সারদা নিয়ে হুঁশিয়ারি মোদীর

ক্ষমতায় এলে সারদা-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে রুখতে কড়া কেন্দ্রীয় আইন করার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন নরেন্দ্র মোদী। জয়ন্ত ঘোষালের সঙ্গে কথোপকথনে এ কথাই জানালেন তিনি।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:১২
Share:

ক্ষমতায় এলে সারদা-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে রুখতে কড়া কেন্দ্রীয় আইন করার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

রাজ্যে শেষ দু’দফার ভোটে সারদা-কাণ্ডকেই প্রচারের অন্যতম পুঁজি করে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তারই মধ্যে শেষ দফার নির্বাচনের মুখে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়ায় বিরোধীদের আক্রমণের সুর আরও চড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদীর স্পষ্ট বার্তা, ক্ষমতায় এলে গোটা দেশেই ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমা ব্যবসা রুখতে কড়া আইন প্রণয়ন করা হবে। পাশাপাশি, তদন্তকারী সংস্থা যাতে সুষ্ঠু ভাবে সারদা-তদন্ত চালাতে পারে, কোনও রকম রাজনৈতিক চাপের মুখে তদন্ত প্রভাবিত না হয়, সে দিকেও নজর রাখবে সরকার। একই সঙ্গে মোদীর হুঁশিয়ারি, ছাড় পাবেন না সারদার বাড়বাড়ন্তের পিছনে থাকা রাজনৈতিক প্রশ্রয়দাতারাও ।

পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি কেন্দ্রে কাল ভোট। ঠিক তার আগে সারদা-কাণ্ডের তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে চলে যাওয়ায় ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে শাসক শিবিরে। তারই মধ্যে সারদা প্রশ্নে মোদীর সুর চড়ানোকে প্রচারের কৌশলই হিসেবেই দেখছে তৃণমূল। শাসক দল মনে করছে, সারদাকে হাতিয়ার করে শেষ দফার ভোটে যথাসম্ভব আসন বাড়িয়ে নিতে চায় বিজেপি। সাক্ষাৎকারেও সারদা প্রশ্নে তৃণমূলের ভূমিকা ও তদন্তে গড়িমসির প্রশ্নে মোদী আগাগোড়াই ছিলেন আক্রমণাত্মক। সারদা-কাণ্ডের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আর কেউ যাতে এ ভাবে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত উপার্জন লুঠ করতে না পারে, তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করা হবে। কাউকে ছাড়া হবে না।” বার্তা স্পষ্ট, রাজ্য সরকার সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন বা দলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষকে জেলে ভরলেও সেটা যথেষ্ট নয়। একই সঙ্গে ওই কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে দোষীরা ছাড় পাবে না।

Advertisement

গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ সফরে গিয়ে পরিবর্তন শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে মমতাকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাজ্যের নয়, ক্ষমতায় এসে পরিবর্তন হয়েছে খোদ তৃণমূল নেত্রীরই। মোদীর অভিযোগ, শাসক দল কাজের চেয়ে কথা বলছে বেশি। তাই উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। পরিবর্তন প্রশ্নে এ দিন মোদীর ব্যাখ্যা, ৩৪ বছরের বাম অপশাসনের শেষে মমতার কাছে রাজ্যবাসীর অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তা তো হয়ইনি, উল্টে যে পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ তাতে হতাশ। মোদীর কথায়, “রাজ্যের মানুষ এই পরিবর্তন চাননি। রাজ্যবাসীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এর থেকে আরও অনেক বেশি ভাল কিছু পাওয়া উচিত।” এরই সঙ্গে মোদীর ঘোষণা, “ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনব।”

ভোটের ফল বেরোবে শুক্রবার। তার আগে সম্ভাব্য শরিকদের সঙ্গে কিছুটা নরম মনোভাব নিয়ে চলার পক্ষপাতী বিজেপি শিবিরের অনেকে। কারণ দলের অনেকেই মনে করেন, ভোট-পরবর্তী সমীকরণে সরকার গড়তে মমতা, নবীন পট্টনায়কদের মতো আঞ্চলিক নেতাদের সাহায্য দরকার হতে পারে বিজেপির। যদিও এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন খোদ মোদী। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির পক্ষে যে হাওয়া রয়েছে, তাতে এনডিএ-র বর্তমান শরিকদের সাহায্যেই কেন্দ্রে সরকার গড়া সম্ভব হবে।” তবে একই সঙ্গে তৃণমূলের প্রতি তাঁর বার্তা, মমতা যদি জোটে যোগ দিতে চান তা হলে তিনি স্বাগত। কারণ, মোদী ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন, তৃণমূল নয়, বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। যদিও আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মমতা আদৌও এনডিএ জোটে সামিল হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।

চলতি নির্বাচনে মমতা-সহ গোটা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব দফায় দফায় তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন মোদীকে। অরুণ জেটলির মতো নেতারা মনে করেন, বহু ক্ষেত্রেই সেই আক্রমণ শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রচারে দু’পক্ষের মধ্যে যতই বাগ্যুুদ্ধ হোক না কেন, ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই চলতে আগ্রহী মোদী। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, ভোটের প্রচারে একে অপরের সমালোচনায় সরব হতেই হয়। এটা নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে সেই বৈরিতা চালিয়ে যাওয়া মূর্খামি। রাজনৈতিক ভাবে আত্মহত্যার সামিল।

মোদীর কথায়, “তৃণমূলের তরফে আমার বিরুদ্ধে নানা ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানানো হয়েছে। কিন্তু তা-ও পশ্চিমবঙ্গের প্রতি আমার গভীর আবেগ রয়েছে। যদি ক্ষমতায় আসি, তা হলে রাজ্যের দ্রুত উন্নতি ও শিল্পায়ন যাতে হয় তার জন্য রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে কেন্দ্র। জোর দেওয়া হবে কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নে। যাতে রাজ্যের গ্রামে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন