নির্বাচনের বুথ-ফেরত সমীক্ষা আবার হাসি ফোটাল নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের মুখে। পূর্বাভাস ছিলই। আর সেই পূর্বাভাস মেনেই সব ক’টি বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল জানিয়ে দিল, বিজেপিই ঝাড়খণ্ডে সরকার গড়তে চলেছে। তবে জম্মু-কাশ্মীরে কোনও দলই একক গরিষ্ঠতা পাবে না।
বুথ-ফেরত সমীক্ষা ভোটের প্রকৃত ফলের আন্দাজ দিতে পারেনি, এমন অনেক নজির থাকলেও অনেক সময় তা মিলে যায়। এ ক্ষেত্রে সেটা ঘটলে ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসে তা এক নতুন ঘটনা হবে। জন্মের পর থেকে এই প্রথম বার একক গরিষ্ঠতা নিয়ে কোনও দল সরকার গড়বে এই রাজ্যে। বুথ-ফেরত সমীক্ষা জম্মু-কাশ্মীরে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও তাতে মোদী-ঝড়ের তেমন ছাপ দেখা যাচ্ছে না। শাসক ন্যাশনাল কনফারেন্সকে অনেক পিছনে ফেলে প্রথম স্থান দখলের ইঙ্গিত দিচ্ছে মেহবুবা মুফতির পিডিপি। এখন দেখার এটাই, রাজ্যে সরকার গড়তে তারা কার হাত ধরে।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উপনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিজেপি। ফলে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করাটাকে চালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। একই ভাবে ঝাড়খণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনও দলের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ এর পরে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য জয়ে ঝাঁপাতে চলেছে বিজেপি। তার আগে এই দু’রাজ্যে ভাল ফল হলে দলকে তা বাড়তি শক্তি জোগাবে। এবং সে কথা মাথায় রেখেই ঝাড়খণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরে ভোট-যুদ্ধে নেমেছিল বিজেপি।
তা ছাড়া রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা না থাকায় প্রতি পদে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিজেপিকে। তাই রাজ্যগুলিতে সরকার গড়াই নয়, আরও বেশি বিধায়কের জোরে রাজ্যসভায় শক্তি বাড়ানোটাও কম জরুরি নয় বিজেপির কাছে। সে ক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ডের বুথ-ফেরত সমীক্ষা আজ হাসি ফোটাবে মোদীর মুখে। ভোট এজেএসইউ-এর সঙ্গে জোট বেঁধে লড়লেও অধিকাংশ সমীক্ষাই জানিয়েছে ঝাড়খণ্ডে কার্যত একার জোরেই সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। রাজ্যের ৮৮টি আসনের মধ্যে ৪৫-৫০টি পেতে পারে তারা যা গত বারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে বিজেপি ‘মিশন ৪৪’-এ ঝাঁপালেও উপত্যকার মুসলিম এলাকায় দলের শক্তি এক লাফে বেড়ে যাবে, এমন আশা ছিল না শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেও। দল বুঝতে পারছিল, ক্ষমতাসীন ওমর আবদুল্লার এনসি-র বিরুদ্ধে হাওয়া থাকলেও ফায়দা পাবে পিডিপি। অমিত শাহদের লক্ষ্য ছিল, রাজ্যে একক বৃহত্তম দল হওয়া। কিন্তু এবিপি-নিয়েলসনের বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল বলছে, গরিষ্ঠতা না পেলেও পিডিপি-ই হতে চলেছে বৃহত্তম দল। তারা ৩২-৪১টি আসন পেতে পারে। ২৭-৩৩টি আসন পেয়ে দু’নম্বরে উঠতে পারে বিজেপি।
সে ক্ষেত্রে সরকার গড়তে কার সঙ্গে হাত মেলাবে পিডিপি? কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে গিয়েও সরকার গড়ার সংখ্যা পেতে পারে মেহবুবা মুফতির দল। কিন্তু এটা-ও ঘটনা, জম্মু-কাশ্মীরের দলগুলির প্রবণতাই হল কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে থাকা। ভোট-যুদ্ধের মাঝেই বিজেপি প্রশ্নে নরম হতে দেখা গিয়েছে পিডিপি-কে। বার্তা দিয়েছে বিজেপির পাশে থাকার। বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল দু’টি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিজেপিকে। এক, জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষমতায় আসতে বিজেপি কী ছোট শরিক হতে রাজি হবে? দুই, ভোটের প্রচারে মোদী পরিবারতন্ত্র নির্মূল করার ডাক দিয়ে ওমরের পাশাপাশি মুফতি মহম্মদ সইদ ও তাঁর কন্যার দলকেও নিশানা করেছেন। এখন কি পিডিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারে যাবে তাঁর দল?