শশীবাবুর বাড়িতে আড্ডা রাহুল গাঁধীর

স্বপ্নেও কোনও দিন এ সব দেখেননি কাছাড়ের শশীভূষণ দাস। তাঁর বাড়ির উঠোনে আচমকা ঢুকে রাহুল গাঁধী গল্প জুড়বেন এ সব স্বপ্নেও ভাবা যায় না কি! না-হলে শহরের সেরা ফটোগ্রাফারকে সকাল থেকেই ঘরে এনে বসিয়ে রাখতেন শশীবাবুর বাড়ির লোকজন। মোবাইলে ‘ভিভিআইপি’ অতিথির ছবি তোলার চেষ্টা করে শেষে হা-পিত্যেশ করতেন না!

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪২
Share:

স্বপ্নেও কোনও দিন এ সব দেখেননি কাছাড়ের শশীভূষণ দাস। তাঁর বাড়ির উঠোনে আচমকা ঢুকে রাহুল গাঁধী গল্প জুড়বেন এ সব স্বপ্নেও ভাবা যায় না কি!

Advertisement

না-হলে শহরের সেরা ফটোগ্রাফারকে সকাল থেকেই ঘরে এনে বসিয়ে রাখতেন শশীবাবুর বাড়ির লোকজন। মোবাইলে ‘ভিভিআইপি’ অতিথির ছবি তোলার চেষ্টা করে শেষে হা-পিত্যেশ করতেন না!

আজ কাছাড়ের উধারবন্দ স্টেডিয়ামে নির্বাচনী সভায় এসেছিলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। স্টেডিয়ামের ঠিক পিছনেই শশীবাবুর বাড়ি। রাহুলকে সভাস্থলে পৌঁছনোর জন্য তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তাই বেছে রেখেছিল এসপিজি। পড়শি রঙ্গেশ দেবের বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে শশীবাবুর উঠোন দিয়ে সভামঞ্চে যান সনিয়া-তনয়। ফিরছিলেন একই রাস্তা ধরে। মঞ্চ থেকে নেমে দ্রুত এগোচ্ছিলেন তাঁর কনভয়ের গাড়ির দিকে। এসপিজি নিরাপত্তা বলয় চারপাশে। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী অজিত সিংহ, শিলচরের প্রার্থী সুস্মিতা দেব।

Advertisement

হঠাৎ শশীবাবুর ঘর থেকে এক মহিলার গলায় ‘ওই যে, ওই যে রাহুল’ শুনে থমকে দাঁড়ান রাহুল। ক’পা পিছিয়ে ওই ঘরে উঁকি দিলেন। রাহুলকে হাতের নাগালে দেখে তত ক্ষণে হতবাক সে বাড়ির বৌ প্রীতিকণা। হাসিমুখে রাহুল জিজ্ঞাসা করলেন ‘ক্যায়সে হো?’ ভরসা পেয়ে এগিয়ে আসেন বছর পঁয়ষট্টির শশীবাবু। সঙ্গে দুই ছেলে মৃণাল, সজল। তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন রাহুল। সুযোগ নষ্ট করতে চাননি বাড়ির লোকজন। রাহুলের সঙ্গে ফটো তোলার আর্জি জানালেন। এক কথাতেই রাজি তিনি।

এসপিজি অফিসাররা আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের সরিয়ে দেন রাহুল। তিনি বললেন, “কী হয়েছে এতে!” তারপর নিজেই দাঁড়িয়ে পড়লেন শশীবাবুর দুই ছেলের পাশে। বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ সদস্যও ছুটে এসে দাঁড়িয়ে যায় রাহুলের সামনে।

কিন্তু ক্যামেরা কোথায়? তাড়াহুড়ো করে তাঁর মোবাইল ফোনই স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দেন মৃণালবাবু। পরপর দু’বার ক্যামেরার আলো ঝলসে ওঠে। উৎফুল্ল বাড়ির সবাই। রাহুল চলে যেতেই মোবাইলের স্ক্রিনে ফটো দেখতে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু কোথায় ছবি! মোবাইলের ফটো-গ্যালারিতে যে রাহুলের কোনও ছবিই নেই। তা ‘সেভ’ই হয়নি মোবাইলে।

শশীবাবু অবশ্য এ নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর কথায়, “ছবির কথা বাদ দিন। রাহুল গাঁধী আমার বাড়িতে এলেন। সবার সঙ্গে কথা বললেন। এটাই তো গর্বের ব্যাপার।” রাজীব-সনিয়ার ছেলেকে সামনে দেখে ঘোর যেন কাটতেই চাইছে না বাড়ির অন্যদের। তাঁরা বলছেন, “ঠিক যেন রাজপুত্তুর। টিভিতে যাকে প্রতিদিন দেখি। তিনি কি না একেবারে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে! বিশ্বাসই হচ্ছে না।’’

কাছাড়ের জনসভাতেও ভিড়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন রাহুল। বলেন, “এক দিন আপনাদের সবার সঙ্গে কাটাতে চাই।” তাঁর কথায়, “জনতাই নেতাদের শিক্ষক। তা-ই দু’পক্ষের সম্পর্ক মজবুত করতেই হবে।”

বক্তৃতায় আজও তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তোলেন ‘গুজরাত মডেল’ প্রসঙ্গ। বিজেপি-র ইস্তাহার নিয়ে সমালোচনা করেন। জনসভায় হাজির লোকেদের জানান ইউপিএ সরকারের জনহিতকর কর্মসূচির কথাও। প্রতিশ্রুতি দেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ফের কেন্দ্রের ক্ষমতায় এলে, গোটা বিশ্বের শিল্প-রাজধানী হবে ভারত। ‘মেড ইন চায়না’ নয়, সকলে তখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র জিনিসই কিনবে।

তবে, রাহুলের বক্তৃতা নিয়ে আপাতত আগ্রহী নন শশীবাবুর বাড়ির লোকেরা। তাঁদের চোখে শুধু ভাসছে, এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে সনিয়ার ছেলে বলছেন ক্যায়সে হো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন