ইস্তফার ইঙ্গিত রাজভবনে

শীলাদের সরাতে চাপের কৌশল কেন্দ্রের

শুধু পশ্চিমবঙ্গের এম কে নারায়ণন নন, কোনও রাজ্যের রাজপালকেই সরাসরি বরখাস্ত করতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তবে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ সব রাজ্যপালই যাতে নীতিগত কারণে পদত্যাগ করেন, সে জন্য তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা চলছে। এনডিএ সরকারের সেই কৌশল স্পষ্ট করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ বলেছেন, “আমি যদি তাঁদের অবস্থায় থাকতাম, তা হলে নিজেই পদত্যাগ করতাম।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

আলাপচারিতা। মঙ্গলবার ৭ নম্বর রেস কোর্সে রাজস্থানের রাজ্যপাল মার্গারেট আলভার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

শুধু পশ্চিমবঙ্গের এম কে নারায়ণন নন, কোনও রাজ্যের রাজপালকেই সরাসরি বরখাস্ত করতে চাইছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তবে কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ সব রাজ্যপালই যাতে নীতিগত কারণে পদত্যাগ করেন, সে জন্য তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা চলছে। এনডিএ সরকারের সেই কৌশল স্পষ্ট করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ বলেছেন, “আমি যদি তাঁদের অবস্থায় থাকতাম, তা হলে নিজেই পদত্যাগ করতাম।”

Advertisement

এবং এই চাপের মুখেই আজ ইস্তফা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল জোশী। এমনিতে অবশ্য তাঁর কার্যকালের মেয়াদ আর বেশি বাকি ছিল না। আগামী মাসের শেষেই রাজ্যপাল পদ থেকে বিদায় নিতে হতো তাঁকে।

কিন্তু শীলা দীক্ষিত, শিবরাজ পাটিল, মার্গারেট আলভার মতো কংগ্রেসি নেতা-নেত্রীরা, যাঁদের রাজ্যপাল পদের মেয়াদ শেষ হতে এখনও দেরি আছে, তাঁরা কী করেন সেটাই দেখার। শীলাকে আজ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “গুজবের ভিত্তিতে আমি কোনও মন্তব্য করব না।”

Advertisement

বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, ইউপিএ সরকার তার মেয়াদ ফুরনোর ঠিক আগে শীলা দীক্ষিতের মতো নেতাকে কেরলের রাজ্যপাল করেছে। এর পিছনে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। ফলে কেন্দ্রে সরকার বদলের পরে তাঁর নিজের থেকেই ইস্তফা দেওয়া উচিত। কারণ, রাজ্যপাল পদের মেয়াদ ফুরনোর পরে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ঘটনা ভূরি ভূরি। মতিলাল ভোরা বা সুশীলকুমার শিন্দের মতো নেতারা কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ মন্ত্রীও হয়েছেন।

এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ছাড়াও আরও কয়েক জন রাজ্যপাল আছেন, যাঁরা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই ওই পদ পেয়েছেন। ফলে তাঁদেরও নীতিগত কারণে পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। ইউপিএ জমানার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণনকে ওই গোত্রেই ফেলা হচ্ছে।

সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে নিযুক্ত সকলের ইস্তফা দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে আমেরিকায়। প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হলেও বা শাসক দলেরই কেউ প্রেসিডেন্ট হলেও সকলে ইস্তফা দেন। তাঁদের হয়তো আবার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু নীতিগত ভাবে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর শিষ্টাচার থেকে বিচ্যুত হন না কেউ। ভারতে অবশ্য সেই রেওয়াজ নেই। এমনকী শিশু সাহিত্য সংসদের সভাপতির পদ ছাড়ার ক্ষেত্রেও অনীহা লক্ষ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, জোর করে কোনও আমলা বা রাজ্যপালকে সরানো হবে না। মনমোহন সিংহের জমানার ক্যাবিনেট সচিবের মেয়াদ ইতিমধ্যেই বাড়িয়ে দিয়েছেন মোদী। সরানো হয়নি স্বরাষ্ট্র এবং বিদেশ সচিবকেও। কিন্তু কংগ্রেস আমলে যাঁরা রাজনৈতিক কারণে রাজ্যপালের গদিতে বসেছেন, তাঁরা যাতে নিজে থেকেই সরে যান, তার জন্য চাপ বজায় রাখতে চাইছে মোদী সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই রাজ্যপালরা পদে থাকতে চান কি না জানতে চেয়ে মন্ত্রক থেকে ফোন গিয়েছে তাঁদের কাছে।

কেন্দ্রের ধারণা, এই চাপের ফলে অনেকেই নিজে থেকে সরে যাবেন। যাঁরা সরবেন না, তাঁদের বরখাস্ত করার পরিকল্পনা অবশ্য নেই। কিন্তু ওই রাজ্যপালদের অন্যত্র বদলি করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। আগামী কয়েক মাসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপতিকে উপযুক্ত পরামর্শ দেওয়া হবে।

সরাসরি বরখাস্ত না করে এ ভাবে চাপ তৈরির অন্য একটি কারণও রয়েছে। সেটি হল, চার বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। বি পি সিংঘল বনাম ভারত সরকার মামলায় সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয়, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকার বা দলের মতাদর্শ বা নীতির সঙ্গে স্রেফ মতান্তরের কারণে কোনও রাজ্যপালকে অপসারণ করা যাবে না। মেয়াদ শেষের আগে তাঁকে সরাতে গেলে যথেষ্ট কারণ দেখাতে হবে। এই রায় উদ্ধৃত করে কংগ্রেসের নেতারা সকাল থেকেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শুরু করেন। দলের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, “আশা করব সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও সাংবিধানিক নিয়মনীতি মাথায় রেখেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঘটনা হল, ২০০৪-এ ক্ষমতায় এসেই উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপাল বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী, গুজরাতের কৈলাসপতি মিশ্র, হরিয়ানার বাবু পরমানন্দ, গোয়ার কেদারনাথ সাহনিকে সরিয়ে দিয়েছিল ইউপিএ। যে প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি নেতা রাজীব প্রতাপ রুডির কটাক্ষ, “কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় এসে একই কাজ করেছিল, তখন তো এত হল্লা হয়নি? আজ তাদের এত আক্রমণের কী হল!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন