ্রেসের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, ২০০৪ সালে দল যখন জিতেছিল, তখন সব কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছিল সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীকে। বলা হয়েছিল আম আদমির জন্য তাঁদের ভাবনারই জয় এটা। আর এখন যখন খারাপ ফলের ইঙ্গিত প্রবল, তখন মনমোহন সিংহের সরকারের উপরে দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।

Advertisement

কংগ্রেসের অন্য একটি অংশ আবার বলছে, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, মনমোহন সিংহ এখন অতীত। দলকে তাকিয়ে থাকতে হবে রাহুলের দিকেই। ফলে তাকে আড়াল করার চেষ্টার মধ্যে কৌশলগত ভাবে ভুল কিছু নেই। বিশেষ করে গত কাল যাবতীয় বুথ-ফেরত সমীক্ষাই যখন কংগ্রেসের ভরাডুবির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের বুথ-ফেরত সমীক্ষা তো এ-ও দাবি করেছে যে, এ বার মাত্র ৭৩টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। বিজেপি পেতে পারে ২৪৩টি আসন। অর্থাৎ কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দলের প্রাপ্ত আসনের এক তৃতীয়াংশেরও কম আসন পেতে পারে বর্তমান শাসক দল। সন্দেহ নেই বাস্তবে যদি ফল এমনই হয়, তা হলে রাহুলের নেতৃত্ব বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়বে। কংগ্রেসের অনেক নেতারই ধারণা, সে ক্ষেত্রে রাহুলকে সরিয়ে প্রিয়ঙ্কা বঢরাকে নেতৃত্বে তুলে আনার দাবিও উঠতে পারে। তেমন পরিস্থিতির কথা আঁচ করেই কমল নাথ, জয়রামরা রাহুলকে আড়াল করতে এগিয়ে এলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু রাহুলের বদলে প্রিয়ঙ্কায় অসুবিধা কী? ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতা বলেন, প্রিয়ঙ্কা পুরোদস্তুর আসবেন কি না, সেটা গাঁধী পরিবারের একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখন প্রিয়ঙ্কা যদি রাজি না হন, তা হলে রাহুল ছাড়া উপায়ান্তরই কী! কেননা কংগ্রেসকে গাঁধী পরিবারের যতটা প্রয়োজন, গাঁধী পরিবারকে কংগ্রেসের প্রয়োজন তার থেকে কম কিছু নয়। গাঁধী পরিবার নেতৃত্বে না থাকলে দলটাই হয়তো ভেঙে খানখান হয়ে যাবে। আর তা-ই রাহুলের ভাবমূর্তি রক্ষা করা জরুরি।

কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোটে বিপর্যয় হলে রাহুলের একার উপর যাতে দায় না পড়ে সে জন্য শুধু নেতাদের দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানোই নয়, ২০ বা ২১ মে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও ডাকা হতে পারে। তখন ওই বৈঠকে সম্মিলিত দায়ের কথা মেনে নিয়ে ইস্তফা দিতে পারেন দলের সাধারণ সম্পাদকরা। ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরির ভার দেওয়া হতে পারে সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে।

কিন্তু প্রশ্ন হল তার পরেও কি দায় এড়াতে পারবেন রাহুল? বিশেষ করে এ বার ভোটে কংগ্রেস যখন তাঁকেই সামনে রেখে লড়েছে। ইস্তাহার তৈরি থেকে শুরু করে ভোটের যাবতীয় রণকৌশল ছকা সবই হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে। কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই বলছেন, এমনটা হতেই পারে যে ভোটে বিপর্যয় হলে নিজেই দায় নিলেন রাহুল। যেমনটা করেছিলেন পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পর। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন যে, বাস্তব মানলে সত্যিই রাহুলের কাঁধে সব দায় চাপানো অনুচিত। কারণ, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, নীতিপঙ্গুত্ব, দুর্বল নেতৃত্ব ইত্যাদি বহু প্রশ্নে মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা রয়েছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা মুখের কথা নয়।

তবে রাহুলের জন্য আগাম ঢালের ব্যবস্থা করলেও কংগ্রেসের অনেক নেতাই মনে করছেন, ফল অতটা খারাপ হবে না। শেষ পর্যন্ত ১৩০ থেকে ১৪০টা আসন পেতে পারে দল। অন্য দিকে বিজেপির আসনও ১৮০ পেরোবে না। আর সেই পরিস্থিতির জন্যও গোপনে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন সনিয়া। কংগ্রেস সূত্রের খবর, মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিজে কথা বলেছেন তিনি। জয়ললিতা, মুলায়ম সিংহ, চন্দ্রশেখর রাও, প্রকাশ কারাটদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা। দলীয় নেতারা বলছেন, ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে বিজেপি-কে রুখতে প্রয়োজনে তৃতীয় মোর্চা বা ওই ধরনের কোনও জোটকে বাইরে থেকে সমর্থন দিতে পিছপা হবে না কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন