শেষ রাউন্ডে মোদীর তূণে চা-চক্র, থ্রিডি-ও

দল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে দেশ জুড়ে প্রচারে নেমে পড়েছিলেন। রাজ্যে রাজ্যে সভা করেছেন। উপচে পড়া ভিড় দেখে নরেন্দ্র মোদী নিজে যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও কম ভরসা পাননি। তা সত্ত্বেও ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর নিজের প্রচার-কৌশলের খোলনলচে পাল্টে ফেলছেন নরেন্দ্রভাই।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫০
Share:

দল প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার পর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে দেশ জুড়ে প্রচারে নেমে পড়েছিলেন। রাজ্যে রাজ্যে সভা করেছেন। উপচে পড়া ভিড় দেখে নরেন্দ্র মোদী নিজে যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও কম ভরসা পাননি। তা সত্ত্বেও ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর নিজের প্রচার-কৌশলের খোলনলচে পাল্টে ফেলছেন নরেন্দ্রভাই। কংগ্রেসের দুর্গে চূড়ান্ত আঘাত হানতে একেবারে পাঁচমুখী কৌশল নিয়ে তিনি তৈরি।

Advertisement

কেমন সেই পাঁচমুখী কৌশল?

এক, দিনে একাধিক জনসভা। এ যাবৎ কোনও রাজ্যে গিয়ে এক দিনে মোটামুটি একটিই বড় সভা করতেন মোদী। সেখানেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক আসত। কিন্তু এ বার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫টি করে সভা করতে চান তিনি। ৩-৪টি লোকসভা কেন্দ্র ধরে এক-একটি সভা। সেখানে আগের মতো ভিড় আসুক বা না আসুক, এখন থেকে মোদী নিজেই আরও বেশি করে পৌঁছে যেতে চান বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

দুই, প্রত্যন্ত এলাকায় ‘থ্রিডি মোদী’র সফর। অর্থাৎ, বিভিন্ন জায়গায় বড় স্ক্রিন লাগিয়ে থ্রিডি প্রযুক্তিতে দেখানো হবে মোদীর বক্তৃতা। দর্শকদের মনে হবে, নেতা যেন তাঁদের নাগালেই। কথা বলছেন, হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছেন। গুজরাতে বিধানসভা ভোটের সময় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মোদী। এ বারও তাতে ভরসা রাখছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সারা দেশে একমাত্র তিনিই এই অভিনব প্রচারের কপিরাইট কিনে রেখে দিয়েছেন।

তিন, বিজেপির নয়া উদ্যোগ ‘চায় পে চর্চা’। ইন্টারনেটে সরাসরি মোদীর সঙ্গে চা-চক্রে জনতার আড্ডা। প্রশ্ন শুনবেন, উত্তর দেবেন। এই কর্মসূচি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে অবশ্য। কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার মোদীকে ‘চা-বিক্রেতা’ বলে কটাক্ষ করা ইস্তক পরিকল্পনা ছকে ফেলা হয়েছিল। তবে মোদী এ বার আড্ডার ধাঁচটা পালটে দিচ্ছেন। এক-এক দিনে এক-একটি থিমের উপরে তিনি চর্চা করতে চাইছেন। যেমন আগামিকাল আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসে তিনি শুধু মহিলাদের থেকেই প্রশ্ন নেবেন।

চার, দিল্লিতে আরও বেশি সময় কাটানো। ৭ রেসকোর্সে পৌঁছতে গেলে রাজধানীতে যে তাঁকে আরও বেশি করে হাজিরা দিতে হবে, সে কথা বুঝেছেন মোদী। বিজেপি সূত্রের মতে, অরবিন্দ কেজরীবাল যা-ই করুন, তিনি সংবাদমাধ্যমে এত প্রচার পান শুধুমাত্র দিল্লিতে রাজনীতি করার দৌলতে। আঞ্চলিক দলগুলিও নিজেদের রাজ্যের গণ্ডি না পেরোলে যথেষ্ট প্রচার পায় না। তাই বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, দিল্লিতে আরও বেশি উপস্থিতি প্রয়োজন মোদীর। সেই কারণেই আগামিকাল দিল্লির দফতর থেকেই চা-চক্রে বসার কথা তাঁর। আগে আড্ডা কিন্তু হয়েছিল আমদাবাদ থেকে। পাশাপাশি, কৃষক, শ্রমিক, শিল্পমহলের যে সব সভা মোদী এত দিন আমদাবাদে করতেন, এ বার থেকে দিল্লিতে করবেন।

পাঁচ, অন্য শীর্ষ নেতাদের দিয়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘কার্পেট বম্বিং’ জারি রাখা। সশরীর বা থ্রিডি অবতারে মোদী যতই সফর করুন, দেশের সর্বত্র যে পৌঁছনো যাবে না, তা জানেন বিজেপি নেতৃত্ব। এত দিন সব সভা মোদীময় ছিল। কিন্তু এ বার মোদীই চান, লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিরাও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুন। যেখানে তিনি পৌঁছতে পারবেন না, সেখানে যান। কংগ্রেস মনে করছে, মোদীর আপাতত নতুন কিছু বলার নেই। কাজেই ইস্তাহার প্রকাশ করে সনিয়া ও রাহুল গাঁধী পুরোদমে প্রচারে নামতে পারবেন। সেই কৌশলের মোকাবিলা করতেই আডবাণীদের আক্রমণে চাইছেন মোদী।

পঞ্চমুখী বাণ তৈরি। লক্ষ্যভেদ হয় কিনা, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন