সঙ্কট লখনউও, দোলের আগেই মোদীর কেন্দ্র ঘোষণা চায় সঙ্ঘ

মুরলীমনোহর জোশীর পরে লালজি টন্ডন। পুরনো আসন থেকে সরানোর সম্ভাবনায় বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন বিজেপির আরও এক সাংসদ। জোশী যেমন তাঁর কেন্দ্র বারাণসী থেকে এ বার নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তেমনই লালজির ক্ষোভের কারণ তাঁর আসন লখনউ থেকে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের ভোটে লড়ার বাসনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৫
Share:

পূর্ণিয়ার জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। সোমবার। ছবি: পি টি আই।

মুরলীমনোহর জোশীর পরে লালজি টন্ডন। পুরনো আসন থেকে সরানোর সম্ভাবনায় বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন বিজেপির আরও এক সাংসদ। জোশী যেমন তাঁর কেন্দ্র বারাণসী থেকে এ বার নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তেমনই লালজির ক্ষোভের কারণ তাঁর আসন লখনউ থেকে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের ভোটে লড়ার বাসনা। ফলে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের হস্তক্ষেপে জোশীর বিদ্রোহ ধামাচাপা দেওয়ার পর আজ গোটা দিন টন্ডনের ক্ষোভ সামালাতে হল সঙ্ঘ-বিজেপিকে। ভোটের মুখে ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে মরিয়া সঙ্ঘ তাই চায়, দোলের আগেই সব জট কাটিয়ে মোদীর আসন ঘোষণা করে দেওয়া হোক।

Advertisement

লালজির অভিযোগ, রাজনাথ নিজের কেন্দ্র গাজিয়াবাদ ছেড়ে লখনউ থেকে লড়তে চান। অথচ তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনও আলোচনা করেননি। তিনি মোদীর জন্য আসন ছাড়তে রাজি, অন্য কারও জন্য নয়। এমনকী লালজিরা ঘনিষ্ঠ মহলে এ-ও বলেন যে, রাজনাথ নিজে লখনউয়ে দাঁড়াতে চান বলেই একই রাজ্যের বারাণসীতে মোদীকে পাঠাতে চাইছেন। সেখানকার প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ সংখ্যালঘুকে বার্তা দিতেই তিনি সম্প্রতি ‘ভুল হলে ক্ষমা চাওয়া’র কথা বলেছিলেন। লালজির বক্তব্য, দলীয় সভাপতি যদি মোদীকে ঢাল করে এই রাজনীতি করতে পারেন, তা হলে তিনি পারবেন না কেন? অন্য দিকে রাজনাথ শিবিরের দাবি, লালজিকে বহু আগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, লোকসভায় তাঁকে এক বারই প্রার্থী করা হবে। এ বার তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে পরে লালজিকে রাজ্যসভায় আনা যেতে পারে। কিন্তু লালজি এখন দর কষাকষি করছেন।

আজ শেষ পর্যন্ত ভাগবতের হস্তক্ষেপে জোশীর মতো লালজিকেও চুপ থাকতে বলা হয়। রাজনাথ বলেন, “আমি কোথা থেকে দাঁড়াব, তা দল ঠিক করবে। সভাপতি বলেই আমি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।” লালজিও সুর বদলে জানিয়েছেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা তিনি মেনে নেবেন।

Advertisement

তবে সঙ্ঘ মনে করছে, এ ধরনের ঘটনায় দলের অনৈক্যের ছবি যত বেশি প্রকট হবে, ততই তার আঁচ পড়বে নির্বাচনে। সেই কারণেই মোদীর নাম ঘোষণা করতে আর বেশি দেরি করতে চাইছেন না ভাগবতরা। বিজেপির নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বৃহস্পতিবার। তার আগে গুজরাত থেকে যে প্রার্থী তালিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে আমদাবাদ পূর্ব আসন থেকে মোদীর নাম রাখা হয়েছে। কারও কারও মতে, মোদী যদি ফের বিবাদ বাড়াতে না চান, তা হলে শুধুমাত্র সেই আসন থেকেই লড়তে পারেন তিনি। বারাণসীতে মোদীকে প্রার্থী করার জন্য সেখানকার কর্মীদের প্রবল চাপ রয়েছে। মোদী উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়লে পার্শ্ববর্তী বিহারেও তার প্রভাব পড়বে। কিন্তু দলের একটি অংশের আশঙ্কা, গুজরাতের বাইরে মোদী প্রার্থী হলেই অরবিন্দ কেজরীবাল উঠেপড়ে তাঁর বিরুদ্ধে নামবেন। তথাকথিত অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও তাঁর বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে পারে।

বিজেপি অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সব বিকল্প খোলা রাখছে। সঙ্ঘের নির্দেশে বিক্ষুব্ধ নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনাথ। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, “জোশী কখনওই বলেননি, তিনি মোদীর জন্য আসন ছাড়বেন না। তাঁর গোঁসা হয়েছে, বারাণসী থেকে মোদীর লড়ার সম্ভাবনার কথা তাঁকে সংবাদমাধ্যমের থেকে জানতে হল কেন? সেটা খুব স্বাভাবিক।” বিজেপি সূত্রের মতে, পরিস্থিতি বুঝে জোশীও কানপুর আসন থেকে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সে ক্ষেত্রে কলরাজ মিশ্রকে অন্যত্র প্রার্থী করতে হবে। তিনি কানপুর থেকেই লড়তে চাইছিলেন।

আবার ভোপালে কৈলাস জোশীকে সরিয়ে সেই কেন্দ্র থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে লড়তে বলেছিলেন অনেকে। কিন্তু আডবাণী আজ সাফ বলেছেন, “আমি গাঁধীনগর থেকেই লড়ব।” বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই আক্রমণ শানিয়ে আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, “গোটা দেশে নাকি মোদীর হাওয়া! তা হলে এখন প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বিজেপির হাওয়া বেরিয়ে যাচ্ছে কেন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন