শিলচরের জেলে কলকাতার পরিচালক

শিলচরে গ্রেফতার কলকাতার এক চলচ্চিত্র পরিচালক ও এক প্রযোজক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন শিলচরেরই আর এক প্রযোজক। শুধু প্রতারণার অভিযোগই নয়, দু’জনে মেয়ে পাচার ও পর্নো ছবি তৈরির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে বলে লিখিত অভিযোগে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী রণবীর চক্রবর্তী। তদন্তকারী অফিসার চম্পক শইকিয়ার বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ার পরই পরিচালক শুভাঞ্জন রায় ও প্রযোজক শাহিদুল মুকার্রমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩২
Share:

শিলচর থানায় শুভাঞ্জন এবং শাহিদুল। ছবি:স্বপন রায়।

শিলচরে গ্রেফতার কলকাতার এক চলচ্চিত্র পরিচালক ও এক প্রযোজক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন শিলচরেরই আর এক প্রযোজক। শুধু প্রতারণার অভিযোগই নয়, দু’জনে মেয়ে পাচার ও পর্নো ছবি তৈরির সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে বলে লিখিত অভিযোগে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী রণবীর চক্রবর্তী। তদন্তকারী অফিসার চম্পক শইকিয়ার বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে প্রতারণার প্রমাণ পাওয়ার পরই পরিচালক শুভাঞ্জন রায় ও প্রযোজক শাহিদুল মুকার্রমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর আদালত তাঁদের জেল হাজতে পাঠিয়েছে। যদিও অভিযুক্ত দু’জনেরই বক্তব্য, তাঁরা নির্দোষ।

Advertisement

শিলচরের আশ্রম রোডের বাসিন্দা রণবীরের নায়ক হওয়ার শখ ছিল। এই ব্যাপারে খোঁজখবর করতে তিনি কলকাতায় যান। আলাপ হয় শাহিদুলের সঙ্গে। ছ’-সাত মাসের ঘনিষ্টতার পর দু’জনে মিলে তৈরি করেন অ্যাসেম ফিল্মস। ঠিক হয়, যৌথ ভাবে তাঁরা একটি ছবি তৈরি করবেন। ছবির নায়ক হবেন রণবীর। শিলচরের প্রেক্ষাপটে, সেখানকার ছেলেমেয়েদের বাছাই করে শু্যটিং করা হবে বলে তাঁরা ঠিক করেন। এই পর্বের সব খরচ বহন করবেন রণবীর। অন্য দিকে, সম্পাদনা-বিপণন ইত্যাদি শু্যটিং-পরবর্তী খরচের ভার শাহিদের। পরিচালকের সঙ্গে কথাবার্তা ও তার খরচখরচাও আপাতত তিনিই বহন করবেন। নির্দেশনার দায়িত্ব দেওয়া হয় শুভাঞ্জনকে।

এরপর শিলচরের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু হয় অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাইয়ের কাজ। গত ১৬ নভেম্বর রণবীর-শাহিদ-শুভাঞ্জন ৩০ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে সাত জনকে বাছাই করেন। তাঁদের কাছ থেকে ‘ওয়ার্কশপ ফি’ বাবদ ১৭ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। বেশ ক’দিন ওয়ার্কশপও চলে। এ বার শু্যটিং শুরুর পালা। রণবীরের বক্তব্য: কিন্তু সমস্যা বাধে এখানেই। কারণ পরিচালক শুভাঞ্জন ও অন্যতম প্রযোজক শাহিদ বলেন, শিলচরে শু্যটিং করা যাবে না। কারণ এখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। আলো ও অন্যান্য সরঞ্জাম কলকাতা থেকে এনে কাজ করতে খরচ বেশি পড়বে। তার থেকে কলকাতায় শু্যটিং করলে খরচ অনেক কম হবে।

Advertisement

এরপরেই রণবীর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। শিলচরের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে ‘ওয়ার্কশপ ফি’ নেওয়ার ব্যাপারে তার বক্তব্য, ওদেরও ঠকানো হয়েছে। যদিও বাছাই করা ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিলচরের পূজা, কাকলিরা দুষছে রণবীরকেও। তাঁরা জানান, “পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আমরা যোগাযোগ করি। পরে জেলা গ্রন্থাগারে ডেকে অডিশন নেওয়া হয়। সাতজনকে বাছাই করে ওয়ার্কশপ হয়। সেই পর্বে শাহিদের সঙ্গে রণবীরও ছিলেন। সে জন্য সবাইকে ১৭ হাজার টাকা করে দিতে হয়। ওয়ার্কশপ করান শাহিদই।” তাঁদের বক্তব্য, “শুভাঞ্জন-শাহিদ যখন কলকাতায় শু্যটিংয়ের কথা বলেন তখন রণবীরই আমাদের কাছে তাঁর সন্দেহের কথা জানান। পর্নোছবি তৈরি, মানবপাচারের আশঙ্কা ইত্যাদি রণবীরেরই অনুমান। আমাদের নয়।” রণবীরের বক্তব্য, “আমি শিলচরের ছেলে। আমি চাইনি এখানকার ছেলেমেয়েদের সর্বনাশ হোক। তাই ওদের সতর্ক করি। আর আমি এর মধ্যেই লাখ তিনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি। তাই পুলিশের কাছে যাই।” তদন্তকারী অফিসার জানান, “প্রাথমিক তদন্তে প্রতারণার স্পষ্ট প্রমাণ মেলায় ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ৪০২, ৪০৬, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রতারক চক্রে গুয়াহাটিরও এক যুবক জড়িত রয়েছে। তার নাম-ঠিকানা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখন গুয়াহাটি পুলিশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলছি।”

গ্রেফতারের দিন থানায় বসে কলকাতার লেকটাউনের যুবক শুভাঞ্জন বলেন, প্রযোজকদের অংশীদারী বা অডিশন ফি সংগ্রহ ইত্যাদির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই। তিনি বলেন, এর আগে এসপি গ্রুপের সঙ্গে যেমন ‘জিজ্ঞাসাচিহ্ন’ নামে তিনি কাহিনিচিত্র পরিচালনা করেছেন, তেমনই চন্দ্রা ফিল্মস-এর সঙ্গে তৈরি করেছেন তথ্যচিত্র ‘রোড টু ডেথ’। শাহিদ-রণবীরের অ্যাসেম গ্রুপের সঙ্গেও তেমনই পরিচালক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। কলকাতায় টলিউড সূত্রের খবর, শুভাঞ্জনের ইন্ডাস্ট্রিতে নাম-দুর্নাম নেই। ফ্রিল্যান্স অ্যাড ফিল্ম মেকার হিসেবেই তাঁর বেশি পরিচিতি। তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ এক অভিনেতার কাছের মানুষ শুভাঞ্জন। আর শাহিদের বক্তব্য, “এখানে বিশ্বাসভঙ্গের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কলকাতায় আলো-ক্যামেরা ভালো, খরচও কম। পরিচালকের পরামর্শেই বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবাইকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলি। অন্য কোনও কারণ নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন